Image description
 

কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাত থেমেছে মাত্র এক সপ্তাহ। এর মধ্যেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীন পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। সোমবার শুরু হওয়া এই সফর ঘিরে কূটনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন— যুদ্ধ থেমেছে ঠিকই, কিন্তু কৌশলগত প্রস্তুতি চলছে কি?

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, দার ও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং পারস্পরিক আগ্রহের বৈশ্বিক ইস্যুগুলোতেও মতবিনিময় হবে বলে জানানো হয়।

গত এপ্রিলের শেষ দিকে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন। নয়াদিল্লি সরাসরি ইসলামাবাদ-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর ওপর দায় চাপায়— যা ছিল সাম্প্রতিক বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাগুলোর একটি। যদিও পাকিস্তান সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৭ মে ভারত পাকিস্তান ভূখণ্ডে বেশকিছু লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালায়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয় ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদের পাল্টাপাল্টি হামলা, যা চলে টানা চারদিন। এতে দুই পক্ষ মিলিয়ে ৭০ জনের বেশি প্রাণ হারান, যাদের অনেকে ছিলেন সাধারণ বেসামরিক নাগরিক।

এই উত্তেজনার মধ্যে চীন একদিকে গঠনমূলক ভূমিকার ঘোষণা দিলেও, বিশ্লেষকদের মতে বেইজিং পরোক্ষভাবে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে। চীন দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং বড় অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগী হিসেবে পরিচিত।

৭ মে পাকিস্তান পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে ইসহাক দার জানান, ভারত-পাকিস্তান আকাশসীমায় সংঘর্ষ শুরুর পর ইসলামাবাদ চীনা জঙ্গিবিমান ব্যবহার করেছে। তিনি বলেন, ভোর ৪টায় চীনা রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে পুরো চীনা প্রতিনিধি দল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত ছিল। আমরা তাদের পুরো পরিস্থিতি জানালে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন।

বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধবিরতির ঠিক পরপরই পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই চীন সফর মোটেও কাকতালীয় নয়। এটি হতে পারে ভবিষ্যতের আরও কৌশলগত জোটের প্রস্তুতি। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার নিরসন না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান চীনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক সমন্বয় জোরদার করার কৌশলে আছে বলে মনে করা হচ্ছে।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ঘোষিত যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর রয়েছে, পাকিস্তান জানিয়েছিল এই বিরতি রবিবার পর্যন্ত থাকবে। তবে ভারতের সেনাবাহিনী বলছে, চুক্তির কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, অর্থাৎ সংঘর্ষ এড়ানোর নিশ্চয়তা এখনো অনিশ্চিত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসহাক দারের বেইজিং সফর শুধুই কূটনৈতিক সৌজন্য সফর নয়— বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন ভূরাজনৈতিক সমীকরণ, কৌশলগত অগ্রাধিকার পুনর্মূল্যায়ন এবং ভারতের প্রভাব মোকাবিলায় চীন-পাকিস্তান ঐক্য আরও মজবুত করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। যুদ্ধ থেমেছে, কিন্তু প্রতিযোগিতা এবং প্রভাব বিস্তারের লড়াই আরও জটিল হয়ে উঠছে।