
ভারতে জন্মেছেন। ভারতে বড় হয়েছেন। আছে সব মিলে তিন ভাইবোন। মা-ও ভারতীয়। অথচ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে মুম্বইয়ে আটক করা হয়েছে এক কিশোরীকে। পুলিশের অভিযোগ তার পিতা বাংলাদেশি। কথিত এই অভিযোগে তার পিতাকে আটক করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে ভারত। অথচ তিনি কমপক্ষে ৩৭ বছর ভারতে বসবাস করছিলেন। সেখানে তার আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ভোটার পরিচয় পত্র আছে। তার পরিচয়পত্র ইস্যু করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। তারপরও তিনি ছাড় পাননি। তাকে আটক করে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশে। অন্যদিকে তার ১৮ বছর বয়সী কিশোরী মেয়েকে নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু মঙ্গলবার আদালত তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশকে। এ নিয়ে অনলাইন হিন্দুস্তান টাইমস খবর প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়, বোম্বে হাইকোর্ট কথিত বাংলাদেশি এক কিশোরীকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ১৮ বছর বয়সী ওই কিশোরী পুলিশ স্টেশনের নির্ভয়া সেলে আটক ছিলেন। এর আগে তার পিতার নাগরিকত্ব যাচাই করা হয় এবং পরে তার পিতাকে বাংলাদেশে পুশইন করা হয়। মুম্বইয়ের বিচারপতি নীলা গোখলে এবং ফিরদোস পি পুনিওয়ালার অবকাশকালীন বেঞ্চ অবিলম্বে ওই কিশোরীকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, তার পিতার নাগরিকত্ব তদন্তের জন্য তাকে আটক রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। ১৮ বছর বয়সী ওই কিশোরী ও তার ছোট দুই ভাইবোনের তরফে দাখিল করা পিটিশনের শুনানি করছিলেন আদালত। তার ওই দুই ভাইবোনের বয়স ১৬ বছর ও ৮ বছর।
আবেদনে বলা হয়, তাদের জন্ম ভারতে। তারা যে ভারতীয় নাগরিক তা প্রমাণের প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট আছে তাদের কাছে। তাদের পিটিশন অনুযায়ী, তাদের পিতা দাদামিয়া খান ৩৭ বছরের বেশি সময় ভারতে বসবাস করছেন। তিনি মরিয়ম খান নামে ভারতীয় এক নারীকে বিয়ে করেছেন। পাশাপাশি তিনি একজন ক্যাবচালক হিসেবে কাজ করছিলেন। ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশিদের শনাক্তকরণের বিশেষ অভিযানে ওই তিন ভাইবোনকে আটক করে ম্যানখুর্দ পুলিশ। ছোট দুই ভাইবোনকে তাদের মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয় হ্যাবিয়াস করপাস আবেদনের পরে।
ওদিকে এসব শিশুর পক্ষে আইনজীবী সিদ্ধ পামেছা আদালতে তাদের জন্মসনদ দাখিল করেন। তাতে বলা হয়, তারা ভারতে জন্মগ্রহণ করেছে। তাদের পিতার কথিত নাগরিকত্বের বিষয়ে তাদেরকে আটক রাখা যায় না। এমনকি দাদামিয়া খানও ভারতীয় একজন নাগরিক। তার কাছে আছে প্যান কার্ড, রেশন কার্ড এবং ভোটার পরিচয়পত্র। এই পরিচয়পত্র ইস্যু করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে আইনি লড়াই করেন এডভোকেট মনীষা জাগতাপ। তিনি বলেন, পুলিশি তদন্তে দাদামিয়া খান স্বীকার করেছেন যে- তিনি বাংলাদেশি নাগরিক। অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। কারণ, তার দেশে জীবন নির্বাহ করার কোনো সোর্স ছিল না। তাকে ভারত থেকে ফেরত পাঠানো হলেও তার নাগরিকত্বের বিষয়ে তদন্ত চলছে ফরেনার্স অ্যাক্ট, ১৯৪৬ এর অধীনে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার এ বছর ২রা মে যে নির্দেশ দিয়েছে, তার অধীনেও তদন্ত চলছে। শুনানি শেষে বিচারকরা বলেন, ১৮ বছর বয়সী ওই কিশোরীকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখার কোনো কারণ নেই। তাকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দেন। তবে তদন্তকারী কর্মকর্তারা ডাকলে তাদেরকে তাতে সাড়া দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।