
মালয়েশিয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি ও প্রতিশ্রুত সংস্কার বাস্তবায়নে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন হাজারো মানুষ। রাজধানী কুয়ালালামপুরে শনিবার (২৭ জুলাই) অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন সদ্য শতবর্ষে পা দেওয়া দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদও।
পুলিশের তথ্যমতে, বিক্ষোভে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগকেই দেখা যায় কালো টি-শার্ট পরে এবং কপালে ‘তুরুন আনোয়ার’ (সরে দাঁড়াও আনোয়ার) লেখা ফেট্টি বাঁধা অবস্থায়। রাজধানীর কেন্দ্রস্থল মেরদেকা স্কয়ার বা স্বাধীনতা স্কয়ারে তারা জড়ো হয়ে মিছিল করেন এবং সেখানে বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ২০২২ সালের নভেম্বরে সংস্কারের অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় আসেন। তবে সম্প্রতি তার সরকার রাজস্ব বাড়াতে বিক্রয় ও সেবা কর (এসএসটি) বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন ভর্তুকি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়। এই চাপ সামাল দিতে আনোয়ার সরকার চলতি সপ্তাহেই কিছু সহায়তা কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর মধ্যে রয়েছে দরিদ্রদের জন্য নগদ সহায়তা, অতিরিক্ত ভর্তুকি এবং জ্বালানি তেলের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি।
তবে বিক্ষোভকারীদের মতে, সরকারের এসব উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। ইসলামি ছাত্র সংগঠনের ২৩ বছর বয়সী সদস্য নুর শাহিরাহ লেমান বলেন, নতুন কর এবং বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপর বিদ্যুৎ শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বোঝা শেষ পর্যন্ত সাধারণ ভোক্তাদের ঘাড়েই যাবে। এই কর উৎপাদকদের ওপর চাপালেও তার প্রভাব সরাসরি খাবারের দাম বাড়াবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ এবং দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান থেকে সরে আসার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সরকারঘনিষ্ঠ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় এবং শীর্ষ বিচারপতি নিয়োগেও দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়, যা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও তিনি এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন।
শনিবারের বিক্ষোভে অংশ নিয়ে মাহাথির মোহাম্মদ আনোয়ারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের হয়রানিমূলক মামলায় জড়ানোর অভিযোগ তোলেন। জনতার উদ্দেশে মাহাথির বলেন, নির্দোষদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে, আর অপরাধীরা ছাড়া পাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মাহাথির ও আনোয়ারের দ্বন্দ্ব মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে কয়েক দশক ধরে আলোচিত বিষয়। এক সময় আনোয়ার ছিলেন মাহাথিরের ঘনিষ্ঠ শিষ্য। তবে নব্বইয়ের দশকে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরে ২০১৮ সালে বারিসান ন্যাশনাল জোটকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তারা আবারও এক হন। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সেই জোট দুই বছরের কম সময়ে ভেঙে যায়।