Image description

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচনে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে নির্বাচনি প্রচার- প্রচারণা। সাড়ে দিন দশক পর বুধবার ভোটের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮টি বিভাগ ও ছয়টি ইনস্টিটিউটের ২৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী তাদের সংযুক্ত ১৪টি হল এবং একটি হোস্টেলের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ জমা দিলেও ভোটের আমেজে কমতি দেখা যাচ্ছে না।

দেশের ভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এবারের নির্বাচনে নেই কোন সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন। নির্বাচনের আগে প্রচার-প্রচারণায় নিজেদের মধ্যে কোনো হানাহানি কিংবা বিশৃঙ্খলাও শোনা যায়নি। সব মিলিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ভোটের আমেজটা উপভোগ করছেন।

চাকসু নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে পরস্পরবিরোধী যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে, সেগুলোকে আচরণবিধির ‘সামান্য বরখেলাপ’ মনে করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন।

নির্বাচন কমিশনও তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে যা যা প্রয়োজন, সব ধরনের উদ্যোগ তারা নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের দাবিতে তারা স্বচ্ছ ব্যালেট বাক্স, ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ সব ধরনের কাজ করেছেন।

১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চাকসু নির্বাচন হয়েছে ছয়বার। আগামী ১৫ অক্টোবরের নির্বাচন নিয়ে হবে সপ্তম বার।

এর আগে চাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি ছাত্র হল এবং পাঁচটি ছাত্রী হল রয়েছে। এছাড়া চারুকলা ইনন্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত শিল্পী রশিদ চৌধুরী ছাত্র হোস্টেলটির অবস্থান নগরীতে।

 

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে মোট শিক্ষার্থীর ২৫ থেকে ২৭ শতাংশ শিক্ষার্থী থাকতে পারেন। এর বাইরের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেসে ও কটেজে অবস্থান করেন। তবে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর বসবাস ক্যাম্পাস থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের শহরে।

শিক্ষার্থীদের ভোট কেন্দ্রে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা ধরনের উদ্যোগ। তবে প্রার্থীদের কেউ কেউ খুব বেশি ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষার্থীরা যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সে জায়গা থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কেমন ভোটার উপস্থিতি হতে পারে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। তবে আমাদের পরিশ্রমকে যদি শিক্ষার্থীরা মূল্যায়ন করে, আমি আশাবাদী শতভাগ শিক্ষার্থী ভোট দিতে আসবেন।

“আমরা চাই তারা আসুক। শিক্ষার্থীদের আসতে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা না হয়, সেজন্য আমরা চেষ্টা করছি।”

বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ হবে। ক্যাম্পাসের আইটি ভবন, নতুন কলা ভবন, বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান ও বাণিজ্য (বিবিএ) অনুষদ ভবনে ভোট নেওয়া হবে।

পাঁচটি ভবনের ৬০টি কক্ষে প্রায় ৭০০টি বুথে ভোট নেওয়া হবে। প্রতিটি কক্ষে গড়ে চার থেকে পাঁচশ শিক্ষার্থী ভোট দেবেন।

এদিকে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য চাকসু ভবনের দ্বিতীয় তলায় আলাদা ভোট কেন্দ্র স্থাপন করেছে নির্বাচন কমিশন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা আজ (সোমবার) আমাদের কাছে আলাদা ভোট কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনারের উপস্থিতিতে ভোট দেওয়ার দাবি নিয়ে এসেছিল। আমরা তাদের দাবিটি গ্রহণ করেছি।”

দুজন নির্বাচন কমিশনারের তত্ত্বাবধানে দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন জানিয়েছেন।

চাকসুর মোট ব্যালট পেপার চার পৃষ্ঠার। হল ও হোস্টেল সংসদের ব্যালট পেপার এক পৃষ্ঠার। ব্যালটে প্রার্থীর নাম ও ব্যালট নম্বর থাকবে। বৃত্ত ভরাট করে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দেবেন।

 

 

ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সম্প্রতির ঐক্য জোটের ভিপি প্রার্থী ইব্রাহীম রনি মনে করেন, দূরত্বের কারণে ভোটার উপস্থিতিতে একটা প্রভাব পড়তে পারে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ আছে। বেশির ভাগ ভোট দিতে আসবেন বলে আশা করি। আমরা শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বাস ও শাটল ট্রেনের ব্যবস্থার কথা বলেছিলাম। প্রশাসন ব্যবস্থা করেছে। তবে সংখ্যা আরও বাড়ানো গেলে ভালো হতো।”

ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী মো. শাফায়াত হোসেন বলেন, “আমাদের মনে হচ্ছে, ছুটি শেষে অনেকেই এখনও বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে আসেনি। আবার বেশির ভাগ শিক্ষার্থী শহরে অবস্থান করে। অনেক শিক্ষার্থীকে দেখা যায়, ক্লাস না থাকলে ক্যাম্পাসে আসেন না। সে হিসাবে আমাদের একটা আশঙ্কা থেকে যায়।

“তবুও আমরা আশা করি, যারা উপস্থিত আছেন তাদের ৭০ শতাংশ ভোট দিতে আসবেন।”

রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার দিন ক্যাম্পাসে ছুটি শুরু হয়ে যায়। এ কারণে অনেক প্রার্থী নির্বাচনের সময় পেছানোর দাবি করেছিলেন। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১২ অক্টোবরের পরিবর্তে ১৫ অক্টোবর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনে করেন, গত সপ্তাহে ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু হলেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম ছিল। কিন্তু এ সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে। ফলে ভোটার উপস্থিতিও বেশি থাকতে পারে।

বাম ছাত্র এবং পাহাড়ি ছাত্র সংগঠনের প্যানেল বৈচিত্র্যের ঐক্যের ভিপি প্রার্থী ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, “আমরা বেশি সংখ্যক উপস্থিতি আশা করলেও একটা শঙ্কা থেকে যায়। কারণ ১৫ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভোট নিয়ে একটা অবিশ্বাস জন্মেছে।

“আবার ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করছে, ভোটের ফল একটি গোষ্ঠীর পক্ষে যাবে। সে কারণে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম হাতে পারে।”

তবে ভোটার উপস্থিতি ৬০ শতাংশ হলেই তা সন্তোষজনক হবে বলে মনে করেন এ ভিপি প্রার্থী।

স্বতন্ত্র জিএস প্রার্থী নূর মোহাম্মদ বাপ্পী মনে করেন ছুটির পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেকটা কম।

তিনি বলেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সবার কাছে যেতে না পারলেও ৬০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। আমার কাছে যতটুকু মনে হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভোটের প্রতি আগ্রহ রয়েছে।”

 

 

ভোটার আনতে বাস ট্রেনের ব্যবস্থা

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানানো হয়, বুধবার ভোটের দিন শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে আসা যাওয়ার জন্য মোট ৩০টি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সকাল ৯টায় নগরীর নিউ মার্কেট এবং ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্স থেকে পাঁচটি করে ১০টি এবং সকাল ১০টায় ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্স থেকে পাঁচটি বাস ক্যাম্পাসের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।

এদিকে ক্যাম্পাস থেকে বিকাল ৩টায় পাঁচটি এবং চারটায় পাঁচটি করে ১০টি বাস শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে। এরপর বিকাল সাড়ে ৫টায় আরও পাঁচটি বাস ক্যাম্পাস থেকে শহরের উদ্দেশে রওনা দেবে।

এদিকে নিয়মিত শাটল ট্রেনের পাশাপাশি একটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষ ট্রেনটি বেলা ১২টায় ষোলশহর থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।