Image description

প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সাত কলেজ শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাধিক পক্ষ তৈরি হয়েছে। স্নাতক–স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা সরকারের প্রস্তাবিত কাঠামোকে সমর্থন জানিয়ে দ্রুত চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারির দাবি জানিয়ে আসছেন। আর শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেও নিজেদের স্বার্থ রক্ষা হবে, এমন কাঠামো দাবি করে অবস্থান নিয়েছেন। এই দুই পক্ষের বাইরে শিক্ষকরা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদেরও সমর্থন ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। প্রায় প্রতিদিন ইন্টারমিডিয়েটের শিক্ষার্থীরাও মিছিল–মিটিং করে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।

সবগুলো পক্ষ নিজেদের শক্তিমত্তা দেখাতে গিয়ে পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত করে তুলছে। গতকাল সোমবার (১৩ অক্টোবর) ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে সেরকমই একটা নজির দেখা গেল। এদিন সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত ‘লং মার্চ টু শিক্ষা ভবন’ কর্মসূচি ছিল। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারির দাবিতে তারা এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। এদিন আন্দোলনে অংশ নিতে ঢাকা কলেজের শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীরা জড়ো হচ্ছিলেন। এ সময় শিক্ষকদের সঙ্গে স্নাতক–স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এতে ঢাকা কলেজের ইন্টারমিডিয়েটের কয়েকজন শিক্ষার্থীও যুক্ত হন।

এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আসলাম হোসেন। তিনি বলেন, একদিকে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে এসেছিলেন, অন্যদিকে অনার্সের শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় একটা উত্তেজনাকর পরিবেশ তৈরি হয়। এ পরিস্থিতি প্রশমন করতে শিক্ষকরা সেখানে এগিয়ে যান। কিন্তু শহীদ মিনারে আগে থেকে উপস্থিত অনার্সের এক শিক্ষার্থী শিক্ষকদের ‘দালাল’ বলে সম্বোধন করে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের বাগ্‌বিতণ্ডা তৈরি হয়।

 

এ ঘটনার বেশকিছু ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, কালো জামা পরা ও মুখে (হাফ) মাস্ক পরা ফরসা একজন শিক্ষার্থীকে ঘিরে কলেজের শিক্ষকরা টানাহেঁচড়া করছেন। শিক্ষকরা তাকে টেনে প্রশাসন ভবনের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ সময় তাকে শিক্ষকদের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টাও কিছু শিক্ষার্থীকে করতে দেখা যাচ্ছে। এক পর্যায়ে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মাঝে মাস্ক পরা ওই শিক্ষার্থীকে ঘিরে ব্যাপক ধস্তাধস্তি শুরু হয়। শেষে ওই শিক্ষার্থীকে শিক্ষকরা টেনে নিয়ে যাচ্ছেন—ভিডিওতে এমনই দেখা যাচ্ছে।

তাহসান রাকিব নামে ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক এক শিক্ষার্থী গতকাল নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আজকে ঢাকা কলেজে ইন্টার, অনার্সের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, তা মোটেও কাম্য নয়। শিক্ষকরা আমাদের মাথার তাজ, তারা আমাদের আলোর পথ দেখান। তাদের সঙ্গে বেয়াদবি বা হাতাহাতি কোনোটাই কাম্য নয়। বেশ কয়েকটা ভিডিও দেখলাম, কিন্তু কোথাও সরাসরি শিক্ষকদের গায়ে হাত দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা দেখলাম না। দেখা যাচ্ছে একজন শিক্ষার্থীকে শিক্ষকরা নিয়ে যাচ্ছেন। তার সহপাঠীরা তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন। এখানে কিছু ধস্তাধস্তি হচ্ছে। আর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা যতই যা করুক, সরাসরি শিক্ষকদের গায়ে হাত দেবে—এটা বিশ্বাস করি না।’

অধ্যাপক আসলাম হোসেন বলেন, মূলত ঘটনাটা শুরু করেছিল ওই ছাত্র। সে শিক্ষকদের ‘দালাল’ বলায় ইন্টারমিডিয়েটের শিক্ষার্থীরা তার দিকে তেড়ে আসছিল। পরে শিক্ষকরা মিলে ওই শিক্ষার্থীকে সরিয়ে নিয়েছে, যাতে দুই পক্ষের মাঝে কোনো ঝামেলা সৃষ্টি না হয়। কিন্তু এই ঘটনা বাইরে ভুলভাবে ছড়ানো হয়েছে যে, শিক্ষকরা (মাস্ক পরা) ওই শিক্ষার্থীকে আটকে রেখেছে। অথচ শিক্ষকরা তাকে সেফ করার জন্য নিয়ে গেছে।

এই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষক লাউঞ্জে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন শিক্ষকরা। এতে সাত কলেজের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষক ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা অংশ নেন। প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ. কে. এম. ইলিয়াসও এ সভায় অংশ নেন। তিনি তার বক্তব্যে এই ঘটনায় নিন্দা জানান। এ সময় উপস্থিত শিক্ষকরা তাকে ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসকের পদ থেকে পদত্যাগের দাবি জানান।

 

ঢাকা কলেজে যাকে জড়িয়ে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মাঝে এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়, তার নাম মো. ফরহাদ রেজা। তিনি ঢাকা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শহীদ মিনারে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ের আগে ছুটি দেওয়া নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা চলছিল। এ সময় আমি শিক্ষকদেরকে ‘দালাল’ বলে ফেলি। এরপর এক শিক্ষক এসে আমার কলার ধরে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন।

‘‘এটা দেখে সেখানে অবস্থানরত আরও ১০–১৫ জন শিক্ষক আমার ওপর একযোগে আক্রমণ করেন। এ সময় উচ্চমাধ্যমিকের কিছু শিক্ষার্থী এসেও যোগ দেয়। তারা আমাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া শুরু করেন। মনে হচ্ছিল, আমার হাত ছিঁড়ে যাচ্ছে। তারা আমাকে ধরে অফিসে নিয়ে যায়। শিক্ষকরা আমাকে অফিস রুমে নিয়ে গিয়ে বলেন, ‘আমি নাকি শিক্ষকের কলার ধরেছি।’ আমার থেকে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু আমি বলি, আমি কারও কলার ধরিনি। কারও গায়ে হাত তোলার প্রশ্নই আসে না। এখানে শিক্ষকদের ‘হেনস্তা’ করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। উল্টো আমাকে নিয়ে বাইরে টানাহেঁচড়া করা হয়েছে।’’

‘শিক্ষকদের ধাক্কায় পড়ে পা ভেঙেছে মুরাদের’
সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা শুরুর প্রস্তুতির সময় ঢাকা কলেজে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধস্তাধস্তির সময় ‘শিক্ষকদের ধাক্কায়’ পড়ে গিয়ে মো. মুরাদ হোসেন নামে এক শিক্ষার্থীর পা ভেঙে গেছে। পরে ওই শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে তিনি প্লাস্টার করা পা নিয়ে সেখানে বিশ্রামে রয়েছেন।

মুরাদ বলেন, অনার্সের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের বাগ্‌বিতণ্ডা এক পর্যায়ে আনোয়ার স্যারের নেতৃত্বে ১০–১৫ জন শিক্ষকের একটি দল এবং ইন্টারমিডিয়েটের ৫–৬ শিক্ষার্থী সংঘবদ্ধভাবে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ফরহাদ রেজার ওপর আক্রমণ করে। সবাই মিলে তাকে মারধর শুরু করে। এই মারধর থেকে আমি ও আরও কয়েকজন মিলে ফরহাদকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যাই। এর মধ্যে শিক্ষকদের সঙ্গে ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্ররা এসে রেজাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন আমি দৌড়ে গিয়ে রেজাকে জড়িয়ে ধরি। তখন তারা আমাকেও মারধর শুরু করে।

শিক্ষকদের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে পা ভেঙে যাওয়ার দাবি করে মুরাদ আরও বলেন, আমি রেজাকে জড়িয়ে ধরলে তারা আমাকেও ধাক্কা দেয়। এরপর আমি পড়ে যাই। তাদের ধাক্কায় আমি কড়ই গাছের সামনে এমনভাবে পড়ে যাই যে, আমার পা ভেঙে যায়। পরে সহপাঠীরা আমাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। সেখানে এক্স–রে করার পর দেখা যায়, আমার পায়ের হাড়ে ফাটল ধরেছে। এখন আমার পা প্লাস্টার করা হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, আমাকে ১৫ দিন বেড রেস্টে থাকতে হবে। এখন আমার পরীক্ষা চলছে—আমি কীভাবে পরীক্ষা দেব, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

এদিকে, গতকাল সোমবার থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তির এই ঘটনাকে শিক্ষকরা তাদেরকে ‘হেনস্তা’ বলে দাবি করছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে দেশের সব সরকারি কলেজে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেয় বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন। এর অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার দেশের সব সরকারি কলেজে শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে না গিয়ে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানানো হয়।

বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের এক বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, সোমবার ঢাকা কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের ওপর ‘দুষ্কৃতিকারীরা’ হামলা চালানোর পাশাপাশি ‘টিচার্স লাউঞ্জ’ ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সব সরকারি কলেজ, সরকারি মাদ্রাসা ও অন্যান্য অফিসে কর্মবিরতি ও কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালনের অনুরোধ জানানো হয় বিবৃতিতে। অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বানে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সাত কলেজসহ দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও শিক্ষকরা এ কর্মসূচি পালন করেছেন।

জানতে চাইলে গতকাল সোমবার রাতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা কলেজের সম্পাদক ড. মোহাম্মদ দিললুর রহমান বলেন, ঘটনাগুলো হঠাৎই ঘটেছে, তাই শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানো প্রয়োজন ছিল। পরে কলেজের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকা কলেজে সংঘটিত শিক্ষক ‘হেনস্তার’ প্রতিবাদে মঙ্গলবার সারাদেশের সরকারি কলেজগুলোতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি এবং কর্মস্থলে অবস্থান করে কালো ব্যাজ ধারণের কর্মসূচি পালন করা হবে।

ঢাকা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক পারভীন সুলতানা হায়দার বলেন, ইন্টারমিডিয়েটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনার্সের শিক্ষার্থীদের যেন কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, সেজন্য আমাদের কয়েকজন সহকর্মী শহীদ মিনারে গিয়ে অবস্থান নেন। কারণ, আমরা শুনেছি অনার্স ও ইন্টারমিডিয়েটের শিক্ষার্থীদের প্রায় একই সময়ে কর্মসূচি রয়েছে। আমাদের শিক্ষকদের শহীদ মিনারে অবস্থানের আগে থেকে অনার্সের শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান করছিলেন। আমাদের সহকর্মীরা অনার্সের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ফরহাদ রেজা নামে এক শিক্ষার্থী শিক্ষকদের ‘দালাল’ বলে কটূক্তি করে। তাদের ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দেয়। পরে ইন্টারমিডিয়েটের শিক্ষার্থীরা গিয়ে শিক্ষকদের সহায়তায় তাকে আটক করে প্রশাসন ভবনে নিয়ে আসে।

অধ্যাপক পারভীন সুলতানা বলেন, অনার্সের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে আমাদের ফারজানা ম্যাডাম পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। পরে রেজা প্রশাসন ভবনে দেওয়া মুচলেকায় জানিয়েছে, ‘এটা তার বক্তব্য না। শিক্ষকদের এসব বলতে তাকে কেউ শিখিয়ে দিয়েছে এবং সে নিজের ভুল স্বীকার করে নিয়েছে’। সে নিজের ভুল বুঝতে পারায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রদের এমন আচরণ খুবই অপমানজনক। এতে শিক্ষকদের সম্মানহানি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের লাঞ্ছনার বাইরে কলেজেও ভাঙচুর চালিয়েছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদে আমাদের সহকর্মীরা কর্মবিরতি আহ্বান করেছেন।

বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বানে আজ মঙ্গলবার সারা দেশে সরকারি কলেজ, সরকারি মাদ্রাসা ও অন্যান্য অফিসে দিনব্যাপী সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এতে কোনো ক্লাস হয়নি। শিক্ষক হেনস্তার প্রতিবাদে একই সময়ে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে ‘ব্লকেড কর্মসূচি’ পালন করেছেন ঢাকা কলেজের ছাত্ররা। এতে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রীরাও সংহতি জানান।

অন্যদিকে শিক্ষকদের কর্মবিরতির প্রতিবাদে ঢাকা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজসহ একাধিক কলেজে বিক্ষোভ করেছেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে সমাবেশ করেন। এতে বক্তব্য দেন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০–২১ সেশনের শিক্ষার্থী রাব্বিল হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা কলেজের শিক্ষকরা উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের প্ররোচিত করে অনার্সের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন। রাজধানীতে তাদের নিজেদের ভোগবিলাসকে স্থায়ী করতে তারা আজ আমাদের শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। উচ্চমাধ্যমিকের ছোট ভাইয়েরা না বুঝে তাদের উসকানিতে পা দিচ্ছে।’

শহীদ মিনারের গতকালের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, কালকে শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের শিক্ষার্থীদের যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছিল, সেখানে আমার সহপাঠীদের শব্দচয়নে কিছু ত্রুটি ছিল। আমরা এর দায় স্বীকার করে নিচ্ছি। কিন্তু তারা আমাদের গুরুজন। তারা আমাদের সংশোধন না করে উল্টো জুতাপেটা করেছেন। ঘটনাস্থলেই আমরা এ দায় স্বীকার করে নিয়েছিলাম। আমরা শিক্ষকদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছি। অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষকদের পা চেপে ধরেও ক্ষমা চেয়েছে। তারা আমাদের কথা শোনেননি।

শিক্ষার্থীদের সমাবেশ থেকে শিক্ষকদের কর্মবিরতিকে ‘নাটক’ বলে উল্লেখ করেছেন রাব্বিল। তিনি বলেন, শিক্ষকরা তাদের নিজেদের স্বার্থ টিকিয়ে রাখার জন্য কালো ব্যাজ ধারণের নামে আজকে একটা নাট্যমঞ্চ সাজিয়েছেন। তাদের এই কালো ব্যাজ ধারণ করার কারণ কী, সেটা কি কেউ বলতে পারবেন? পা ভেঙেছে আমার ছোট ভাইয়ের। তার বক্তব্যে শুনেছি, শিক্ষকদের ধাক্কায় তার পা ভেঙেছে। তাহলে তারা আমার ছোট ভাইয়ের পা ভেঙে কালো ব্যাজ ধারণ করেছেন! আজকে আমাদের পরীক্ষা ছিল। আমরা ক্যাম্পাসে এসে দেখি, তাদের নাটক চলছে। আমাদের পরীক্ষা নাকি স্থগিত করা হয়েছে। এটা সরাসরি প্রহসন ছাড়া কিছুই না। এটা পরিকল্পিত সেশনজট।

সাত কলেজের চলমান সংকট নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক আক্তার বানু বলেন, ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যে পক্ষগুলো তৈরি হয়েছে, সরকারের উচিত সবগুলো পক্ষের সঙ্গে কথা বলা। সম্ভব হলে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে বসা। এ ধরনের সিদ্ধান্তগুলো নিতে দেরি করার সুযোগ কম। যত দেরি হবে, পরিস্থিতি তত খারাপ হবে। এ কাজে সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দক্ষতার প্রমাণ দিতে হবে। তবে একটা বিষয় হলো, আপনি সবাইকে খুশি করতে পারবেন না। এ জন্য সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে কর্তৃপক্ষকে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতে হবে। আর সবগুলো পক্ষকে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। এটা যথেষ্ট কঠিন কাজ। বলা যত সহজ, বাস্তবায়ন করাটা ততটাই কঠিন।