Image description

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (রাকসু) নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ৯ দিন। বর্তমানে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা। নির্বাচনের মূল তারিখ পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর নির্ধারণ করার ফলে প্রচারণার শেষ সময়ও বাড়িয়ে ১৪ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত করা হয়েছে। এবার রাকসু নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে সর্বোচ্চ তিন পদ অর্থাৎ সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস)। তবে এই শীর্ষ তিন পদে কোনো একক প্যানেলকে এগিয়ে রাখছেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। নির্দিষ্ট দলীয় মতাদর্শের বাইরে শিক্ষার্থীদের অধিকাংশেরই চাওয়া, রাকসুতে সবদলের প্রতিনিধি থাকুক।

সর্বশেষ অর্থাৎ ১৯৮৯ সালের রাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে জয়লাভ করলেও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে জয়লাভ করেছিল ছাত্রলীগের সমর্থিত প্যানেল থেকে। ওই সময় ছাত্রদলের সমর্থিত প্যানেল থেকে ভিপি নির্বাচিত হন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বর্তমানে বিএনপি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর ১৯৮৯ সালে রাকসুতে ছাত্রলীগের সমর্থিত প্যানেল থেকে জিএস নির্বাচিত হন রুহুল কুদ্দুস বাবু এবং এজিএস পদে জয়ী হন আলমগীর হোসেন। তাই দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আগামী ১৬ অক্টোবর রাকসু নির্বাচনে কোনো একক প্যানেলের আধিপত্য দেখছেন না ভোটাররা।

ভিপি পদে যারা এগিয়ে

ভিপি পদে এবার বৈধ প্রার্থী ছিলেন ২০ জন। তবে শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল মিঠুসহ দুই প্রার্থী সরে দাঁড়ানোয় এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৮ জন। তবে সবাই আলোচনার কেন্দ্রে নেই, বরং কিছু প্রার্থীকে ঘিরেই ভোটারদের আগ্রহ বেশি।

ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নূর উদ্দিন আবির। তিনি বর্তমানে শাখা ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক। অন্যদিকে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ থেকে লড়ছেন মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, যিনি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি।

এ ছাড়া ‘অধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মেহেদী সজীব বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক। ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ থেকে ভিপি পদে লড়ছেন তাসিন খান, যিনি রাকসুর ইতিহাসে প্রথম নারী ভিপি প্রার্থী এবং স্টুডেন্ট রাইটস এসোসিয়েশন রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক।

অন্যদিকে ‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’ থেকে ভিপি পদে লড়ছেন ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি মেহেদী মারুফ এবং বামপন্থী ছয় সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ থেকে প্রার্থী হয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের রাজনৈতিক দলের কারণে নির্দিষ্ট কিছু নিশ্চিত ভোট রয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোট পেলে এগিয়ে থাকবেন তারা। এদিকে নারী ভোটারদের ভোট বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাসিন খানের।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের একটি আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, যদিও এজিএস প্রার্থীসহ কিছু প্রার্থী জোট থেকে সরে দাঁড়ানোয় নড়বড়ে হয়ে পড়েছে প্যানেলটির অবকাঠামো।

ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর ২০২৩ সালে ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) হামলার শিকার হয়েছিলেন। আবীর বলেন, “আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লড়াই করেছি। এবারও শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হয়ে কাজ করব। শিক্ষা, বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা ও নারীদের সাইবার নিরাপত্তা আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীদের রায় আমরা মাথা পেতে নেব।”

শিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, “আমরা সবার অংশগ্রহণে একটা ইনক্লুসিভ প্যানেল দিয়েছি। নারী শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক কর্মী, সংখ্যালঘু, আহত মুক্তিযোদ্ধা—সবাই আমাদের দলে রয়েছে। শিবিরকে ঘিরে যে মিথ প্রচলিত ছিল, তা ভেঙে গেছে। শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর আস্থা রাখবেন বলে আমি আশাবাদী।”

জিএস পদে এগিয়ে যারা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে জিএস পদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে নাফিউল ইসলাম জীবন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি রাবি শাখা ছাত্রদলের বর্তমান দফতর সম্পাদক। পাশাপাশি ছাত্রশিবিরের সমর্থিত প্যানেল থেকে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা। এছাড়াও ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেল থেকে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সালাহউদ্দিন আম্মার। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ছিলেন।

‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের জিএস পদে লড়ছেন রাজন আল আহমেদ। ক্যাম্পাসের বামপন্থী ছয় ছাত্র সংগঠনগুলোর সমর্থিত প্যানেল ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ থেকে কাউছার আহম্মেদও জিএস পদে আলোচনায় রয়েছেন। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) কোষাধ্যক্ষ। পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছেন ‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’ প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী আফরিন জাহান। তিনি উত্তরণ লেখক ও পাঠক সূতিকাগারের সাবেক সভাপতি ছিলেন।

এজিএস পদে এগিয়ে যারা

রাকসুতে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে লড়বেন মোট ১৬ জন। তাদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের জাহিন বিশ্বাস এষা, তিনি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ। ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলে এজিএস পদে লড়ছেন ‘স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক সোচ্চারের’ এর সভাপতি এস এম সালমান সাব্বির।

এছাড়াও ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেল থেকে লড়ছেন সাবেক সমন্বয়ক মাহাইর ইসলাম এবং ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ প্যানেলে লড়ছেন ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকার।

সারাবাংলা