Image description

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। গতকাল বিকাল ৪টায়  আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে সারিতে অপেক্ষমাণ ভোটাররা বিকাল ৪টার পরও ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এরপর ফলাফলের অপেক্ষায় বিভিন্ন কেন্দ্রের সামনে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা অবস্থান করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে ভোট গ্রহণ নিয়ে প্রার্থীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন। এছাড়া চাকসুর ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে হাটহাজারীতে শিবিরের সঙ্গে বিএনপি’র ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।

দিনভর উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ ভবনে। ২৬টি পদের বিপরীতে ভোট দিতে গিয়ে ব্যালটে সিল দিতে সময় বেশি লাগায় বিভিন্ন কেন্দ্রে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হলেও ভোটদানে আগ্রহ হারাননি। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৫৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় বিকাল ৪টায়। এবারের নির্বাচন হয়েছে ওএমআর পদ্ধতিতে। নির্বাচনের ভোট গণনা সরাসরি দেখানো হবে এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে। এজন্য রয়েছে ১৪টি এলইডি স্ক্রিন। এ উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত ২২ বার যাতায়াত করছে শাটল ট্রেন। এছাড়া নগরের নগরের নিউ মার্কেট এলাকা ও ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্স থেকে সকাল ৯টা ও ১০টায় মোট ১৫টি বাস শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে আসে। ভোট শেষে দুপুর ৩টা, ৪টা ও সাড়ে ৫টায় এসব বাস শিক্ষার্থীদের নিয়ে শহরে ফিরে যায়।

ট্রেনে ক্যাম্পাসে আসা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ৩৫ বছর পর আমাদের চাকসু নির্বাচন। এটা যেমন আমাদের জন্য গর্বের তেমনি আমরা যোগ্য প্রার্থী বেছে নিতে চাই। বিজয় ’২৪ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ফাইরুজ বলেন, জীবনের প্রথম ভোট দিয়েছি। খুবই আনন্দ লাগছে। ৩৫ বছর পর হওয়া এই নির্বাচনে ভোট দিয়ে ইতিহাসেরও সাক্ষী হলাম। আশা করি এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সচল হবে। ভোট দেয়ার সময় ভোটারদের আঙুলে দেয়া অমোচনীয় কালি মুছে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় ও শিবিরের ভিপি প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি। ছাত্রদল-শিবিরের দেয়া কোনো অভিযোগের ব্যবস্থা নেয়নি নির্বাচন কমিশন। বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা অনেক অভিযোগ দেয়ার পরও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে।

ভোটকেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে ছাত্রদলের একাধিক ডেস্ক বসানো ও ভোটার লাইনে স্লিপ বিতরণের অভিযোগ করেছেন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমপ্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি। দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, এ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারা দেশের মানুষ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। তাই চাকসু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কমিশনের কাছে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানিয়েছি। কেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে ছাত্রদল দু’টি কেন্দ্রে দু’টি ডেস্ক বসিয়েছে। এছাড়া সংগঠনটির কয়েকজন প্রার্থী ভোটারদের স্লিপ দিয়েছেন। এদিকে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বহিরাগতের অবস্থান নেয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় এক নম্বর সড়ক ও হাটহাজারী এলাকায় বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের জড়ো হতে দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং রেলগেট এলাকায় রফিক ছাত্রাবাসের সামনে ২০-৩০টি মোটরসাইকেলসহ শতাধিক বহিরাগত অবস্থান করেন। 

এরমধ্যে হাটহাজারীর ফতেহপুরে বিএনপি’র সঙ্গে শিবিরের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে বিএনপি কর্মীরা হাটহাজারীতে জামায়াত কার্যালয় ভাঙচুর করে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সামনে শিবিরের এক নেতাকে ছাত্রদল মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভোটগ্রহণ চলাকালে দুই শতাধিক ভুয়া পরিচয়পত্র ধারীকে আটকে দেয়া হয়েছে। তারা শিক্ষার্থী পরিচয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশমুখ কাটাপাহাড় এলাকায় সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তাদের আটকে দেয়া হয়। এ বিষয়ে গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচনের শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া পরিচয়পত্র নিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে বহিরাগতরা। পরবর্তীতে তাদের আটকে দেয়া হয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, চাকসু নির্বাচনে হাতে লাগানো অমোচনীয় কালি উঠে যাওয়াসহ বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিবেশে বিকাল ৪টায় শেষ হয়েছে। এখন কেন্দ্র থেকে ব্যালটগুলো পৃথক করে ডিন কার্যালয়ে নেয়া হবে। সেখানে ক্যামেরার সামনে ভোট গণনা করা হবে। নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখা, পুলিশ, র‍্যাব, ফায়ার সার্ভিস, রিজার্ভ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, গোয়েন্দা সংস্থা, বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট। মাঠে রয়েছেন পাঁচজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১ হাজার ৫০ জন পুলিশ সদস্য এবং র‍্যাব’র সাইকেল ইউনিটের ৪০ জন সদস্য।

এদিকে চাকসু নির্বাচনের ভোটের ফলাফল গণনা করতে ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে বলে জনিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও আইটি সেলের প্রধান অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী। বলেন, যেসব ব্যালটে ভোটাররা ভোট দেবেন সেগুলো মেশিনে প্রি-স্ক্যান করা হয়েছে। প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজারের মতো পাতা আমরা টেস্ট করেছি। এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে- সবগুলো পাতা যেন মেশিন পড়তে পারে। একটা ব্যাপার নিশ্চিত করতে পারছি, মেশিন পাতাগুলো পড়তে পারবে। অন্য কোনো বাইরের একটি পাতা যদি এ মেশিনে ঢুকেও পড়ে, তাহলে তা মেশিন রিজেক্ট করবে। কারণ তা মেশিনে দেয়া আমাদের সিকিউরিটি কোডের বাহিরে। আমরা আশা করছি, ভোটগ্রহণ যখন শেষ হবে তখন ওএমআরগুলোর ডাটা রিড করতে পারবে। আমরা ওএমআরগুলো মেশিনে স্ক্যান করার পর দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে পরীক্ষা করে দেখবো। এতে বুঝতে পারবো, আমাদের মেশিন ঠিকমতো কাজ করছে। তিনি বলেন, আমাদের যদি ৮০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয় তাহলে স্ক্যানিং করতে আনুমানিক ৭ ঘণ্টার ওপরে সময় লাগবে। আমরা চেষ্টা করছি, দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতার আলোকে যাতে কোনো সমস্যা না হয়।