
চট্টগ্রামের জুলাই আন্দোলনে ছাত্র হত্যার ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে নাম উঠেছে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজম রনির। কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় হাজারো শিক্ষার্থী বিক্ষোভে অংশ নেন। উত্তাল আন্দোলন দমাতে হঠাৎই হাজির হন বহিষ্কৃত চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজম রনি। সঙ্গে ছিলেন যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর।
তারা একটি প্রাইভেট কারে করে অস্ত্র নিয়ে আসেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই শুরু হয় গুলিবর্ষণ। আন্দোলনকারীদের ভাষ্য অনুযায়ী, বৃষ্টির মতো গুলিতে প্রাণ হারান তিনজন শিক্ষার্থী—ওয়াসিম, শান্তসহ আরও একজন। আহত হন অনেকেই। ছাত্রজনতার রক্তে রঞ্জিত হয় চট্টগ্রামের রাজপথ।
সেদিনের বিভৎসতা এখনো ভোলেননি আন্দোলনে অংশ নেওয়া সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, রনি ও তার সহযোগীরা সাদা মাইক্রোবাসে করে অস্ত্র নিয়ে এসে প্রকাশ্যে গুলি চালায়। এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমার এক ভাইয়ের মাথা প্রায় দুই ভাগ হয়ে গিয়েছিল। তাকে আমার সামনে আনা হয়েছিল, আমি নিজের রুমাল দিয়ে তার রক্ত মুছে দিয়েছিলাম।” সেদিনের স্মৃতি এখনও তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
৫ আগস্ট সরকারের পতনের পরও কুখ্যাত এই রনি ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার সহযোগিতায় তিনি প্রথমে ভারতে, পরে কম্বোডিয়ায় পালিয়ে যান। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, যদি প্রশাসন সহযোগিতা না করত, রনি কখনোই দেশ ছাড়তে পারতেন না। বহুমুখী অপকর্ম, উৎশৃঙ্খলতা ও দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার দায়ে রনি আগেই ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। তবুও তিনি বিদেশে থেকেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় রয়েছেন এবং সেখানে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষে থেকে নানা হুমকি-ধমকি ও অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত এক নারী শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, রনি ও তার সহযোগীরা তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ‘চাঁদাবাজ’ তকমা লাগিয়ে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করছে। তার ভাষায়, “আমরা যারা জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছি, যারা দেশটাকে সুন্দর করে গড়তে চেয়েছি, তাদের ইমেজ নষ্ট করার জন্যই এই গোষ্ঠী কাজ করছে।”
অন্যদিকে প্রশাসন বলছে, বিষয়টি তাদের নজরে আছে এবং রনি দেশে ফিরলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। সাইবার পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে তার অনলাইন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, হত্যা, গুম ও চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলার আসামি হয়েও রনির এখনো সক্রিয় থাকা প্রশাসনের অজ্ঞতা ও উদাসীনতার পরিচায়ক। তাদের মতে, “যদি সঠিক তদন্ত হতো, রনি কখনোই দেশ ছাড়তে পারত না। এখন প্রয়োজন নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনা।”
চট্টগ্রামের জুলাই আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবার ও সহপাঠীরা আজও বিচারহীনতার যন্ত্রণায় ভুগছেন। তারা আশা করছেন, সেদিনের রক্তের দায় এড়িয়ে যাওয়া যাবে না—ঘটনার পেছনের প্রকৃত পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।