
আগের সংসারের বড় পোলা আলমগীরকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে পাঠাইছিলাম। ওই পোলা বিদেশ থেকে আইসা জমি লিখে না দেওয়ায় অন্য ভাইদের সঙ্গে নিয়ে মারধর করে আমার হাত-পা ভাইঙা দিছে। আগে জানলে এমন পোলাপানরে জন্মই দিতাম না। বাড়িঘর থাইক্যাও বাইর কইরা দিছে। এখন হাসপাতালের মেঝোতে শুয়ে শুয়ে কষ্ট করতাছি। এই বিচার কার কাছে দিমু।’
মঙ্গলবার (৬ মে) ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসাধীন মেঝেতে শুয়ে শুয়ে কাতরাতে কাতরাতে কথাগুলো বলছিলেন গফরগাঁওয়ের বারোবাড়িয়া ইউনিয়নের বারা গ্রামের কৃষক মুজিবুর রহমান (৫৫)।
তিনি জানান, দুই বিয়ে করেছেন। আগের সংসারের চার ছেলে চার মেয়ে। পরের সংসারে তিন ছেলে। আগে সংসারের বড় ছেলে আলমগীরকে ওমানে পাঠানোর জন্য পাঁচ লাখ টাকা খরচ করেছিলেন। দ্বিতীয় বিয়ে করার পর থেকে আগের সংসারের ছেলেমেয়েরা তাকে আর দেখতে পারে না। ওমান থেকে দেশে ফিরেই আলমগীর তার ভাইদের নিয়ে জমি লিখে দেওয়ার জন্য প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি করতো। এর আগেও দুইবার মারধর করেছে।
তিনি বলেন, ‘গত রমজানের ঈদের পরদিন আমার পরের সংসারের স্ত্রী হেনা এবং তিন ছেলেসহ আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এই নিয়ে কয়েক দফায় এলাকায় দেন দরবার হয়েছে। কিন্তু আমার ছেলেরা কিছুই মানে না। গত শনিবার (৩ মে) দুপুরে আমার নিজের বাড়িতে গেলে আলমগীরসহ অন্য ছেলেরা এবং তার সঙ্গে আরও লোকজন মিলে আমাকে ব্যাপক মারধর করে হাত-পা ভেঙে দিয়েছে। আমার জমি ওদেরকে লিখে না দিলে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছিল। পরে গুরুতর আহত হলে পরের সংসারের ছেলে ও স্ত্রী আমাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেছে। এখনও ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার পরিণতি এমন হবে আগে কখনও ভাবিনি। দ্বিতীয় বিয়ে করাটাই আমার জন্য ছিল চরম ভুল। এখন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবো না। বাড়িতে গেলে আমার ছেলেরা জমির জন্য আমাকে মেরেই ফেলবে। আমার মতো এমন পরিণতি যেন আর কোনও বাবার না হয়।’
দ্বিতীয় সংসারের ছেলে আশিকুর রহমান জানান, ‘আমার বাবাকে নিয়ে আমরা এখন খুব অসহায় অবস্থায় আছি। আমরা বাড়ি ঘরেও যেতে পারি না। থানায় অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি।’
গফরগাঁও থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘বাবাকে মারধরের বিষয়ে ছেলেদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ থানায় পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’