
আগামী ১ আগস্ট থেকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন নতুন করে উচ্চ শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে কয়েক ডজন দেশের পণ্যের ওপর। এতে মার্কিন বাজারে সাধারণ ভোক্তাদের জন্য দৈনন্দিন ব্যবহৃত বহু পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদেরা। বিশেষত কফি, চাল, জামাকাপড়, কোকো এবং ইলেকট্রনিকস পণ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়তে পারে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলছেন, এসব পণ্যের আমদানিতে উচ্চ শুল্ক বসানো হলে তা সরাসরি আমদানিকারকদের ওপর চাপ তৈরি করবে। এই চাপ পরে ব্যবসার খরচ বাড়াবে এবং শেষ পর্যন্ত ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধিতে রূপ নেবে। এতে কমে যেতে পারে ভোগের হার, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি।
নতুন শুল্কের তালিকায় যেসব পণ্য বড় আকারে প্রভাবিত হতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে—
কফি: আমদানিকৃত ৯৯ শতাংশ পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন কফি পান করেন এমন প্রাপ্তবয়স্কের সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ। অথচ, জাতীয় কফি অ্যাসোসিয়েশনের মতে, দেশটির কফির ৯৯ শতাংশই আমদানিকৃত। প্রধান আমদানিকারী দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিল, ভিয়েতনাম ও কলোম্বিয়া শীর্ষে। এর মধ্যে একমাত্র ব্রাজিল থেকেই আসে আমদানি কফির ৩০ শতাংশের বেশি।
এই ব্রাজিল থেকেই আসা কফির ওপর ট্রাম্প প্রশাসন ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে ১ আগস্ট থেকে। এর কারণ হিসেবে ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বোলসোনারোর বিরুদ্ধে ‘বিচারিক প্রতিহিংসা’র অভিযোগ।
ভিয়েতনামের ক্ষেত্রেও চুক্তির পরও যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করছে।
পোশাক: চীন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম থেকে আসা পোশাকে নতুন কর
মার্কিন পোশাক শিল্প অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির অর্ধেকের বেশি এসেছে চীন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম থেকে।
চীনের পণ্যে ইতোমধ্যে ৩০ শতাংশ নতুন শুল্ক আরোপ হয়েছে। যা আগের শুল্কের সঙ্গে যোগ হয়েছে। ১২ আগস্টের পর একটি সাময়িক বিরতি শেষ হলে এ শুল্ক আরও বাড়তে পারে।
বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। এতে দেশটির পোশাক রফতানিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগার শঙ্কা রয়েছে।
চাল: থাই ‘জেসমিন’ ও ভারতীয় ‘বাসমতি’ চালেও বসছে কর
মার্কিন কৃষি দফতরের তথ্য অনুসারে, দেশটি প্রতি বছর প্রায় ১৩ লাখ টন চাল আমদানি করে। এর ৬০ শতাংশই সুগন্ধি চাল, বিশেষত থাইল্যান্ডের জেসমিন এবং ভারত ও পাকিস্তানের বাসমতি চাল।
থাইল্যান্ডের চালের ওপর ৩৬ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ এবং পাকিস্তানের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কোকো: আইভরি কোস্ট, ইকুয়েডর, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া বড় ঝুঁকিতে
২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বছরে গড়ে ১.১ বিলিয়ন ডলারের কোকো বিন আমদানি করেছে। এর সিংহভাগ এসেছে আফ্রিকার আইভরি কোস্ট ও লাতিন আমেরিকার ইকুয়েডর থেকে।
আইভরি কোস্টের কোকো বিনের ওপর এবার বসছে ২১ শতাংশ শুল্ক। অন্যদিকে কোকো বাটারের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা পণ্যে যথাক্রমে ২৫ ও ১৯ শতাংশ নতুন শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
ইলেকট্রনিকস ও তামা: নির্মাণ খাত ও প্রযুক্তি শিল্পে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা
শুধু পণ্যের ওপরই নয়, ট্রাম্প প্রশাসন এবার কাঁচামালের ওপরও বড়সড় শুল্ক বসাতে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে তামার ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
কনসালট্যান্সি প্রতিষ্ঠান বিএসজি জানিয়েছে, এতে কাঁচা ও পরিশোধিত তামা আমদানির খরচ বাড়বে ৮.৬ বিলিয়ন ডলার। এর প্রভাব পড়বে নির্মাণ খাত এবং ইলেকট্রনিকস শিল্পে।