
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী দুবাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে ১১ জন কর্মকর্তা নিয়োজিত। দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি সম্প্রসারণে কমার্শিয়াল উইং রয়েছে। এমনকি প্রতি বছর যে দুবাই এক্সপো হয়, সেখানে ঘটা করে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন স্থাপন করা হয়। দেশ থেকে সরকারি কর্মকর্তারাও সেই স্টল পরিদর্শনে যান। তবে যে বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য এত উপলক্ষ, সে লক্ষ্যই পূরণ হচ্ছে না। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে দুবাই বাংলাদেশ মিশনকে ৪৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের টার্গেট দেওয়া হয়েছিল, এ লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে মিশনটি। শুধু তাই নয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যে রপ্তানি আয় অর্জিত হয়, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে তার চেয়েও রপ্তানি আয় ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ কমে গেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দুবাই মিশনের মাধ্যমে ৩৫১ দশমিক ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় এসেছে, যা টার্গেটের চেয়ে প্রায় ২৭ শতাংশ কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ মিশন থেকে ৪০৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছিল।
শুধু যে দুবাই মিশন ব্যর্থ হয়েছে তা নয়, ইপিবির তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের যে ৬১টি বৈদেশিক মিশন রয়েছে, তার মধ্যে ৪২টি মিশন রপ্তানি লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এ ৪২টির মধ্যে আবার ২১টি মিশন আগের অর্থবছরের চেয়েও রপ্তানি আয়ের পিছিয়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিভিন্ন মিশনে যে কমার্শিয়াল উইং বা বাণিজ্যিক শাখা স্থাপন করা হয়েছে, রপ্তানি আয়ের দিক থেকে সেগুলো আরও বেশি খারাপ করেছে। মানে বিদেশে ২০টি মিশনে কমার্শিয়াল উইং রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি উইং রপ্তানি লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। ইপিবির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, ৪২টি মিশনের মধ্যে যে ২১টি মিশন গত অর্থবছরের রপ্তানি টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- নিউইয়র্ক, প্যারিস, লন্ডন, অটোয়া, ক্যানবেরা, নয়াদিল্লি, সিঙ্গাপুর, টোকিও, মাদ্রিদ, মালে, পোর্ট লুয়েস, ব্যাংকক, ইয়াঙ্গুন, নাইরোবি, ওয়ারশ, আঙ্কারা, রোম, কোপেনহেগেন, লিসবন, রাবাত এবং প্রিটোরিয়া। এ ছাড়া যে ২১ মিশন রপ্তানি টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি আগের অর্থবছরের চেয়েও রপ্তানি আয় কম অর্জন করেছে- সেগুলো হলো- জেনেভা, তেহরান, মস্কো, দুবাই, বেইজিং, কুয়ালালামপুর, সিউল, জেদ্দা, বৈরুত, কাঠমান্ডু, দারুসসালাম, হংকং, কুয়েত, ম্যানিলা, ত্রিপোলি, মাস্কাট, দোহা, আদ্দিস আবাবা, মানামা, বাগদাদ এবং আম্মান। যে ১৭টি কমার্শিয়াল উইং তাদের জন্য নির্ধারিত রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি সেগুলো হলো- ক্যানবেরা, ইয়াঙ্গুন, নয়াদিল্লি, সিঙ্গাপুর, টোকিও, মাদ্রিদ, প্যারিস, লন্ডন, অটোয়া, জেনেভা, তেহরান, মস্কো, দুবাই, বেইজিং, কুয়ালালামপুর, সিউল এবং জেদ্দা। এর মধ্যে শেষের ৮টি শাখা আগের অর্থবছরের চেয়েও রপ্তানি আয় কম করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশের রপ্তানি আয় যে দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্থাপিত গুরুত্বপূর্ণ মিশনগুলো টার্গেট অর্জন করতে পারছে না; পার্শ্ববর্তী ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে স্থলপথে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। উপরন্তু যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে দেশের রপ্তানি খাত নতুন করে হুমকিতে পড়বে। এ পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মিশনগুলোকে আরও সক্রিয় হতে হবে, যাতে বিকল্প পণ্যের রপ্তানি বাড়ানো যায়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, রপ্তানি বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ৬১টি মিশন রয়েছে। এসব মিশনকে প্রতি বছর রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এদের কাজই হচ্ছে- দেশের রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য বহুমাত্রিক উদ্যোগ নেওয়া। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দেশে সরকার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকার ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের কার্যকর সংযোগ স্থাপন, সম্ভাবনাময় পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা, কোনো চ্যালেঞ্জ থাকলে সরকারকে তা দ্রুত অবহিত করাসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম রয়েছে। বাংলাদেশি পণ্যের দূত হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি রপ্তানির গতি বাড়াতে আমদানিকারকের সঙ্গে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকের পরিচয় করিয়ে দেওয়াও এসব মিশনের মূল কাজ। তবে এ কাজটি ঠিকঠাক করতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেক মিশন।
বৈদেশিক মিশনগুলোর ব্যর্থতা প্রসঙ্গে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা বিশ্বে যে অস্থিরতা চলছে- সেটি বৈদেশিক মিশনগুলোর রপ্তানি আয়ের টার্গেট পূরণে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যে দেশগুলোতে রপ্তানি চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে- সেই দেশগুলোতে বিকল্প পণ্য রপ্তানির কৌশল গ্রহণে বৈদেশিক মিশনগুলোকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া সামগ্রিক রপ্তানি আয় টার্গেটের চেয়ে কিছু কম হলেও আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রপ্তানি আয় বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আবদুর রহিম খান বলেন, যে মিশনগুলো রপ্তানি আয়ের টার্গেট পূরণ করতে পারেনি, আমরা অতি দ্রুত তাদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠাব। তাদের ব্যাখ্যা জানার পর আমরা দেখব কোথাও কোনো ঘাটতি ছিল কি না। পরবর্তীতে এ বিষয়ে বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।