Image description

চট্টগ্রামের রাউজানে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সড়কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইট-পাটকেল, কাচ ভাঙা ও ফুল। সড়কের পাশে পড়ে আছে আগুনে পুড়ে যাওয়া তিনটি মোটরসাইকেলের কঙ্কাল।

বিগত ১৬ বছর রাউজান উপজেলার পরিবেশ পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও গণঅভ্যুত্থানের কয়েক মাস পর উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে। এক দলের পক্ষের সঙ্গে অন্য দলের পক্ষ নয়, নিজ দলের হেভিওয়েট দুই নেতার অনুসারীরা জড়িয়েছেন দ্বন্দ্ব, সংঘাত, সংঘর্ষে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাউজানে হেভিওয়েট দুই নেতার আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে পুড়ছে রাউজান। একের পর এক খুনের ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় এলাকাবাসী আতঙ্কে আছে। বিগত বছরগুলোতে রাউজানে এমন পরিস্থিতি ছিল না। তবে বারবার খুন ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় রাউজানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকেলে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সত্তারঘাট রাঙামাটি সড়কে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সংসদ সদস্য এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার রাউজান উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদের কবর জিয়ারতে যাচ্ছিলেন।

এ সময় বিপরীত দিক থেকে একদল যুবক তার গাড়িবহরের দিকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে ছুড়তে সামনের দিকে এগিয়ে আসে। তাদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে গোলাম আকবর খন্দকারের গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়। পরে তারা অগ্রসর হয়ে গোলাম আকবর খনদ্কারের গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। তার বহরে থাকা তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

 

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, সংঘর্ষে তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়েছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দশ থেকে পনের মিনিট পর সবাই চলে যান। গোলাম আকবর খন্দকারকে বহনকরা গাড়ি ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে। অনেকে আহত হয়েছেন। ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

ঘটনার পরপরই গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারীরা ঘটনাস্থলে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন। বর্তমানে রাউজানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, রাউজানে যাওয়ার পথে বিএনপির আরেক গ্রুপের নেতাকর্মীরা খন্দকার আকবরকে বহনকারী গাড়ি এবং মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় উপর্যুপরি ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একপর্যায়ে খন্দকার আকবর গাড়ি থেকে নেমে যান।

এ সময় তার গাড়িসহ বহরে থাকা মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেয় হামলাকারীরা। এ ঘটনার জন্য আক্রান্ত পক্ষ স্থানীয় বিএনপির আরেক গ্রুপ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের দায়ী করেন।

দলীয় সূত্র জানায়, হামলায় গোলাম আকবর খন্দকারসহ রাউজান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাসিম উদ্দিন চৌধুরী, গোলাম আকবর খোন্দকারের পিএস অর্জুন কুমার নাথ, এপিএস আসিকুর রহমান, যুবদলে নেতা সাজ্জাদ হোসেন, বিএনপি নেতা আওরঙ্গজেব সম্রাট, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি নাঈম উদ্দিন মিনহাজ, মোহাম্মদ হুমায়ুনসহ প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী নেতা-কর্মীদের বহর নিয়ে উপজেলা বিএনপির প্রয়াত সভাপতির কবর জিয়ারত করতে যান গোলাম আকবর খন্দকার। একই দিন আগামী ৯ আগস্ট সমাবেশের প্রস্তুতি হিসেবে পূর্বনির্ধারিত মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার কর্মসূচি ছিল গিয়াস উদ্দিন কাদেরের অনুসারীদের।

গোলাম আকবর তার বহর নিয়ে সত্তারহাট এলাকায় পৌঁছলে সেখানে অবস্থান নেওয়া গিয়াস উদ্দিন কাদেরের অনুসারীদের মুখোমুখি হন। ওই সময় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে দুপক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন।

গোলাম আকবর খোন্দকারের ব্যক্তিগত সহকারী অর্জুন কুমার নাথ জানিয়েছেন, গোলাম আকবর খোন্দকারকে লক্ষ্য করেই গুলি করা হয়েছিল। গলার পাশ দিয়ে গুলি চলে গেছে, এখনো রক্তপাত হচ্ছে। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনর্চাজ এসআই নুরুল আলম আশেক কালবেলাকে বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলজে (চমকে) হাসপাতালে আসা আহতরা সবাই ক্যাজুয়েলিটি বিভাগে ভর্তি আছেন। দলীয় লোকজনের উপস্থিতি অনেক।

গোলাম আকবর খন্দকারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনিও ভর্তি আছেন। সবার চিকিৎসা চলছে।

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল কালবেলাকে বলেন, সত্তারহাট এলাকায় সংঘর্ষের খবর পেয়ে রাউজান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক।

এ ঘটনায় কোনো অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হবে কি না জানতে চাইলে পুলিশের এ মুখপাত্র বলেন, এ বিষয়ে পরিস্থিতি বলে দেবে। তবে আপতত মোতায়ন করা হচ্ছে না। আহতরা কেউ থানায় অভিযোগ দায়ের করলে তা গ্রহণ করে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া চালানো হবে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করতে আসেনি।