Image description

গাজায় ইসরাইলের ধ্বংসযজ্ঞ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার ধ্বংসের মাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন হলোকাস্ট বিশেষজ্ঞ ওমর বারটোভ। 

শুক্রবার (২৬ জুলাই) পিয়ার্স মরগানকে দেওয়া এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় হলোকাস্ট ও গণহত্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইসরাইলি-আমেরিকান অধ্যাপক ওমর বারটোভ এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। 

ব্রাউন ইউনিভার্সিটির হলোকাস্ট ও গণহত্যা অধ্যয়নের অধ্যাপক বারটোভ বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে অন্ধকার সময়গুলোর সঙ্গে গাজায় বেসামরিক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের পরিমাণ তুলনা করেন । তিনি বলেন, “গাজার কিছু শহরে ধ্বংস হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমার ধ্বংসের চেয়েও বেশি।” তিনি আরও বলেন, “এখন গাজার একমাত্র অংশই ( দেইর আল-বালাহত) অবশিষ্ট আছে যা পুরোপুরি সমতল হয়ে যায়নি এবং ঠিক এই মুহূর্তে আইডিএফ সেটাও ধ্বংস করছে।”

ইসরাইলে জন্ম নেয়া ও ইয়ম কিপুর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বারটোভ সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর নৈতিক অবস্থান নিয়ে। “আমরা শুনে এসেছি যে, আইডিএফ বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিক সেনাবাহিনী। এমনকি ১৯৭০-এর দশকে যখন আমি আইডিএফ-এ ছিলাম, তখনও এটি বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিক বাহিনী ছিল না। কিন্তু এখন এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন এক সংগঠন।”

অধ্যাপক বারটোভ বলেন “গাজার জনসংখ্যার মধ্যে ২ থেকে ৫ শতাংশ মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক। নিহতদের এক-তৃতীয়াংশই শিশু। তাদের মধ্যে এক হাজারেরও বেশি শিশু এক বছরের নিচে বয়সের।” বারটোভ জোর দিয়ে বলেন, “এই অনুপাতে প্রাণহানি ২১শ শতকের বিশ্বে আর কোথাও দেখা যায়নি।  তার মতে, এমন পরিসংখ্যানের তুলনা করতে হলে আমাদের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফিরে তাকাতে হয়। তিনি বলেন, “এই ধ্বংসযজ্ঞের হার সম্পূর্ণ নজিরবিহীন” এবং তিনি এর তুলনা টানেন সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সঙ্গে, যেখানে ২ শতাংশ মৃত্যুহার অর্জনে এক দশকের বেশি সময় লেগেছিল—কিন্তু ইসরাইল গাজায় সেটা কয়েক মাসেই অর্জন করে ফেলেছে, বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

বারটোভের এসব মন্তব্য মার্কিন প্রশাসনের একাংশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র তাকে ব্লাড লাইবেল (রক্ত অপবাদ) তথা ঐতিহাসিক ভুয়া অভিযোগ দেয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন, কারণ এর আগে গত বুধবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অধ্যাপক বারটোভ গাজায়  ইসরাইলের অভিযানকে “ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা” বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

এদিকে, বিশ্বব্যাপী মানবিক সংস্থাগুলো গাজায় দিন দিন খারাপ হতে থাকা মানবিক বিপর্যয় নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই সপ্তাহে সেভ দ্য চিলড্রেন, অক্সফাম, মার্সি কর্পস, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার-এর মতো ১০০টিরও বেশি বেসরকারি সংস্থা এক যৌথ চিঠিতে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে ইসরাইল গাজাবাসীদের অনাহারে মরতে বাধ্য করছে, যা যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ক্ষুধাকে ব্যবহার করার শামিল।

এই নজিরবিহীন বেসামরিক ভোগান্তি, ধ্বংসযজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষোভের প্রেক্ষাপটে বিশ্ব নেতাদের উপর চাপ বাড়ছে, যাতে তারা এই ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক বিপর্যয়ের মুখে জবাবদিহি নিশ্চিত করে। অনেকেই এখন এটিকে ইতিহাসের অন্যতম মারাত্মক মানবিক সংকট হিসেবে বর্ণনা করছেন। 

শীর্ষনিউজ