Image description
 

প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানার আনোয়ারপুর গ্রামের পুতুল নামে এক নারীকে অবৈধভাবে স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

 

 

সোমবার রাতে সাংবাদিক ইলিয়াছের অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান ফিফটিন মিনিটসে প্রচারিত, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় বিএনপির নামে চাঁদাবাজি নিয়ে করা অনুসন্ধানে বক্তব্য দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুতুলকে তার নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

 

 

অনুসন্ধানে চুয়াডাঙ্গা জেলার শীর্ষ দুই বিএনপি নেতা শরীফ ও টরিক এর চাঁদাবাজি ও এলাকায় করা ভয়ংকর সব অপকর্মের তথ্য ও প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে পুতুল অভিযোগ করেছেন, তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান, শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তার সম্ভ্রম নষ্ট করেছে। নানা সময়ে পুলিশ ও বিএনপির উচ্চ পদস্ত বিভিন্ন নেতাদের কাছে গিয়েও এ ঘটনার কোন প্রতিকার পায়নি এই নারী।

 

 

অনুসন্ধানটি রাত ১০টার দিকে ইউটিউবে প্রচারিত হয়েছে। তবে, এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর মঙ্গলবার ভোরে পুলিশের একটি দল তার বাড়িতে অভিযান চালায়।

 

 

গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের সাথে থাকা একদল সন্ত্রাসী তাদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। একইসাথে, নারী পুরুষ নির্বিশেষে পরিবারের সব সদস্যদের বেধড়ক মারপিটও করেছে হামলাকারীরা। এতে আতঙ্কে রয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারটি।

 

পুলিশ বলছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দর্শনা থানার কামারপাড়া এলাকা থেকে আসমা নামের এক নারীকে তিনটি স্বর্ণের বারসহ আটক করে বিজিবি। গ্রেপ্তারের পর আসমা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, আনোয়ারপুর গ্রামের কিতাব আলীর মেয়ে পুতুল তাকে একটি প্যাকেটে করে স্বর্ণের বারগুলো দেন এবং সেগুলো কামারপাড়ার সামাদ নামে এক ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিতে বলেন।

 

পুলিশ আরও বলছে, ওই জবানবন্দির ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোরে অভিযান চালিয়ে আনোয়ারপুর গ্রামে পুতুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত সামাদকে পুলিশ এখনো ধরতে পারেনি।

 

পুতুলের গ্রেপ্তারের খবরে এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, পুতুলের নামে এর আগে কখনো কোনো মামলা ছিল না। তিনি স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িত এমন কোনো অভিযোগও এলাকায় শোনা যায়নি। তাই হঠাৎ করে তাকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তারের ঘটনায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

 

এলাকাবাসীর অনেকে মনে করছেন, সাংবাদিক ইলিয়াছের অনুসন্ধানে সরাসরি বক্তব্য দেয়ার কারণেই পুতুলকে ফাঁসানো হয়েছে। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে, চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার বাংলা এডিশনকে মুঠোফোনে জানান, পুতুলের বিরুদ্ধে একটি স্বর্ণ চোরাচালান মামলা থাকায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বক্তব্য দেয়ার কারণে ওই নারীকে আটক করা হয়েছে, এমনটা মনে করেন না তিনি।

 

সাংবাদিক ইলিয়াছের ওই প্রতিবেদনে আরও তুলে ধরা হয়েছে, ৫ আগস্টের পরেও দেশে চাঁদাবাজি, দখলবাজি, দুর্নীতি বন্ধ না হওয়া এবং বিএনপির কিছু নেতা-নেত্রী ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে জনগণকে জিম্মি করে রাখার বিষয়গুলো। বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গার শরীফ টরিক দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে বিএনপির নামে চাঁদাবাজি, অপহরণ, মাদক ও দখলবাজি ভয়াবহ তথ্য এই প্রতিবেদনের পর প্রকাশ্যে এসেছে।

 

ব্যবসায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাধারণ মানুষ কেউই তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের পালিত সন্ত্রাসীরা এখন শরীফ টরিকের ছত্রছায়ায় একই অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বিএনপি দল হিসেবে কলঙ্কিত হচ্ছে এবং জনগণ ক্রমশ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তাই প্রতিবেদনে, বিএনপিকে টিকিয়ে রাখতে হলে এ ধরনের হাইব্রিড চাঁদাবাজদের দল থেকে চিহ্নিত করে বাদ দেয়ারও দাবি জানান এই অনুসন্ধানী সাংবাদিক।