
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়ার আগে ইরান ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে কিছু শর্ত দিয়েছিল, যা ট্রাম্প মানার পরে ইরান ট্রাম্পের যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব মেনে নেয় বলে মনে হচ্ছে।
শর্তগুলো হচ্ছে: (দুই পক্ষের সব শর্ত আমার জানা নেই, কেবল পাবলিকলি যা জানা গেছে তা উল্লেখ করলাম)
১) আমেরিকা ইরানের তেল রপ্তানির উপরে দেয় নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবে, বিশেষ করে চীনে তেল রপ্তানির উপর। গতকাল CNBC দেয়া এক টিভি সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের পার্সোনাল দূত স্টিভ উইটকফ এই কথা বলেছেন। এটা ইরানের জন্য সবচেয়ে বড় বিজয়, ইরানের অর্থনীতিতে এই তেল রপ্তানি বিশাল পজিটিভ প্রভাব পড়বে;
বর্তমানে, নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান চীনের কাছে তেল বিক্রি করলেও বিক্রির পুরা প্রক্রিয়া খুব জটিল। এর জন্য ইরানকে “ডার্ক ফ্লিট” ট্যাঙ্কার ব্যবহার করতে হয়, সনাক্তকরণ এড়ানোর জন্য তেলবাহী জাহাজগুলো ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে সনাক্তকরণ এড়ায়। এরপর জাহাজ থেকে জাহাজে তেল স্থানান্তর করে এবং মালয়েশিয়া বা ওমানের নামে তেল বিক্রি করে, যার কারণে খরচ বাড়ে।
উপরন্তু পেমেন্ট ডলারে নয়, চীনা রেনমিনবিতে ছোট ব্যাঙ্কের মাধ্যমে হয়, যা ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। এছাড়া, চীনের কিছু ছোট রিফাইনারি (টিপট) তেল কিনলেও নিষেধাজ্ঞার ভয়ে অনেকে বন্ধ করে দেয়।
ইরান প্রতিদিন ১.২-১.৯১ মিলিয়ন ব্যারেল তেল বিক্রি করে। নিষেধাজ্ঞা না থাকলে বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়বে এবং কোনও ছাড় (যেমন, ব্রেন্টের তুলনায় $২.৩০-২.৪০ কম; ব্রেন্ট হলো আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত একটি বেঞ্চমার্ক) দেয়া ছাড়াই তেল বিক্রি করতে পারবে। ফলে আয় বৃদ্ধি পাবে। যা ইরান তার অর্থনীতি, উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে ব্যবহৃত হবে। খামেনি সরকারের গ্রহণযোগ্যতা ইরানিদের কাছে বহুগুণে বেড়ে যাবে।
নিষেধাজ্ঞা উঠলে ইরান সরাসরি ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে পেমেন্ট পাবে, যার দরুণ ঝুঁকি ও খরচ কমবে। যা চীনের সাথে বাণিজ্য ও বেল্ট অ্যান্ড রোডের মতো প্রকল্পে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। ডার্ক ফ্লিট বা জটিল লজিস্টিকসের প্রয়োজন না হলে পরিবহন ও ইনসুরেন্স খরচ কমবে, লাভ বাড়বে।
তবে আমি শিওর না, আমেরিকা এর বিনিময়ে ইরান থেকে যুদ্ধ বিরতি ছাড়া আর কি আদায় করেছে। যদি সত্যি আমেরিকা ইরানের তেল বিক্রির উপর থেকে, বিশেষ করে চিনে তেল বিক্রির উপর থেকে, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় তাহলে আমার ধারণা ইরান ফের নিউক্লিয়ার আলোচনায় ফিরে যাওয়ার শর্তে রাজি হয়েছে এবং ইরানে পারমাণবিক প্রোগ্রাম না রাখা শর্ত সাপেক্ষে রাজি হয়েছে। এটা আমার ধারণা।
এবার ইরান গোপনে কি করবে, তার উপরে কারো হাত নাই। যদিও খামেনি শর্ত ভেঙ্গে গোপনে পারমাণবিক বোমা বানাতে রাজি হবে বলে মনে হয় না। বোমা না বানালেও, ইরান নর্থ কোরিয়া, রাশিয়া, কিংবা চিন-পাকিস্তান থেকে যে বোমা কিনবে না তার গ্যারান্টি কি ইরান কাউকে দিয়েছে?
২) যুদ্ধ বিরতির আগে আমেরিকান বেইসে ইরানিয়ান মিসাইল হামলা চালাবে, যা চালিয়েছে। ইরান কাতারে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় আমেরিকান বেইসে মিসাইল হামলার ঘণ্টা খানেক আগে আমেরিকাকে জানিয়ে দিয়েছিলো তার একঘন্টার মধ্যে হামলা চালাবে। এতে করে আমেরিকান সেনাদের আড়ং ইমপোর্টট্যান্ট মালামাল ।
৩) যুদ্ধ বিরতির আগে ইরান ইজরায়েলের আরেক দফা মিসাইল হামলা চালাবে। যা চালিয়েছে, এবং এই হামলায় ইজরায়েলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
৪) ইসরায়েল যদি আবারও ইরানে হামলা চালায়, ইরান পাল্টা হামলা চালাবে। এবং আমেরিকার সাথে যুদ্ধ বিরতির এসব চুক্তি বাতিল করে দেবে। ইজরায়েলের যুদ্ধবিমান কিন্তু যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পরে ফের ইরান অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছিল, যা ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে টেলিফোন আর সামাজিক মাধ্যমে “এক্স” এ জোর গলায় যুদ্ধ বিমান ফিরিয়ে নিতে আদেশ করেছে।
আজকে ইরান আমেরিকাকে (ডাইরেক্ট কিংবা ইনডাইরেক্ট) জানিয়েছে যে ইজরায়েল আমেরিকার ভিতরে ফল্স ফ্ল্যাগ অপারেশন করতে যাচ্ছে শীঘ্রই, যা অতীতেও আমেরিকাকে ব্যবহার করার জন্য ইজরায়েল করেছে। আমেরিকান সাইড এখন এসবের বিরুদ্ধে সতর্কতা অবলম্বন করেছে।
ইরান যদি ফের আমেরিকার সাথে পারমাণবিক আলোচনায় বসে, এবং তাদের পারমাণবিক প্রোগ্রাম ত্যাগ করে, তাহলে ট্রাম্প একে আমেরিকান বিজয় হিসাবে দেখবে, আর ইজরায়েল তার পরাজয়। গত আলোচনা একটা সমাধানে আসার আগেই ইজরায়েল ইরানকে হামলা করে বসে। আলোচনা ভেস্তে যায়, দেন আমেরিকা ইরানের তিনটা নিউক্লিয়ার সাইটে সিম্বলিক হামলা চালায়। জানা গেছে যে আমেরিকাও গোপনে ইরানকে জানিয়ে দিয়েছিল তারা হামলা করতে যাচ্ছে। হামলার পর ইজরায়েল আশা করেছিল আমেরিকা এই যুদ্ধে জড়িয়েই গেলো, যা তাদের চিরদিনের আকাঙ্খাকে পূরণ করেছিল; কিন্তু আমেরিকা আর কোন হামলা করতে রাজি না হয়ে সেই আকাঙ্ক্ষায় পানি ছিটিয়ে দিয়েছে।
আপাতত, বর্তমান পরিস্থিতিকে ইরানের বিজয়, আর ইজরায়েলের পরাজয় বলা চলে। তবে, যে কোনও দিন, যে কোনও কিছুকে কেন্দ্র করে আবারও হামলা - পাল্টা হামলা শুরু হতে পারে। তবে এর মাঝে বসে আছে আমেরিকা। আমেরিকার ইচ্ছা-অনিচ্ছা পরবর্তী হামলা বা যুদ্ধের গতি নিয়ন্ত্রণ করবে।
আপাতত ইরান আর ইজরায়েল, উভয় পক্ষ তাদের অস্ত্র ভান্ডার পূরণ করছে।
ডঃ সাবিনা আহমেদ