
গাজায় ফের ইসরাইলের গণহত্যা শুরুর মর্মান্তিক সংবাদে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ভোরে জেগে ওঠে বিশ্ব। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইসরাইলের এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪ শতাধিক মানুষ। আহত হয়েছেন ছয় শতাধিক।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে কেন এমন হামলা চালাল নেতানিয়াহু বাহিনী? কীভাবে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো?
গাজায় কী হচ্ছে?
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে, গাজায় মঙ্গলবার রাতভর হামলা চালিয়ে ইসরাইল ৪০০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। ভোরের দিকে মানুষ ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় বিমান হামলা চালানো হয়।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধ পুনরায় শুরুর ঘোষণা দিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
হামলাগুলো কোন জায়গায় হয়েছে?
প্রতিবেদন অনুসারে, গাজার উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ প্রদেশগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরাইলি ট্যাঙ্কগুলো খান ইউনিসের আবাসান শহরে গোলাবর্ষণ করেছে।
আল জাজিরার সংবাদদাতা তারেক আবু আযজুম বলেন,
বেশিরভাগ বিমান হামলাই হয়েছে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, অস্থায়ী স্কুল এবং আবাসিক ভবনগুলোতে, যেখানে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
হতাহত সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
হামলায় মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইসরাইলের হাতে কমপক্ষে ৪০৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত ছবিতে নিহতদের মধ্যে অনেক শিশু দেখা গেছে। এছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও সংখ্যক মানুষ চাপা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সরকারি মিডিয়া অফিস বলছে, ‘এই শহীদ এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের বেশিরভাগই নারী, শিশু ও বয়স্ক এবং কিছু ক্ষেত্রে গোটা পরিবারই প্রাণ হারিয়েছে।’
যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের জন্য কী অজুহাত দেখাচ্ছে ইসরাইল?
ইসরাইল দাবি করছে, গাজায় বন্দিদের মুক্তি দিতে হামাসকে বাধ্য করার জন্য তারা এই হামলা চালিয়েছে। হামাস নতুন করে আক্রমণের পরিকল্পনা করছে এবং অস্ত্র সংগ্রহ করছে বলেও দাবি তাদের।
তবে আল জাজিরার সাংবাদিক হামদা সালহুত বলেছেন,
ইসরাইল নিজেই এই চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের অবসান এবং গাজায় থাকা ৫৯ ইসরাইলি জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করতে পারতো।
বলা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ইসরাইল দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার চেষ্টা এড়াতে চাচ্ছিল। যেখানে হামাস বলে আসছিল, চুক্তিটি দ্বিতীয় পর্যায়ে অব্যাহত থাকা উচিত। প্রাথমিকভাবেও সেই আলোচনাই হয়েছিল।
হামাস কী বলছে?
হামাস তাদের টেলিগ্রামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন এবং গণহত্যা অব্যাহত রাখার অভিযোগ এনেছে।
ইসরাইলের এই হামলাকে ‘সব আন্তর্জাতিক এবং মানবিক কনভেনশনের স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে হামাস। সংগঠনটি জানায়, বিপজ্জনক মানবিক পরিস্থিতি এবং জ্বালানির অভাবের কারণে আহতদের অনেকেই হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারার কারণে মারা গেছেন।
কিন্তু এ হামলা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া কী? হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, হামলা পুনরায় শুরু করার আগে ইসরাইল ওয়াশিংটনের সঙ্গে পরামর্শ করেছিল।
এই উত্তেজনা বাড়ার কারণ কী?
হামলার পেছনে ইসরাইলি দাবি এবং আলোচনা আসলে কীভাবে এগিয়েছে, সে সম্পর্কে আগেই জানা গেছে। কিন্তু অতীতের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয় যে, ইসরাইল হয়তো কখনোই গাজা ছেড়ে যাওয়ার বা যুদ্ধ বন্ধ করার ইচ্ছা পোষণ করেনি।
কারণ, উভয় পক্ষ যখন যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল ইসরাইল তখন লিখিতভাবে বলতে অস্বীকৃতি জানায় যে, তারা প্রথম পর্যায়ের পরে পুনরায় যুদ্ধ শুরু করবে না।
যদিও যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতাকারী মিশর, কাতার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে মৌখিক নিশ্চয়তা পেয়ে হামাস শর্তাবলীতে সম্মত হয় যে, ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে তাদের গণহত্যা পুনরায় শুরু করবে না।
ইসরাইলে বেশিরভাগ অস্ত্র সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের অটল সমর্থনও দেয়। ফলে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রকৃত প্রভাব বিস্তারকারী একমাত্র দেশও বলা যায় যুক্তরাষ্ট্রকে। এটাও এখন স্পষ্ট যে, ওয়াশিংটন আবারও ফিলিস্তিনিদের জীবনকে বেআইনি ও অপরাধমূলক ইসরাইলি সহিংসতা থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছে।