
ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর নীতি থেকে সরে এসে এবার নয়াদিল্লি চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে এক সুরে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতির বিরোধিতা করেছে। বিশেষ করে বাগরাম বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে ভারত। এ পদক্ষেপটি এসেছে এমন এক সময়, যখন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির নয়াদিল্লি সফরের প্রস্তুতি চলছে— যা হবে কোনো তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম ভারত সফর।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, মস্কোয় অনুষ্ঠিত ‘মস্কো ফরম্যাট কনসালটেশনস অন আফগানিস্তান’ বৈঠকে ভারত, পাকিস্তান, চীন, রাশিয়া ও আফগানিস্তানসহ ১০টি দেশ অংশ নেয়। বৈঠক শেষে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “আফগানিস্তান বা আশপাশের কোনো দেশে বিদেশি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের প্রচেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়।” যদিও বাগরামের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি, বিবৃতির ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দিকেই গেছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০০১ সালের পর থেকে বাগরাম ঘাঁটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের আফগান অভিযানগুলোর কেন্দ্রবিন্দু। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, তালেবানদের সঙ্গে আগের চুক্তির ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিটি “ফেরত পাওয়ার অধিকার আছে।” তবে তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ পাল্টা বলেন, “আফগানরা কখনোই তাদের ভূমি কারও হাতে তুলে দেবে না।”
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের অংশগ্রহণ এবং এই কঠোর বিবৃতি ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনার প্রতি স্পষ্ট বার্তা। একই সঙ্গে এটি পাকিস্তানের প্রতিও কূটনৈতিক ইঙ্গিত বহন করে— যে ভারত আফগান ভূখণ্ডে কোনো বিদেশি প্রভাব চায় না।
মস্কো বৈঠকে অংশ নেওয়া দেশগুলো আফগানিস্তানকে স্বাধীন, ঐক্যবদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, আফগান মাটি যেন কোনো দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি না হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আঞ্চলিক অর্থনীতি, বাণিজ্য, কৃষি, স্বাস্থ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আফগানিস্তানের অংশগ্রহণ বাড়ানো জরুরি— যাতে দেশটি টেকসই উন্নয়নের পথে এগোতে পারে।
মুত্তাকি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ অনুমতি নিয়ে ৯ থেকে ১৬ অক্টোবর ভারতের সরকারি সফরে আসছেন। তাঁর এ সফর দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক ভারসাম্যে নতুন অধ্যায় সূচনা করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।