Image description
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্ট

১৬ই জুলাই রবিউল খান (৪০) এবং তার পরিবার গুরগাঁওয়ের সেক্টর ৬৬-এর বাদশাহপুর বস্তিতে নিজেদের ঘরে দুপুরের খাবার খেতে বসেন। তখন হঠাৎ পুলিশ এসে হাজির। তারা রবিউলকে ধরে নিয়ে যায়। সেই রবিউল বলেন, ওরা আমার ফোন নিয়ে নেয়। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমি স্ত্রীকে বলতে পেরেছি কোথায় যাচ্ছি। ওরা আমার সব পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে। আমি বলি আমি পশ্চিমবঙ্গের মালদা থেকে এসেছি। কিন্তু তারা বলে- তুমি বাংলাদেশি। ২৩শে জুলাই সন্ধ্যায় সেক্টর ৪০-এর একটি ‘হোল্ডিং সেন্টার’ থেকে তিনি ছাড়া পান। সেখানে তার স্ত্রী ছবি বিবি (৩৯) অপেক্ষা করছিলেন। রবিউল গুরগাঁও পুলিশের ‘রুটিন যাচাই’ অভিযানে ধরা পড়া অনেক শ্রমিকের একজন। তাদের লক্ষ্য ছিল শহরে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা। এই অভিযানে বাংলা ভাষাভাষী অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে শহর ছেড়ে চলে যান।

শুক্রবার শ্মশান ঘাটের পাশে একটি গাছের ছায়ায় বসে রবিউল নিজের অভিজ্ঞতা শোনান। তিনি বলেন, ওরা আমাকে আমার বাংলাদেশি প্রতিবেশীদের নাম বলতে বলে। আমাকে দু’বার থাপ্পড়ও মারে। আমার ডিজিটাল ভোটার আইডি আর প্যান কার্ড ফোনে ছিল। ওরা সেগুলো দেখেছে। তবু সঙ্গে সঙ্গে ছাড়েনি। আমাদের কাগজপত্রে স্পষ্ট লেখা আমরা ভারতীয়। তবু ওরা বলপ্রয়োগ করে। রবিউল জানান, তাকে এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন কেন্দ্রে আটকে রাখা হয়। বলেন, তার একটি কেন্দ্রে ১৩০ জনের মধ্যে মাত্র দু’জন হিন্দু ছিলেন। 

তিনি এখনো কাজে ফেরেননি এবং আপাতত বাড়িও যাচ্ছেন না। রবিউল বলেন, তিনি নয় বছর ধরে গুরগাঁওয়ে আছেন। কুকুর হাঁটানো ও বিলাসবহুল আবাসিক এলাকায় গাড়ি ধোয়ার মতো খণ্ডকালীন কাজ করেন। তিনি বলেন, ভাগ্যক্রমে তার বাড়িওয়ালা সুরেন্দ্র যাতাভ সাহায্য করেন। তিনি তার জন্য থানার বাইরে অপেক্ষা করেন। যাতাভ বলেন, ওরা হিন্দুস্তানি (ভারতীয়), আমাদেরই মানুষ। যদি দোষী হয়, তদন্ত করুন- আমরা (পুলিশের সঙ্গে) আছি।
হোল্ডিং সেন্টারের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে রবিউল বলেন, প্রতিদিন দুইবেলা একই খাবার দেয়া হতো- সামান্য ভাত আর ডাল। তবে অন্যান্য ব্যবস্থা ভালোই ছিল। ম্যাট্রেস ছিল। শৌচাগারও ভালো।

তারই বস্তির আরেক বাসিন্দা আনারুল হক (৪৫) শৈশব থেকেই গুরগাঁওয়ে থাকেন। কিন্তু তাকেও পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। আনারুল বলেন, গত বুধবার সকালে মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। তখন পুলিশ এলো। তারা আগেই আমার খোঁজ নিচ্ছিলো। আমাকে দু’বার পিঠে মেরেছে এবং দুই আত্মীয়সহ গাড়িতে তুলে নেয়। তার দাবি, হোল্ডিং সেন্টারে এক পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসা করে- তুমি কি বাংলাদেশি, এই এলাকায় কতো মুসলিম আছে, আর তুমি আসলে কতোদিন ধরে গুরগাঁওয়ে আছো? তিনি বলেন, তিনি জানান যে তিনি বাংলাদেশি নন এবং কাগজপত্র দেখান। কিন্তু পুলিশ নাকি বলে তিনি সহযোগিতা করছেন না এবং তাকে সোহনা নিয়ে যায়। তার দাবি, কেবলমাত্র তার নিজ গ্রামের পঞ্চায়েত কার্যালয় থেকে নথি ই-মেইলে পাঠানোর পরই তাকে ছাড়া হয়।
সেক্টর ২৬-এ পুলিশের জেরার মুখে পড়া তেজুল ইসলাম বলেন, ওই সাক্ষাতে অফিসারদের ব্যবহার ছিল রূঢ়। ওরা বললো, এখনই বলে দাও তুমি বাংলাদেশি কি না। আমি কাগজপত্র দেখালাম। যদি আমরা ভারতীয় নাগরিক হই, এত বছর পর আবার কেন প্রমাণ দিতে হবে? 

চাক্কাপুর থেকে ধরা পড়া আদম আলী বলেন, ওরা হঠাৎ ধরে নিয়ে গেল। ফোন নিয়ে নিলো। পরিবারকে উদ্বিগ্ন করে রাখলো। আমাকে মারেনি, কিন্তু সারাক্ষণ সন্দেহের চোখে দেখেছে।
গুরগাঁও পুলিশ মুখপাত্র বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে সব অভিযুক্তকে হোল্ডিং সেন্টার থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কোনো সম্প্রদায়কে টার্গেট করার প্রশ্নই আসে না। জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য কোনো সহিংসতা বা ঘুষের দাবি হয়নি। যেসব নথি চাওয়া হচ্ছে, সেগুলো রুটিন যাচাইয়ের অংশ, আর স্থানীয় গ্রাম কর্তৃপক্ষ বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নথি যাচাই করলেই লোকজনকে ছেড়ে দেয়া হয়। শুক্রবার পুলিশ জানায়, আটজন (কথিত) বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করা হয়েছে এবং তাদের দেশান্তরিত (ডিপোর্ট) করা হবে।