
ফ্রান্স ও বৃটেনের পর এবার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে কানাডা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে কানাডা। সাম্প্রতিক সময়ে জি-৭ ভুক্ত তৃতীয় দেশ হিসেবে কানাডা এমন উদ্যোগের কথা জানালো। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। মার্ক কারনি জানান, এই স্বীকৃতির সিদ্ধান্তটি নির্ভর করছে গণতান্ত্রিক সংস্কারের ওপর। বিশেষ করে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে আগামী বছর হামাসকে বাদ দিয়ে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। এ ঘোষণার একদিন আগেই বৃটেন জানিয়েছে, যদি ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হয় এবং নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ না করে, তাহলে সেপ্টেম্বরে তারা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। তার এক সপ্তাহ আগে ফ্রান্সও অনুরূপ পরিকল্পনা প্রকাশ করে।
কানাডার ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে ‘হামাসকে পুরস্কৃত করা’ বলে অভিহিত করেছে। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৭টি ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কারনি বলেন, কানাডা জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেবে। তিনি বলেন, ইসরাইলি বসতি সম্প্রসারণ, গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের ক্রমাবনতি এবং ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর হামাসের হামলা- এ সবকিছুর পটভূমিতে কানাডা তার পররাষ্ট্রনীতিতে বড় পরিবর্তন আনছে। বুধবার সাংবাদিকদের কারনি বলেন, গাজায় মানুষের দুর্দশা অসহনীয় হয়ে উঠেছে এবং দ্রুত আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে তাদের শাসন ব্যবস্থায় মৌলিক সংস্কার এবং অঞ্চলটি নিরস্ত্রীকরণের অঙ্গীকার করতে হবে। কারনি আরও বলেন, কানাডা দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার মাধ্যমে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক শান্তি সমাধানে বিশ্বাসী। কিন্তু এখন আর সেই কৌশল কার্যকর নয়। তার ভাষায়, আমাদের চোখের সামনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সম্ভাবনা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, বুধবার সকালে তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছেন। উল্লেখ্য, পশ্চিম তীরের কিছু অংশ ফাতাহ্ পার্টির মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এর নেতৃত্বে আছেন আব্বাস। আর গাজা শাসন করছে হামাস। দুই অঞ্চলের কোনো নির্বাচন ২০০৬ সালের পর আর হয়নি। ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কারনির ঘোষণার সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছে, এই সিদ্ধান্ত গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। কানাডার বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টিও কারনির ঘোষণার বিরোধিতা করে বলেছে, ৭ই অক্টোবরের হামলার পর ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া বিশ্বকে ভুল বার্তা দেবে। বৃটেন ও ফ্রান্স যখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির ঘোষণা দেয়, তখন থেকেই কারনির ওপর চাপ ছিল কানাডার অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য।
মঙ্গলবার প্রায় ২০০ জন সাবেক কানাডিয়ান রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক এক খোলা চিঠিতে কারনিকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানান। চিঠিতে তারা উল্লেখ করেন, গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগণের ব্যাপক স্থানচ্যুতি, নির্বিচারে বোমাবর্ষণ এবং অনাহার, পশ্চিম তীরে চরমপন্থী বসতি স্থাপনকারীদের সহিংস হামলার মাধ্যমে কানাডার নীতিগত অবস্থান প্রতিদিন লঙ্ঘিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, বৃটেন ও ফ্রান্সের ঘোষণায় প্রভাবিত হয়েছেন কিনা বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করেছেন কিনা। জবাবে কারনি বলেন, কানাডা তার পররাষ্ট্রনীতির সিদ্ধান্ত নিজেই গ্রহণ করে। ফ্রান্স ও বৃটেন যদি আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একমাত্র স্থায়ী সদস্য দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র- এই স্বীকৃতি দেবে না।