Image description

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) জানিয়েছে, গত ২ মার্চ থেকে গাজায় মানবিক সাহায্য অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে অনাহারে ও অপুষ্টিজনিত কারণে এ পর্যন্ত অন্তত ৫৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। 

 

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। খবর বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এদিন জাতিসংঘের জেনেভা কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে পশ্চিম তীর ও গাজার জন্য ডব্লিওএইচও-র প্রতিনিধি রিচার্ড পেপারকর্ন বলেন, ‘মানবিক সাহায্য, বিশেষ করে খাদ্য ও ওষুধের সরবরাহ ইচ্ছাকৃতভাবে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। এর ফলে এটি বিশ্বের অন্যতম ‘ভয়াবহ ক্ষুধা’ সংকটে পরিণত হয়েছে’।

ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)-এর সর্বশেষ বিশ্লেষণ বলছে, ২.১ মিলিয়ন জনগোষ্ঠী নিয়ে গাজার পুরো অঞ্চল এখন ‘দুর্ভিক্ষের মারাত্মক ঝুঁকিতে’।

 

গত ১ এপ্রিল থেকে ১০ মে’র মধ্যে গাজার ৯৩ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ প্রায় ১৯,৫০,০০০ ফিলিস্তিনি আইপিসি ফেজ-৩ বা তার উপরে অবস্থান করছে। অর্থাৎ গাজায় বেঁচে থাকা ফিলিস্তিনিরা এখন ‘সংকট বা তার চেয়েও খারাপ’ পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ ৪৪ হাজার মানুষ ফেজ ৫ (দুর্যোগ) এবং ৯ লাখ ২৫ হাজার ফেজ ৪ (জরুরি) স্তরে রয়েছে।

রিচার্ড পেপারকর্ন বলেন, ‘যদি এই অবস্থা চলতেই থাকে, তাহলে আগামী ১১ মাসে পাঁচ বছরের নিচে প্রায় ৭১ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগবে’। পাশাপাশি ১৭ হাজারের মতো গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীও ঝুঁকিতে রয়েছেন।

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘গাজার বাসিন্দারা এখন এক ভয়ংকর দুষ্টচক্রে আটকে গেছে। অপুষ্টিতে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, পরিষ্কার পানি ও স্যানিটেশন না থাকায় রোগ ছড়াচ্ছে এবং স্বাস্থ্যসেবা একেবারেই নেই বললেই চলে’।

গাজার এক নবজাতকের চিত্র, ছবি- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

পুরো একটা প্রজন্ম চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত হবে- সতর্কবার্তা দিয়ে পেপারকর্ন বলেন, ‘যথেষ্ট পুষ্টিকর খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসাসেবা ছাড়া একটি পুরো প্রজন্ম চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে’। এর মধ্যে রয়েছে বামনত্ব, মস্তিষ্কের বিকাশে সমস্যা এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি।

গাজায় মাত্র ৫০০ শিশুর জন্য চিকিৎসা সামগ্রী অবশিষ্ট রয়েছে উল্লেখ করে পেপারকর্ন বলেন, গাজায় ১৯টি অপুষ্টি চিকিৎসা কেন্দ্র চালু থাকলেও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে সেগুলো চালিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে গাজার ভেতরে যে সামান্য চিকিৎসা সামগ্রী আছে, তা দিয়ে মাত্র ৫০০ শিশুর চিকিৎসা সম্ভব। অথচ চাহিদা এর চেয়ে বহু গুণ বেশি।

এ সময় বিশ্ববাসীর প্রতি পুনরায় আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যেন অবিলম্বে সাহায্য অবরোধ তুলে নেওয়া হয়, স্বাস্থ্যখাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়, সব বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।

এদিকে আনাদোলুর এক প্রশ্নের জবাবে পেপারকর্ন বলেন, ‘যদি এই অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি অনাহারে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে। আগামী চার থেকে পাঁচ মাসে ১০ লাখ ফিলিস্তিনি গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আরও পাঁচ লাখ মাঝারি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে’।

তিনি উল্লেখ করেন, ‘এ ধরনের সংকটে মানুষ সাধারণত সরাসরি অনাহারে মারা যায় না। অপুষ্টিজনিত রোগই মূলত মৃত্যুর কারণ হয়। হাসপাতালগুলোতে শিশুদের নিউমোনিয়া, গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিসে ভুগতে দেখা যাচ্ছে, যা অনাহার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে আরও খারাপ হচ্ছে’।

গাজার আরেক  শিশুর চিত্র, ছবি- আনাদোলু।

 

প্রায় দুই মাস ধরে কোনো ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারেনি জানিয়ে পেপারকর্ন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোনো ট্রাক গত ১৮ মার্চের পর থেকে গাজায় প্রবেশ করতে পারেনি। বর্তমানে আল-আরিশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩১টি ট্রাক আটকে আছে। কিন্তু অবরোধের কারণে সেগুলোর সরবরাহ গাজায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।

গাজা থেকে চিকিৎসা সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া এখনো ‘চরমভাবে সীমিত ও জটিল’ বলেও জানান তিনি। গত ১৮ মার্চ সংঘাত পুনরায় শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি মেডিকেল এভাকুয়েশন কার্যক্রম হয়েছে, যার মাধ্যমে ১২৩ জন রোগী ও ১৮৭ জন সহকর্মীকে গাজা থেকে সরিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেওয়া গেছে।

গত তিন মাস ধরে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একদিকে যেমন অনাহারে, রোগে-শোকে ফিলিস্তিনিরা মারা যাচ্ছে, তেমনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চালানো বর্বর ইসরাইলের অব্যাহত সামরিক আগ্রাসনে সেখানে এখন পর্যন্ত ৫২,৯০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টাতেই প্রাণ হারিয়েছেন ৪৬ জন এবং আহত হয়েছেন ৭৩ জন।