Image description

সম্প্রতি ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পহেলগাঁওয়ে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ পর্যটক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। যার জেরে প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। যার রেশ ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাজ্যেও।

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যেই সম্প্রতি হামলার শিকার হয়েছে লন্ডনে অবস্থিত পাকিস্তানি হাইকমিশন। হামলার ফলে ভবনের জানালার কাচ ভেঙে যায় এবং সাদা দেয়ালে ও নামফলকে গেরুয়া রঙের পেইন্ট ছিটিয়ে দেওয়া হয়।

লন্ডনে ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটল, যার একদিন আগে শত শত ভারতীয় বিক্ষোভকারী পাকিস্তানি হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ করে। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজনকে সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারও করা হয়।

এদিকে ভারতীয় বিক্ষোভকারীদের জবাবে পাকিস্তানের সমর্থনে পাল্টা বিক্ষোভকারীরাও ওই সময় উপস্থিত ছিলেন। পাল্টা বিক্ষোভকারীরা কাশ্মীরে ভারতের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। 

এছাড়া পাকিস্তানের হাতে ২০১৯ সালে আটক ভারতীয় বৈমানিক অভিনন্দন বর্তমানের ছবি এবং ‘চা ও কাপ’-এর প্রতীকী চিত্রও প্রদর্শিত হয়। এই চিত্র মূলত পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ‘অপারেশন সুইফট রিটোর্ট’-এর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

ব্রিটেনে ভারতীয় ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কমিউনিটি মূলত দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক ইস্যুতে বিভক্ত। বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যু, সাম্প্রদায়িক সংঘাত নিয়ে। এছাড়া দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা যখন বাড়ে, তখন ব্রিটেনে বসবাসকারী দুই কমিউনিটির মধ্যেও তা ছায়া ফেলে।

লন্ডনের এই সাম্প্রতিক ঘটনা দেখিয়েছে যে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন কেবল উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং তা বিশ্বব্যাপী প্রবাসী কমিউনিটিগুলোর মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

এই উত্তেজনা সামাজিক অস্থিরতার ঝুঁকি তৈরি করছে। বিশেষ করে যেখানে দুপক্ষই নিজেদের বক্তব্য প্রকাশে রাজপথে নেমে আসে এবং তা কখনো কখনো সহিংসতায় রূপ নেয়। 

এদিকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী লন্ডনে পাকিস্তান দূতাবাসের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

 ১৯৬১ সালের ‘Vienna Convention on Diplomatic Relations’ অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের দায়িত্ব ছিল পাকিস্তান হাইকমিশনের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

কনভেনশনের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে,  ‘The receiving State is under a special duty to take all appropriate steps to protect the premises of the mission against any intrusion or damage and to prevent any disturbance of the peace of the mission or impairment of its dignity.’

অর্থাৎ, মিশনের সম্মান রক্ষা এবং যে কোনো অনধিকার প্রবেশ বা ক্ষতি প্রতিরোধ করা হোস্ট দেশ তথা যুক্তরাজ্যের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এ ঘটনার মাধ্যমে প্রশ্ন উঠছে- ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ কি যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছিল? কেন বিক্ষোভের সময় সম্পত্তি নষ্ট হওয়ার সুযোগ তৈরি হলো? 

যুক্তরাজ্যের জন্য এটি শুধু পাকিস্তানের নয়, সব বিদেশি মিশনের নিরাপত্তা প্রশ্নেও এক বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

এদিকে হামলার নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ‘নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য’ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি এ ধরনের যেকোনো তদন্তে ইসলামাবাদের অংশগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছেন।

এর আগে শুক্রবার পাকিস্তানের সিনেট সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস করে পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসূত্র আছে দাবি করে ভারতের যে অভিযোগ তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও অভিহিত করা হয়েছে।