Image description

অষ্টম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য কণিকা বই থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে অন্যান্য বইয়ে ভাষণ আগের মতোই থাকছে। রবিবার (১৯ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক  ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণির বাংলা বই থেকে ৭ মার্চের ভাষণ বাদ দেওয়া হয়েছে। এ বইয়ের সঙ্গে এ ভাষণ যায় না। তবে অন্যান্য শ্রেণির বইয়ের বিভিন্ন অংশে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ থাকবে। এটি ইতিহাসের অংশ।’

জানা গেছে, গত ১৮ আগস্ট জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) বৈঠকে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক বই অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে ওই বৈঠকে অষ্টম শ্রেণির ‘সাহিত্য-কণিকা’ বইয়ে থাকা ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে তুমুল বিতর্ক দেখা দেয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্য জানান, একজন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ছাড়া প্রায় সবাই সাহিত্য বইয়ে এ ভাষণ রাখার বিরোধিতা করেন। তীব্র আপত্তি থাকা সত্ত্বেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা ও এনসিটিবির কয়েকজনের আগ্রহে সংক্ষেপিত আকারে ভাষণটি রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক, কিন্তু এতে কিছু বিতর্কিত অংশও রয়েছে। ইতিহাসের পাঠ্যবইয়ে এটি উপযুক্তভাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে, তবে সাহিত্য বইয়ে রাখার যুক্তি নেই। পাঠ্যবইয়ে রাজনৈতিক বয়ান প্রতিষ্ঠার প্রবণতা এখন বন্ধ হওয়া দরকার ছিল। সেটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।’

বাংলা সাহিত্য কণিকা বইয়ে ভাষণটি রাখার প্রাসঙ্গিকতা নেই। মাউশির অধীন পরিচালিত পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন-সংশ্লিষ্ট এক প্রতিবেদনেও বাংলা বইয়ে এ ভাষণ রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে জানানো হয়েছিল। সবার মতামতের ভিত্তিতে বাংলা সাহিত্য কণিকা বই থেকে ৭ মার্চের ভাষণ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।—বৈঠকে অংশ নেওয়া একটি সংস্থার মহাপরিচালক

 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির একাধিক সূত্র জানায়, বাংলা সাহিত্য বইয়ে ভাষণটি রাখার পক্ষে ও বিপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে টানাপোড়েন চলছিল। সাবেক শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জোবায়ের ভাষণটি রাখার পক্ষে ছিলেন এবং সময়-স্বল্পতার কারণে জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস বইয়ে না রাখার পক্ষেও অবস্থান নেন। যদিও তিনি এখন মন্ত্রণালয়ে নেই, তবু শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ভাষণটি রাখার পক্ষে সক্রিয় ছিলেন।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, সাহিত্য বইয়ে সংক্ষেপিত আকারে ভাষণটি রাখার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির একটি প্রভাবশালী অংশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। তবে কমিটির কয়েকজন সদস্য এ নিয়ে মতামত দিতে অনীহা প্রকাশ করেন। তীব্র সমালোচনার মুখে প্রভাবশালী সেই মহলের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে। বাংলা সাহিত্য বই থেকে ৭ মার্চের ভাষণ বাদ দেওয়া হয়েছে।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অংশ নেওয়া একটি সংস্থার মহাপরিচালক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ এবং মাধ্যমিকের ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়ে ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে আছে। এই বইগুলোতে ভাষণ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। তবুও অষ্টম শ্রেণির বাংলা বই ‘সাহিত্য-কণিকা’য় বহাল রাখার চেষ্টা করেছিল প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। আজকের সভায় ওই সিন্ডিকেটের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলা সাহিত্য কণিকা বইয়ে ভাষণটি রাখার প্রাসঙ্গিকতা নেই। মাউশির অধীন পরিচালিত পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন-সংশ্লিষ্ট এক প্রতিবেদনেও বাংলা বইয়ে এ ভাষণ রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে জানানো হয়েছিল। সবার মতামতের ভিত্তিতে বাংলা সাহিত্য কণিকা বই থেকে ৭ মার্চের ভাষণ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।