
পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনায় এক কঠিন পরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়ে ভারত। পেহেলগাম ঘটনার পর প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানের উপর দোষ চাপিয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পরিষদ। বিশ্বকে তো বটেই, দেশের মানুষকেও প্রতিশোধের বাণী শুনিয়ে উত্তেজিত করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার এবং তাদের ঘনিষ্ঠ গদি মিডিয়া। উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢেলে একপ্রকার বিপদেই পড়েছে মোদী সরকার। অন্যদিকে, একের পর এক হুমকি ও তাচ্ছিল্য ছুটে আসছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের দিক থেকে।
বর্তমানে রাজনীতি এবং মুখ রক্ষার জন্য পাকিস্তানের উপর হামলা ছাড়া মোদীর সামনে আর কোনো বিকল্প নেই বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গত দুই দিনের ঘটনাপ্রবাহে পাকিস্তানে হামলার ইঙ্গিতও স্পষ্ট হয়েছে ভারতের প্রস্তুতি থেকে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে ছুটে যান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, দিল্লির লোক কল্যাণ মার্গে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে গিয়ে বৈঠক করেন রাজনাথ সিং। ধারণা করা হচ্ছে, পেহেলগাম ঘটনার প্রেক্ষিতে জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে মোদীকে অবহিত করেছেন তিনি।
এর আগে, গত রবিবার ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল অনিল চৌহানের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সেই বৈঠকে পেহেলগাম ঘটনার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানকে জবাব দিতে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হয়। রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকের পর রাজনাথের মোদীর বাসভবনে যাওয়াকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী ইতিমধ্যে বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি দেশের নেতাদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। পাশাপাশি দিল্লিতে শতাধিক কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, মূলত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে।
এদিকে গত চার দিন ধরে কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটছে। প্রতিটি ঘটনায় পাকিস্তানের উপর দোষ চাপিয়েছে ভারতের সেনাবাহিনী। অন্যদিকে পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী হানিফ আব্বাসী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, "পাকিস্তানের ১৩০টি পারমাণবিক অস্ত্র ভারতের দিকে তাক করে রাখা আছে।" তিনি আরও জানান, ঘড়ি, শাহীন, গজনভীর, ধরনের মিসাইলও প্রস্তুত রাখা হয়েছে ভারতের জন্য।
এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ভারতের সামরিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, কীভাবে পাকিস্তানকে জবাব দেয়া যায়, তা নিয়ে ভেতরে ভেতরে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
রবিবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে পেহেলগাম হামলা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান মোদী। তিনি বলেন, "ভারত এই হামলার কঠোর জবাব দেবে।" মোদী আরও জানান, "পেহেলগামের ঘটনা দেখে প্রত্যেক ভারতীয়ের রক্ত ফুটছে।"
সেই একই দিনে আরব সাগরে জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়া চালায় ভারতীয় নৌবাহিনী। ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর সঙ্গে মিল পাওয়া যাচ্ছে ২০১৯ সালের ঘটনার সাথে, যখন ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালিয়ে বড় ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছিল। তখন পাকিস্তান ভারতের একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে প্রায় ৬০ ঘণ্টা আটকে রেখেছিল।