Image description

সদ্য বিবাহিত এক কিশোরী। চোখে ছিল পুলিশ অফিসার হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু বাবার অকালমৃত্যু আর সংসারের টানাপোড়েনে সে স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়। শেষমেশ বাধ্য হয়েই বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। বলছিলাম ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার চাপাতলা গ্রামের রিনা আক্তার মনিরার কথা।

দশম শ্রেণির ছাত্রী মনিরা এখনো স্বপ্ন দেখে লেখাপড়া করে শিক্ষক হওয়ার। তাই বিয়ের পরও থেমে থাকতে চায়নি সে। নিজের ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দিতে স্কুলে যায় সে; কিন্তু সেখানেই বাধে বিপত্তি। গত ২০ জুলাই মাকে সঙ্গে নিয়ে মনিরা স্বরূপপুর কুসুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যায়, সেখানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মমিনুল রহমান তাকে ক্লাসে বসতে দেননি। বরং জানিয়ে দেন, ‘বিবাহিত মেয়েরা স্কুলে পড়তে পারবে না।’ মনিরা ও তার মা প্রধান শিক্ষকের কাছে অনেক অনুরোধ করলেও কোনো লাভ হয়নি।

এরপর নিরুপায় হয়ে মহেশপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দেন তারা। কিন্তু অভিযোগ দেওয়ার পরও মেলেনি কোনো সুরাহা। স্কুলে না যেতে পেরে ভেঙে পড়েছে মনিরা। তার ভাষ্য, আমি লেখাপড়া করে শিক্ষক হতে চাই। বিয়ে হয়েছে মানে এই না যে, স্বপ্ন শেষ। আমি স্কুলে ফিরে যেতে চাই। মনিরা চায়, আর দশটা শিক্ষার্থীর মতোই তারও যেন স্কুলে ফিরে লেখাপড়া করার অধিকার থাকে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রিনা আক্তার মনিরা ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার চাপাতলা গ্রামের মনিরুল ইসলামের মেয়ে।

ভুক্তভোগীর মা আফরোজা খাতুন বলেন, মনিরা লেখাপড়ায় মোটামুটি ভালো, তাই স্বামীর অনুমতি নিয়ে মনিরা আমাকে নিয়ে তার স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক তাকে ক্লাসে বসতে দেননি। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘বিবাহিত মেয়েরা স্কুলে পড়তে পারবে না।’

এ ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক প্রধান শিক্ষকের এমন মনগড়া আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা কোনো সরকারি নির্দেশনায় নেই যে, বিবাহিত শিক্ষার্থীরা স্কুলে পড়তে পারবে না।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত স্বরূপপুর কুসুমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ আইন করে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দিনেশ চন্দ্র পাল বলেন, ‘বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে একজন শিক্ষার্থীকে ক্লাস করতে দেওয়া হয়নি এমন একটি অভিযোগ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রধান শিক্ষককে ফোন করে সেই শিক্ষার্থীকে ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে বলেছি।’

এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন, ‘বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’