
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, গাজার বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়া হবে এবং সেখানে বড় পরিসরে সামরিক অভিযান চালানো হবে। তার মন্ত্রিসভা এই পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছে, যাকে এক মন্ত্রী বলেছেন, “গাজা পুরোপুরি দখল করার পরিকল্পনা”।
রবিবার এই ভোট হয়, ঠিক তার আগেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছিল তারা হাজার হাজার রিজার্ভ সেনা ডেকে নিচ্ছে, যাতে তারা গাজায় বড় পরিসরে অভিযান চালাতে পারে।
নেতানিয়াহু সোমবার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “এবার গিয়ে ফিরে আসার জন্য ঢুকব না। রিজার্ভ ফোর্স ডাকব, জায়গা দখলে রাখব। শুধু হানা দিয়ে বেরিয়ে আসা আমাদের পরিকল্পনা নয়। আমরা পুরোপুরি ভিতরে থাকব।”
তিনি বলেন, “জনগণকে নিরাপদে রাখার জন্য তাদের স্থানান্তর করা হবে।”
ইসরায়েলের এক উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, এই অভিযানের নাম রাখা হয়েছে ‘Gideon’s Chariots’ (গিদিওনের রথ)। নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার সবাই এতে একমত হয়েছে। লক্ষ্য হচ্ছে হামাসকে দমন করা এবং সব জিম্মিকে উদ্ধার করা।
এই পরিকল্পনা চালু হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের পর, যাতে সেই সময়ের মধ্যে জিম্মি মুক্তির একটি সুযোগ তৈরি করা যায়। তবে, “যদি কোনো চুক্তি না হয়, তবে অভিযান শুরু হবে পুরো শক্তিতে এবং শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলবে।”
এই অভিযানে গাজার পুরো জনগোষ্ঠীকে দক্ষিণে সরানো হবে এবং তারপর হয়তো ত্রাণ সহায়তার অবরোধ শিথিল করা হতে পারে। সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা দখলকৃত প্রতিটি এলাকায় থেকেই যাবে।
ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেছেন, “আমরা অবশেষে গাজা দখল করতে যাচ্ছি।”
তিনি বলেন, হামাস জিম্মি মুক্তির প্রস্তাব দিলেও সেনাবাহিনী তাদের অভিযান থামাবে না। একবার আমরা দখল নিলে, সেটা ছাড়ার প্রশ্নই আসে না — এমনকি জিম্মি ফেরত পেলেও না।
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফি ডেফরিন বলেছেন, “এই অভিযানের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে জিম্মিদের ফেরানো। এরপর হামাসকে হারানো — কিন্তু প্রথমে জিম্মি।”
এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গবির, যিনি বলেছেন সেনাবাহিনী যেন মনে না করে তারা রাজনীতির ওপরে।
জিম্মিদের পরিবারও যুদ্ধ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। তারা আশঙ্কা করছেন, ইসরায়েল জিম্মিদের তুলনায় হামাসকে হারানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে, যা জিম্মিদের আরও বিপদের মুখে ফেলতে পারে।
গাজায় টানা ৯ সপ্তাহ ধরে সব ধরনের মানবিক সহায়তা বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল। তাদের দাবি, এই চাপের মাধ্যমে হামাসকে জিম্মি ছাড়তে বাধ্য করা হবে। কিন্তু জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা — যা যুদ্ধাপরাধ।
ইসরায়েল এখন একটি নতুন সহায়তা বিতরণ কাঠামো চালুর পরিকল্পনা করেছে। এতে একটি বেসরকারি ফাউন্ডেশন ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব পাবে, যাতে সহায়তা হামাসের হাতে না পড়ে।
কিন্তু হামাস এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলো এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। তাদের দাবি, “মানবিক সাহায্যকে রাজনৈতিক চাপের অস্ত্রে পরিণত করা অনৈতিক এবং মানবিক নীতিমালার পরিপন্থী।”
জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই পরিকল্পনা আরও বেশি নিরীহ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ফেলবে। মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, “ইসরায়েলের এই অভিযান সম্প্রসারণের পরিকল্পনায় জাতিসংঘ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”