
চার মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা কেন্দ্রের ৮৮ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। প্রতি মাসে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতন পান তাঁরা। সেটাও বন্ধ রয়েছে গত জানুয়ারি থেকে। এসব কেন্দ্রের শিক্ষকদের বেশির ভাগই মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে তাই কঠিন হয়ে পড়েছে তাঁদের জীবনযাপন।
বিষয়টি সম্পর্কে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (ডিজি) আ. ছালাম খান বলেন, ‘এটি খুবই বেদনাদায়ক। বিষয়টি আমরা জানি। প্রকল্পটির অন্তত ৮৮ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী চার মাস ধরে বেতন-ভাতা না পেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন যাপন করছেন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তাদের বদলি করায় দীর্ঘদিন প্রকল্পের গুরুত্বপুর্ণ পদ খালি থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী একনেকের বৈঠকে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। আশা করছি, ঈদুল আজহার আগেই শিক্ষকদের বকেয়া বেতন-ভাতা দেওয়া হবে।’
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নেয় সরকার। সারা দেশের মসজিদ অবকাঠামো ব্যবহার করে মসজিদের নিকটবর্তী শিশুদের জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে প্রাক-প্রাথমিক ও কোরআন শিক্ষা দেওয়াই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীর ভর্তির হার বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের ঝরে যাওয়া রোধ করাও আছে লক্ষ্যের মধ্যে। ১৯৯৩ সালে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমের এরই মধ্যে ছয়টি পর্যায় শেষে সপ্তম পর্যায় গত বছর ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের ৭৩ হাজার ৭৬৮টি কেন্দ্রের একজন করে শিক্ষক, দুই হাজার ৫০ মডেল কেয়ারটেকার, ৬৫ কর্মীসহ মোট ৮৮ হাজার জনবল রয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে কেউ কোনো ধরনের বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।
এমনকি গত ঈদুল ফিতরের সময়ও তাঁরা বেতন-বোনাস পাননি। প্রতিটি সাধারণ শিক্ষাকেন্দ্রে ৩০ জন এবং সহজ কোরআন শিক্ষা কেন্দ্রে ৩৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সেই হিসাবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সারা দেশে এক কোটি ২১ লাখ ৫১ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। বেতন-ভাতা চলমান না থাকায় কেন্দ্রগুলোতে শিক্ষাদান ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চরভবশুর জামে মসজিদ কেন্দ্রের শিক্ষক হেলাল উদ্দিন।
তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকদের বেশির ভাগই মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেম। এই কেন্দ্রের শিক্ষকতার পাশাপাশি বাসায় বাসায় টিউশনি করে কোনো রকমে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেঁচে আছি। বেতন-ভাতা বন্ধ হওয়ায় আমাদের ধারদেনা করে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের গত ১৫ বছরে আমাদের জামায়াত-শিবির বলে অবহেলা করা হতো। ঠুনকো অজুহাতে প্রকল্পের বেতন-ভাতা বন্ধ রাখা হতো। আমাদের দিয়ে দলীয় কর্মীর মতো খাটিয়ে নিত। এখন ছাত্র-জনতার সরকার ক্ষমতায়, এখনো যদি শেখ হাসিনার আমলের মতো আমাদের বেতন-ভাতা বন্ধ থাকে, তাহলে খুবই দুঃখজনক। আমরা প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে নেওয়ার দাবি জানাই।’
জানতে চাইলে মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা শিক্ষক কল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহা. আবুল হোসাইন বলেন, ‘চার মাস ধরে আমরা কেউ বেতন-ভাতা পাচ্ছি না। এই বাজারে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন শিক্ষকেরা। সামনে পবিত্র ঈদুল আজহা, অথচ আমাদের বেতনের কোনো খবর নেই। আমরা প্রধান উপদেষ্টা ও ধর্ম উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চাই।’