Image description

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার উৎখাত হওয়ার আগে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে জনরোষ দানা বেঁধে ওঠা সম্পর্কে ভারত অবগত ছিল। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত শনিবার নয়াদিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক পরামর্শক কমিটির এক বৈঠকে এ কথা বলেন।

জয়শঙ্কর পার্লামেন্ট সদস্যদের আরও বলেন, শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা না থাকায় তাকে শুধু ‘পরামর্শ’ দেওয়া ছাড়া তেমন কিছু করার পরিস্থিতিতে ভারত ছিল না। দ্য হিন্দু জানতে পেরেছে, জয়শঙ্কর ইঙ্গিত দেন, অন্যান্য প্রধান অংশীদারের মতো ভারত ও বাংলাদেশের ভেতরের উত্তাল পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত ছিল। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্কের সাম্প্রতিক মন্তব্যের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

টুর্কের মন্তব্যে দাবি করা হয়, হাসিনাবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বিরোধে না জড়াতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ সতর্ক করেছিল। বলা হয়েছিল, এ ধরনের পদক্ষেপ জাতিসংঘ সেনাবাহিনীকে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করতে উৎসাহিত করবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্যরা দেশটির পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনার জন্য জয়শঙ্করের সঙ্গে ওই বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রতিবেশী দেশগুলো বিশেষ করে—বাংলাদেশ, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পায়।

দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করলেও শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দেওয়ায় ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে উত্তেজনা রয়ে গেছে।

‘মোদি-ইউনূস বৈঠক আয়োজনের অনুরোধ বিবেচনা করা হচ্ছে’: এদিকে পিটিআই জানিয়েছে, জয়শঙ্কর সংসদীয় প্যানেলের বৈঠকে বলেন, বঙ্গোপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থা বিমসটেকের আসন্ন শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক আয়োজনে বাংলাদেশের অনুরোধ বিবেচনা করা হচ্ছে। সূত্র বলেছে, বৈঠকে জয়শঙ্কর ইঙ্গিত দেন, ব্যাংককে আগামী ২ থেকে ৪ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় বিমসটেক সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদি যোগ দিতে পারেন। তবে তার সফরের বিষয়টি বৈঠকে নিশ্চিত করেননি তিনি।

জয়শঙ্কর জানান, প্রধানমন্ত্রী মোদি আগামী মাসে শ্রীলঙ্কা সফরে যাবেন। বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎ ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে পারে কি না, জানতে চাইলে তিনি আবারও নিশ্চিত না করে বলেন, ‘এটি বিবেচনাধীন আছে।’

প্রসঙ্গত, বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে সম্ভাব্য আলোচনার জন্য বাংলাদেশ গত বুধবার ভারতকে কূটনৈতিক পত্র দেয়। এর আগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে দুই নেতার মধ্যে বৈঠকের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তবে সে সময় তাদের বৈঠক হয়নি। এবার ব্যাংককে বৈঠক হলে এটিই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের প্রথম বৈঠক।

হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা প্রসঙ্গ: পিটিআই জানায়, সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, বৈঠকে কয়েকজন সংসদ সদস্য ‘বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায়’ উদ্বেগ জানান। এসব ঘটনায় ভারত কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চান তারা। জবাবে জয়শঙ্কর জানান, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দাবি করেছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনাগুলোর কারণ রাজনৈতিক, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হওয়ায় নয়। বৈঠকে কংগ্রেসের সংসদ সদস্য কে সি বেনুগোপাল ও মনীশ তিওয়ারি, শিবসেনা-ইউবিটির সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদি, কংগ্রেসের মুকুল ওয়াসনিকসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য ‘বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে নিশানা করে হত্যা’র অভিযোগের বিষয়টি তোলেন।

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে এ বিষয় তুলে ধরেছে। ভারত সরকার এ নিয়ে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পরবর্তী সময়ে কোনো একদিন পাকিস্তান ও চীন বিষয়ে পৃথকভাবে কথা বলবেন তিনি। তবে পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সার্ক নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে এবং এ জন্য ভারত বিমসটেককে (দ্য বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তথ্যসূত্র: দ্য হিন্দু ও পিটিআই।