
জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে হামলার ঘটনায় সাময়িক বহিষ্কৃত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২৮ শিক্ষার্থীর প্রত্যেকেই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা সবাই ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অংশ নিয়েছে। তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি আসিফ ইনান ও ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আশ্চর্যজনকভাবে এ তালিকায় আসেনি ছাত্রলীগের ঢাবির সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের নাম।
সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট এ বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। তালিকায় সৈকতের নাম না থাকায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মতে, শুধু সৈকত নয়, তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন আরও একাধিক হামলাকারী। ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাবি শিক্ষার্থী আব্দুর রহিম ফেসবুকে লিখেছেন, সাময়িক বহিষ্কারের তালিকা দেখে যা বুঝলাম, তদন্তের দায়িত্ব পড়েছে হয়তো তানভীর হাসান সৈকতেরই ওপর। সৈকতসহ হামলায় জড়িত তার কাছের সব নেতারই নাম তালিকা থেকে আউট।
জারিফ আফরান লিখেছেন, সরাসরি ফুটেজ থাকার পরও অনেক হামলাকারী বাদ পড়েছে। অথচ অনেককে লঘুপাপে গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মুসাদ্দেক আলী লিখেছেন, জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেও অনেক সন্ত্রাসী বহিষ্কারের তালিকা থেকে বাদ পড়ে গেছে। শরিফুল ইসলাম লিখেছেন, তালিকায় সৈকতের নামটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ খুঁজে পেলে আমাকে জানাবেন।
যারা বহিষ্কৃত : বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইনান, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখা ছাত্রলীগের ইমন খান জীবন, বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ইমরান শেখ, বিজয় একাত্তর হলের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী এম সাকিব, সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি এসএইচ স্বাধীন, বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক ওমর ফারুক, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের উপসম্পাদক ওমর ফারুক শুভ, জগন্নাথ হলের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়েলস সরকার, পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের কাউসার হাসান, উর্দু বিভাগের কৌশিক হাসান পরশ, অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের খালিদ মাহমুদ মিরাজ, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আলম চৌধুরী, সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক তুষার হোসেন, সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হাসান অপি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের নাবিন হোসেন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ, অর্থনীতি বিভাগের নাহিদ ভূঁইয়া, ইতিহাস বিভাগের নায়েব শাহরিয়ার, অপরাধ বিজ্ঞানের নিঝুম ইফতার, আরবি বিভাগের নিয়াজ, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগ কর্মী নুরুল আমিন, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগ কর্মী নূরে আলম বিশ্বাস; কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের হুসাইন মোহাম্মদ সোহান, ফিন্যান্স বিভাগের হাসান সাইদ, দর্শন বিভাগের হারুন অর রশিদ, ঢাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক স্বাগত আহমেদ, আইন বিভাগের সৈয়দ ইশতিয়াক ফারদিন, জসীমউদ্দীন হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওয়ালিউল সুমন, জগন্নাথ হলের সুমন নন্দী, আইন বিভাগের শাহরিয়ার অনন, সূর্যসেন হলের শাহরিয়ার অভি, সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার উদ্দিন, বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক শাহাবুদ্দিন বিজয়, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি বিভাগের শুভ আলম, দর্শন বিভাগের শেখ নাসির উদ্দিন, আরবি বিভাগের শোয়াইব আহসান, বিজয় একাত্তর হলের সজিবুর রহমান সজিবসহ ১২৮ জন শিক্ষার্থী। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলমান শিক্ষার্থীর পাশাপাশি রয়েছেন কয়েক বছর আগে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করা শিক্ষার্থীরাও। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন-এমন কয়কজনকে বহিষ্কার করাসহ নানা সমালোচনার সম্মুখীন হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিকালে অধিকতর তদন্ত কমিটি গঠন করার ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১৫ জুলাই ২০২৪ থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত সংঘটিত বেআইনি ও সহিংস ঘটনার অধিকতর তদন্তের জন্য সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. তাজমেরী এসএ ইসলামকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৭ মার্চ সিন্ডিকেট সভায় এ কমিটি গঠন করা হয়।
এ কমিটি সত্যানুসন্ধান কমিটি কর্তৃক চিহ্নিত ১২৮ জনের বিষয়টি আমলে নিয়ে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে সহিংস ঘটনায় জড়িতদের তথ্য চেয়ে চিঠি দেবে। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে খুব শীঘ্রই তদন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করবে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জবির দুই ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করল ঢাবি : জবি প্রতিনিধি জানান, ঢাবি ক্যাম্পাসে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় জড়িত যে ১২৮ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের মধ্যে দুজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার নাম রয়েছে। জানা যায়, ১২৮ জনের তালিকায় ৮২ নম্বরে ইব্রাহিম সানিমের নাম রয়েছে, যিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও জবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। আর ১২১ নম্বরে থাকা মাহমুদুল হাসান আকাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও জবি ছাত্রলীগের মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি।
ইব্রাহিম সানিমের অভিযোগে বলা হয়েছে, সে ভিসি চত্বর এলাকায় নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। আরেক ছাত্রলীগ নেতা আকাশের বিষয়ে বলা হয়েছে, ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার সময় সে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। তাকে লাঠি হাতে মিছিলে প্রথম সারিতে দেখা যায়। এ বিষয়ে জবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনো অবহিত না। যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের এ বিষয়ে কিছু জানায় তখন ব্যবস্থা নিতে পারব।