
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নেই। সহকারী শিক্ষকরা সবাই সব বিষয়ে ক্লাস নেন। যিনি বিজ্ঞান পড়ান, তিনিই আবার সংগীত শেখান। ধর্ম ক্লাস নেওয়া শিক্ষকই শেখান চারুকলা বা আঁকাআঁকি। সম্প্রতি নতুন বিধিমালায় প্রাথমিকে বিষয়ভিত্তিক দুটি পদ সৃষ্টি করেছে সরকার—সংগীত ও চারুকলা।
প্রাথমিকে সংগীত-চারুকলার শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়ায় দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন এবং আলেম-ওলামাদের পক্ষ থেকে সংগীতের শিক্ষকের পরিবর্তে ধর্মের শিক্ষক নিয়োগের দাবি তোলা হয়েছে। এ দাবি নিয়ে তারা মাঠেও নেমেছেন। কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকাসহ সারাদেশে অসংখ্য মানববন্ধন, বিক্ষোভ-সমাবেশ, আলোচনা সভা করেন তারা।
আলেম-ওলামা ও আন্দোলনকারীদের দাবি— বাংলাদেশে মুসলিম বেশি। এখানকার প্রাথমিক স্তরের শিক্ষায় ইসলাম ধর্ম শেখাতে ধর্মীয় জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষক রাখা প্রয়োজন। সেজন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নেওয়া হলে সবার আগে ইসলাম ধর্ম শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করতে হবে।
তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, প্রাথমিক স্তরে ধর্ম বিষয়ে পাঠদানের জন্য বিশেষজ্ঞ বা বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক প্রয়োজন নেই। প্রাথমিকে ধর্মের যে প্রাথমিক পাঠ পড়ানো হয়, তা সব শিক্ষকই পড়াতে বা শেখাতে পারেন। সেজন্য এখনই ধর্মের জন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা নেই তাদের।
প্রাথমিকে ক্লাস কীভাবে হয়, পাঠদান করেন কারা
প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে তিনটি বিষয়। এর বাইরে ধর্ম, শিল্পকলা, পরিবেশ পরিচিতি সমাজ ও বিজ্ঞান, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয় পড়ানো হয়। এ চারটি বিষয়ের পাঠ্যবই না থাকলেও শিক্ষক নির্দেশিকা মেনে প্রাথমিকে বিদ্যালয়ে পাঠদান করেন শিক্ষকরা। বই না থাকা বিষয়গুলোর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ধর্ম বিষয়ে সপ্তাহে দুদিন ক্লাস থাকে। পাঠ্যবইবিহীন বাকি তিন বিষয়ে সপ্তাহে একটি করে ক্লাস থাকে। এগুলোকে শিক্ষকরা ঐচ্ছিক হিসেবে বিবেচনা করেন।
আগে সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মৌলভী শিক্ষক থাকতো। এখন সেটা নেই। এতে কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমছে। অথচ প্রাথমিকে উপবৃত্তি আছে, দুপুরের খাবার দেওয়া হচ্ছে, বৃত্তি পরীক্ষা আছে। এগুলো সুবিধা পেয়েও সন্তানকে পাশের নুরানি মাদরাসায় ভর্তি করাচ্ছেন অভিভাবকরা।- মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক
অন্যদিকে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ছয়টি করে বিষয় পড়ানো হয়। তৃতীয় থেকে পঞ্চমে পাঠ্যবই নেই কিন্তু ক্লাস নেওয়া হয়—এমন বিষয় দুটি। সেগুলো হলো—সংগীত, শিল্পকলা এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা। পাঠ্যবইবিহীন প্রত্যেকটি বিষয়ে সপ্তাহে একটি ক্লাস নেওয়া হয়। সেগুলো শিক্ষক নির্দেশিকা দেখে পড়ানো হয়।
প্রথম থেকে পঞ্চমের সব ক্লাসই সহকারী শিক্ষকরা নেন। প্রধান শিক্ষকও কিছু বিষয়ের ক্লাস নেন। এখানে বিষয়ভিত্তিক কোনো শিক্ষক নেই। তবে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে আসাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বিজ্ঞান ক্লাস নেন। সেটাও প্রধান শিক্ষক ঠিক করে দেন। অধিদপ্তর বা প্রশাসন থেকে কোনো বিশেষ নির্দেশনা নেই।
বরিশালের কাঁঠালিয়া উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক কোনো শিক্ষকই নেই। যিনি গান পারেন, তাকে সংগীতের ক্লাসে দেন প্রধান শিক্ষক। তবে এ ক্লাস অন্যদের থাকে। বিজ্ঞান, গণিত, ইংরেজি, বাংলা—সবই সবাইকে ক্লাসে পড়াতে হয়।’
ধর্ম ক্লাস নিয়ে ‘টানাপোড়েন’
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কোথাও পাঁচজন, কোথাও সাতজন শিক্ষক থাকেন। বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা ছয়-সাতজন। অনেক বিদ্যালয়ে সবই ইসলাম ধর্মের শিক্ষক। সেখানে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্ট ধর্মশিক্ষা পড়ানোর জন্য ওই ধর্মের শিক্ষক থাকেন না।
আবার কোথাও কোথাও সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষক বেশি। বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষকের করা রুটিনে সনাতন ধর্মাবলম্বীকে ধর্ম ক্লাস দেওয়া হয়। ক্লাসে অধিকাংশ শিক্ষক মুসলিম হওয়ায় ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে তখন সনাতন ধর্মাবলম্বী ওই শিক্ষককেই পড়াতে হয়। এ নিয়ে শিক্ষক-অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালের অন্তত ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ক্লাস রুটিন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। খুলনার পাইকগাছার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষক রয়েছেন। দুজন মুসলিম ও দুজন সনাতন ধর্মাবলম্বী। সেখানে মুসলিম শিক্ষকরা ইসলাম শিক্ষার সঙ্গে সনাতন ধর্ম শিক্ষা বিষয়ের ক্লাস নেন। আবার সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষকরাও ইসলাম শিক্ষাসহ অন্য ধর্মের শিক্ষার্থীদের পড়ান।
বিদ্যালয়টির একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছাত্রজীবনে আমি মুসলিম অনেক বন্ধুর সঙ্গে মিশেছি। কিন্তু সেভাবে তো ইসলাম শিক্ষা বই পড়িনি। ওখানে কোরআনের আয়াত, সুরা থাকে। সেগুলো আমি পড়তে জানি না। ফলে ইসলাম শিক্ষা ক্লাস পড়লে বিব্রতবোধ করি। কিন্তু চাকরি যেহেতু করি, বাধ্য হয়ে ক্লাস নিতে হয়।’
শিক্ষাক্রমে যেহেতু ধর্ম শিক্ষা আছে, সেটা তো পড়াতে হবে। কিন্তু মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ধর্মের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি রয়েছে বিদ্যালয়ে। তাহলে কি শুধু ধর্মের জন্য একটি বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে? এটা কি বাস্তবসম্মত দাবি? আমি মনে করি, এটা বাস্তবসম্মত নয়।- প্রাথমিক শিক্ষা সংস্কারে গঠিত পরামর্শক কমিটির প্রধান ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ
শুধু শিক্ষক নন, অভিভাবকদেরও এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে। রাজশাহীর পবা উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচজন শিক্ষকের মধ্যে তিনজন সনাতন ধর্মাবলম্বী। একই বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়েন নজরুল ইসলামের মেয়ে। নজরুল একজন কৃষক। তবে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষক ইসলাম শিক্ষা ক্লাস কেন নিচ্ছেন, তা নিয়ে চরম আপত্তি তার।
নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা (হিন্দু শিক্ষক ইসলাম শিক্ষা পড়ানো) হয় নাকি! এ কারণে আমার চাচাতো ভাই তার ছেলেকে নূরানি মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। আমিও আগামী বছর মেয়েটাকে মোহনপুরের (পবার পাশের উপজেলা) একটি মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দেবো।’
সংগীত-চারুকলার শিক্ষক থাকলেও ধর্মের শিক্ষক নেই কেন?
‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫’-এ সংগীত ও চারুকলার জন্য বিষয়ভিত্তিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে একজন করে সংগীত ও একজন করে চারুকলার শিক্ষক থাকবেন। কিন্তু ধর্ম শিক্ষার জন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ পদ সৃষ্টি কেন করা হবে না—এমন প্রশ্ন অনেকের। বিশেষ করে ইসলামি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
প্রাথমিকে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হলে সবার আগে ধর্ম শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা উচিত ছিল বলে মনে করেন বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রাথমিকের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে সুরা মুখস্তের বিষয় আছে। একজন হিন্দু শিক্ষক কিংবা যিনি কোরআন সঠিকভাবে পড়তে জানেন না, তিনি কীভাবে সেটা পড়াবেন? ৯০ শতাংশের বেশি মুসলিমের দেশে প্রাথমিক স্তরে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয় রাখাটাও যেমন জরুরি, সে বিষয়ে পাঠদানের জন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়াটাও জরুরি।’
তবে ভিন্ন কথা বলছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা নাম-পরিচয় প্রকাশ করে গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষাক্রম ও গবেষণার দায়িত্বে থাকা একজন উপ-পরিচালক নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন করা হয়েছে। এখানে ধর্মীয় শিক্ষাকে মৌলিক করে দেখা হয় না। সরকার তথা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যে লক্ষ্য, তাতে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ভালো করে বাংলা-ইংরেজি পড়তে এবং গণিতে যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ শেখানোটা গুরুত্বপূর্ণ। আরবি-সংস্কৃত ভাষা বা ইসলাম বা হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে প্রাথমিক স্তরে বিশদ শিক্ষার লক্ষ্য নেই। সেজন্য আপাতত ধর্ম শিক্ষক নিয়োগের কোনো পরিকল্পনা নেই।’
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির মহাসচিব ইউনুস আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশের অধিকাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানকে ধর্মীয় মূল্যেবোধে বিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে চান। এটি প্রাথমিক স্তরে সেভাবে দেওয়া হয় না বলে অনেকে সন্তানদের মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দেন। প্রাথমিকে শিক্ষার্থীবিমুখ হওয়ার প্রবণতাও কমে আসবে যদি ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।’
ধর্ম শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা কতটা
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় বিষয়ে আবেগপূর্ণ। বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠী সন্তানকে ছোটবেলা থেকে ধর্মীয় বিষয়ে মৌলিক শিক্ষা দিতে চান বলে মনে করেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
ধর্ম শিক্ষক নিয়োগে বিভিন্ন পক্ষের দাবির বিষয়টি আমরা অবগত। আপাতত যে দুটি (সংগীত ও চারুকলা) পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, সেগুলোও প্রয়োজন। তারপরও আমরা এখন সব প্রাথমিকে কিন্তু এ দুই পদের শিক্ষকও নিয়োগ দিতে পারছি না।- প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান
ঢাকার বাড্ডার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা সপ্তাহে ইসলাম শিক্ষা বা অন্য ধর্ম শিক্ষার দুটি করে ক্লাস নিই। কিন্তু অধিকাংশ অভিভাবক আমাদের আরও বেশি ইসলাম শিক্ষার ক্লাস রাখার অনুরোধ করেন। এটা থেকে বোঝা যায়, অভিভাবকরা ধর্মীয় বিষয়ের শিক্ষাকেও প্রাথমিক স্তরের মৌলিক শিক্ষার মতো করে দেখেন। সেজন্য আমি মনে করি, ধর্ম শিক্ষকের প্রয়োজন আছে।’
বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষকের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন চাঁদপুরের হাইমচরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসির উদ্দীনও। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংগীত ও চারুকলার শিক্ষকেরও দরকার আছে, আবার ধর্ম শিক্ষকের প্রয়োজন আছে। তবে শুধু যে ইসলাম ধর্মের শিক্ষক নিলে সংকট নিরসন হবে তা নয়, হিন্দু ধর্ম শিক্ষকও তখন রাখতে হবে। আমি মনে করি, ধর্ম শিক্ষক প্রয়োজন, তবে তা সব ধর্মের শিক্ষার্থীদের জন্যই বিবেচনা করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে বৈষম্য করাটা ঠিক হবে না।’
ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহমেদ বলেন, ‘প্রাথমিকে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ হোক, এটা আমরা চাই। কারণ এর মাধ্যমে শিশুরা নীতি-নৈতিকতা আরও ভালো করে শিখতে পারবে। শিশুদের এ গুণ শেখানো খুবই জরুরি। দেখবেন, কোনো ধর্মে কিন্তু নৈতিকতাবিরোধী কিছু শেখানো হয় না। ফলে প্রাথমিক স্তরে সব ধরনের ধর্মীয় শিক্ষক থাকা জরুরি।’
মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মৌলভী শিক্ষক থাকতো। এখন সেটা নেই। এতে কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমছে। অথচ প্রাথমিকে উপবৃত্তি আছে, দুপুরের খাবার দেওয়া হচ্ছে, বৃত্তি পরীক্ষা আছে। এগুলো সুবিধা পেয়েও সন্তানকে পাশের নুরানি মাদরাসায় ভর্তি করাচ্ছেন অভিভাবকরা। এখন গানের শিক্ষক ও চারুকলার শিক্ষক নেওয়ায় যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আগামীতে প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকশূন্য হয়ে পড়বে। বিষয়টি নিয়ে এখনই প্রাথমিক অধিদপ্তরকে গভীরভাবে চিন্তা ও গবেষণা করা উচিত।’
ভিন্ন কথা বলছেন প্রাথমিক শিক্ষা সংস্কারে গঠিত পরামর্শক কমিটির প্রধান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষাক্রমে যেহেতু ধর্ম শিক্ষা আছে, সেটা তো পড়াতে হবে। কিন্তু মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ধর্মের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি রয়েছে বিদ্যালয়ে। তাহলে কি শুধু ধর্মের জন্য একটি বিদ্যালয়ে চারজন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে? এটা কি বাস্তবসম্মত দাবি? আমি মনে করি, এটা বাস্তবসম্মত নয়।’
ধর্ম বইয়ের কারিকুলামের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন অধ্যাপক মনজুর আহমদ্। তার অভিমত, ‘ধর্ম পড়ানোর জন্য সব বিদ্যালয়ে জানাশোনা শিক্ষক থাকেন। তাদের এবং যাদের নিয়ে ধর্ম পড়ানো যেতে পারে; যারা এ বিষয়ে আগে থেকে ভালো জানা-শোনা আছে; তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এ সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।’
কী ভাবছে সরকার?
ধর্ম শিক্ষক নিয়োগের দাবির বিষয়ে জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান চন্দ্র রায় পোদ্দার এবং সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবু নূর মো. শামসুজ্জামান জানিয়েছেন তারা বিষয়টি নিয়ে ‘অবগত’। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ধর্ম শিক্ষক নিয়োগে বিভিন্ন পক্ষের দাবির বিষয়টি আমরা অবগত। আপাতত যে দুটি (সংগীত ও চারুকলা) পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, সেগুলোও প্রয়োজন। তারপরও আমরা এখন সব প্রাথমিকে কিন্তু এ দুই পদের শিক্ষকও নিয়োগ দিতে পারছি না।’
‘তার মধ্যেই এখন যারা ধর্ম শিক্ষকের পদ সৃষ্টির দাবি তুলছেন, তারাও অভিভাবক। সে হিসেবে তারা দেশের প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের অংশীজন। সবার মতামত বিবেচনা করে তা পর্যালোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমাদের আর্থিক সক্ষমতার দিকটাও বিবেচনায় রাখতে হবে।’