
বাংলাদেশ গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত ছিল উল্লেখ করে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ.ই. তুন ড. মাহাথির বিন মোহাম্মদ বলেছেন, বাংলাদেশ দৃঢ় সংস্কৃতি ও ইতিহাসের দেশ। বেশি দিন আগের কথা নয়, যখন বাংলাদেশ গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত ছিল। কিন্তু আজ সেই সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথে। নাগরিকেরা সুন্দার ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছেন।
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) ১১তম সমাবর্তন উপলক্ষে ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেছেন মাহাথির বিন মোহাম্মদ। গত শনিবার (২৬ জুলাই) এ আয়োজন করা হয়। তিনি বলেন, সঙ্কট কাটানো যাবে না, যদি কঠোর প্রচেষ্টা, অঙ্গীকার ও দৃঢ়তা না থাকে। জনগণ প্রধান ভূমিকা না রাখলে কোনো জাতি কখনও সফলতা ও অগ্রগতি অর্জন করেনি।
এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মাহাথির বিন মোহাম্মদ বলেন, এটি শুধু গ্র্যাজুয়েটদের জন্য আনন্দের মুহূর্ত নয়, বরং তাদের পরিবার, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও স্মরণীয় দিন। এটি সেই দিন, যেটি সব শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার পথে প্রত্যাশিত সাফল্য পায়। এটি সেই দিন, যখন তারা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের জ্ঞান অর্জনের পথে সফল হয়।
এটি জ্ঞানার্জনের অভিযানের প্রথম ধাপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি যেন আরও অনেক দ্বার খুলতে সাহায্য করে। যে এ যাত্রায় বের হবে, সে একদিন জ্ঞান দিয়ে পূর্ণ হয়ে উঠবে। সমাবর্তন জ্ঞান অর্জনের বিষয়টি উদযাপন এবং বুদ্ধিমত্তার সাফল্যের স্বীকৃতির অনুষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। এটি একটি রীতির মতো। এটি এমন প্রক্রিয়া, যা একজনের চরিত্র এবং চিন্তাধারা গঠন করে।
তিনি আরও বলেন, আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন কিশোর হিসেবে প্রবেশ করে একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বের হয়ে যাচ্ছেন। এখন নতুন দায়িত্ব ও প্রত্যাশা যোগ হতে পারে। এখন থেকে আপনাকে পরিবার, সমাজ এবং জাতির প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। এসবরে ভিত্তি হচ্ছে তার যুবসমাজ। তারা যত বেশি জ্ঞান অর্জন করবে, জাতির ভবিষ্যত তত ভালো হবে।
বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে চলছে উল্লেখ করে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবকরা নতুন প্রযুক্তির মধ্যে জন্মেছে, পুরোনো প্রজন্ম তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চেষ্টা করছে। এটি তাদের প্রজন্মের প্রযুক্তি, যা তাদের জন্যই আবিষ্কৃত, উন্নত ও প্রসার হয়েছে। প্রযুক্তি কোনো আবেগের সাথে যুক্ত নয়। এটি সঠিক ও ভুলের চিন্তা থেকে মুক্ত।
নতুন প্রযুক্তির আগমন যেমন মানবজাতির জন্য নতুন আশা নিয়ে আসে, কিছু মানুষ এগুলো ব্যবহার করে তাদের লাভের জন্য, এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা মানবতার বিরুদ্ধে এসব ব্যবহার করছে। জ্ঞান মানুষের বুদ্ধিমত্তার বিকাশে সাহায্য করে, তাকে সত্য বুঝায়। সঠিক বা ভুল কোনটি, তা বোধের ক্ষমতা দেয়। তবুও এ জ্ঞান ব্যবহার করে কিছু মানুষ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে।
মাহাথির বিন মোহাম্মদ বলেন, অনেক জ্ঞানী মানুষ পৃথিবীজুড়ে ব্যাপক অত্যাচার চালিয়েছে। তাদের সভ্যতা বিশ্বের নেতৃত্ব দিলেও তাদের আচরণ প্রাচীন যুগের মানুষের চেয়েও নিকৃষ্ট। তারা হত্যাযজ্ঞ, গণহত্যা চালায়। তারা এসব নির্বিঘ্নে করে থাকে। ফিলিস্তিনি, ইরাকসহ বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় এসব দেখা গেছে। অথচ অনেক মানুষ তাদেরকে সফলতা ও সভ্যতার প্রতীক হিসেবে দেখতে চায়। আমার আশা, বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা এসব মনে রাখবে।
তিনি বলেন, আপনাদের অবশ্যই সততার কণ্ঠস্বর হতে হবে। জ্ঞানের মাধ্যমে কোনটি সঠিক এবং কোনটি ভুল, তা বুঝতে হবে। গ্র্যাজুয়েটদের ভবিষ্যতের চলার পথের জন্য শুভেচ্ছ। আপনি আপনার পরিবার, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের জন্য গর্ব হয়ে উঠুন।