
ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো হলে হলে গিয়ে তুলে ধরছেন ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা। এ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই। গতকাল শনিবার সরকারি ছুটির দিনে সকাল থেকেই হলে হলে গিয়ে তাঁরাও নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্রচারের শেষ সময়ে এসে বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যে এই আলোচনাও হচ্ছে, ছাত্রীদের ভোট ডাকসু নির্বাচনে জয়–পরাজয় নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে। বিভিন্ন প্যানেলের ইশতেহারেও ছাত্রীদের আবাসনসংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের বিষয়টি এবার গুরুত্ব পেয়েছে। ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার বিষয়টি সব প্যানেল থেকেই বলা হচ্ছে। ছাত্রীরা যাতে সাইবার বুলিংয়ের শিকার না হন, তা নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন সব প্রার্থী।
এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ভোটার ১৮ হাজার ৯৫৯ জন।
ছাত্রীদের ভোট ডাকসু নির্বাচনে জয়–পরাজয় নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবে। বিভিন্ন প্যানেলের ইশতেহারেও ছাত্রীদের আবাসনসংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের বিষয়টি এবার গুরুত্ব পেয়েছে। ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার বিষয়টি সব প্যানেল থেকেই বলা হচ্ছে। ছাত্রীরা যাতে সাইবার বুলিংয়ের শিকার না হন, তা নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন সব প্রার্থী।

ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি নিয়ে প্রতিদিনই কথা বলছেন বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা। ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান গতকাল দুপুরে ভোটের প্রচারে যান হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে ছাত্রদল কাজ করবে—এ বিষয়টিও ছিল।
বিজয় একাত্তর হলে দুপুরে প্রচার চালান বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের। প্রচারের ফাঁকে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচিত হলে ‘ওয়ান বেড, ওয়ান স্টুডেন্ট’ পদ্ধতি চালু করবেন তাঁরা।
একই হলে দুপুরে প্রচার চালায় ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। পরে এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের আবাসনসংকট নিরসন এবং স্বাস্থ্য ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে তাঁরা কাজ করবেন।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে গতকাল সকালে প্রচার চালান স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী উমামা ফাতেমা। প্রচারের ফাঁকে দুপুরে হলের বাইরে এসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রীদের ভোটকেন্দ্রে আনা বড় চ্যালেঞ্জ। মোট ভোটারের ৪৮ শতাংশ ছাত্রী। তাঁরাই ডাকসুর গতিমুখ নির্ধারণ করবেন। ডাকসুতে ছাত্রীরাই ব্যবধান গড়ে দেবেন।
উমামা ফাতেমা বলেন, বাস্তবায়ন করা যাবে না, এমন কিছু তাঁরা ইশতেহারে রাখেননি।ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রচারের শেষ দিন আজ রোববার। ভোট মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর)।
অপপ্রচার নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্ন করবে: ছাত্রদল
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘৃণার বিষবাষ্প ছড়ানো হচ্ছে, যা ক্যাম্পাসের নির্বাচনী পরিবেশকে বিঘ্ন করবে বলে মনে করে ছাত্রদল। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানলের এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী গতকাল বিকেলে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের কাছে এই মন্তব্য করেন। এর আগে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
সেই অভিযোগে অনলাইনে হেনস্তা, হয়রানি ও অপপ্রচারে লিপ্ত তিনটি ফেসবুক গ্রুপের কথা উল্লেখ করা হয়। এসব গ্রুপের কার্যক্রম বন্ধ এবং গ্রুপ পরিচালনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করা হয় লিখিত অভিযোগে।
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার সময় তানভীরের সঙ্গে ছিলেন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় (সাহস) ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান।
তানভীর আল হাদী বলেন, মাঠের রাজনীতিতে পেরে না উঠে ও শিক্ষার্থীদের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এ ধরনের কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের যে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী পরিবেশ, সেটিকে বিঘ্ন করবে।
নির্বাচনী বিতর্কে নানা প্রতিশ্রুতি ভিপি প্রার্থীদের

ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থীদের নিয়ে গতকাল বিকেলে নির্বাচনী বিতর্কের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) এই বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।
এই বিতর্কে ভিপি পদপ্রার্থীরা নিজ নিজ প্যানেলের ইশতেহারে উল্লেখ করা বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেন। এরপর বিতর্ক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা ভোটারদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তাঁরা।
একজন ভোটার প্রশ্ন করেন, যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে, তার কতটা পূরণ করা যাবে। জবাবে একজন স্বতন্ত্র ভিপি পদপ্রার্থী বলেন, প্রতিশ্রুতি পূরণে চেষ্টা করবেন।
কোনো ধরনের চাপ নেই

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের চাপ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি আরও বলেন, ব্যালট পেপার প্রস্তুত করা, ভোটকেন্দ্রের বুথ তৈরি করার কাজগুলো এখন হচ্ছে। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কাজও চলছে। নির্বাচনে যত স্বচ্ছতা আনা যায়, সেই বিষয়গুলো নিশ্চিত করছেন তাঁরা।
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি সবকিছু ভালো। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য বুথের সংখ্যা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, যে অভিযোগগুলো আসছে, সেগুলোর প্রতিকারে দিন-রাত কাজ করছেন তাঁরা।