
মার্কিন শুল্কের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের পোশাক খাতে। টানা দুই মাস রপ্তানি কমেছে। সেপ্টেম্বরে কমেছে ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ, বাড়তি মার্কিন শুল্ক কার্যকর হওয়ার মাস আগস্টে কমেছে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। শিগগিরই রপ্তানি বাড়ার সম্ভাবনা দেখছেন না উদ্যোক্তারা। ক্রেতারা আগের তুলনায় পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। ইউরোপের বাজার দখলে মরিয়া ভারত-চীনের উদ্যোক্তারা। এ দুই দেশের শুল্ক আরোপ বাংলাদেশের তুলনায় বেশি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন বাজার নির্ভরতা নয়, নজর দিতে হবে বিকল্প বাজার তৈরিতে। ব্যবসায়ীরা জানান, জুলাই মাসে পোশাক রপ্তানি তুলনামূলক ভালো ছিল। কারণ আগস্টে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তখনকার রপ্তানি ২০ শতাংশ শুল্কের আওতায় পড়ত। তাই বেশির ভাগ কারখানা জুলাইয়ের মধ্যেই পণ্যের শিপমেন্ট শেষ করে ফেলে। ফলে জুলাইয়ে রপ্তানি বেড়েছে। আগস্টে কিছুটা কমেছে। ব্যবসার এ ধীরগতি দুই থেকে তিন মাস অব্যাহত থাকতে পারে। ক্রেতারা নতুন শুল্ক কাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলে এ সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। চীনা ও ভারতীয় প্রস্তুতকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ইউরোপসহ অন্যান্য বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক কাজী মিজানুর রহমান বলেন, মার্কিন শুল্ক আরোপের কারণে পোশাক রপ্তানি কমেছে। আগে ১০ পিস পোশাক কিনলে এখন ৫ পিস কেনেন বায়াররা। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের শুল্ক ৩৬ শতাংশ। ভারত-চায়না আমাদের ইউরোপের বাজারে নজর দিয়েছে। সেখানে তারা কম দামে পোশাক অর্ডার নিচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের থেকে কিছু অর্ডার কমছে। এ কারণে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বেশির ভাগ ক্রেতাই নতুন করে অর্ডার দিচ্ছেন না। তারা অতিরিক্ত ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের একটি অংশ বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। রপ্তানিকারকদের পক্ষে এই অতিরিক্ত চাপ বহন করা সম্ভব নয়। রপ্তানিকারকরা প্রাথমিক শুল্ক সমন্বয় এবং উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির চাপে রয়েছে। রপ্তানির এই ধীরগতি আগামী দুই থেকে তিন মাস অব্যাহত থাকতে পারে। চীনা ও ভারতের ওপর মার্কিন শুল্ক বাড়ায় বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং অন্যান্য বাজারেও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে। চীনা ও ভারতীয় প্রস্তুতকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এসব বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
অর্থনীতিবিদ মো. মাজেদুল হক বলেন, পোশাক রপ্তানিকে কেন্দ্র করে ভূরাজনীতি এবং অর্থনীতির একটা বলয় তৈরি হয়েছে। এই ভূরাজনীতির শিকার হচ্ছে পোশাক খাত। কূটনৈতিক দক্ষতার মাধ্যমে পোশাক রপ্তানি বাড়ার জন্য কাজ করতে হবে।
ভারতের শুল্ক বাংলাদেশের তুলনায় বেশি। ভারতের কাছেও আমরা ভূরাজনীতির শিকার হচ্ছি নানাভাবে। আমাদের একক নির্ভর রপ্তানি খাত থেকে বের হয়ে আসতে হবে।