
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২১নং ছাত্র হলের একটি কক্ষে (পূর্বের নাম শেখ রাসেল হল) বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ৫৪ ব্যাচের (২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের) শিক্ষার্থীদের অন্ধকারে দাঁড় করিয়ে র্যাগিংয়ের ঘটনায় ১৬ ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারাও বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। রবিবার এ ঘটনার পর সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
র্যাগিংয়ের এ ঘটনাটি মূলত একই বিভাগের সিনিয়র কর্তৃক জুনিয়রদের মধ্যে ঘটেছে। এদিকে, সাময়িক বহিষ্কার হওয়া ১৬ জনের মধ্যে দুইজন শাখা ছাত্রশিবিরের কর্মী-সমর্থক বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। তারা হলেন- মো. তানভীর রহমান মুন ও আব্দুল্লাহ আল সাঈদ। র্যাগিংয়ের ঘটনার পর এই দুইজনের ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ছবি ফেসবুকে পাওয়া গেছে।
তবে শাখা ছাত্রশিবির দাবি করছে, সংগঠনের সঙ্গে র্যাগিংয়ে জড়িতদের কোনো যোগাযোগ নেই, এমনকি তাদের চিনেনও না। তাছাড়া তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেক শিক্ষার্থী ছবি তুলেছেন, এখন কেউ এই ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে পরবর্তীতে অপরাধ করলে তার দায় ছাত্রশিবির নেবে না বলে তারা জানান।
জানা গেছে, রবিবার বিভাগটির ৫৩তম ব্যাচের (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের) শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ২১নং হলের ৪০৩নং রুমে জুনিয়রদের র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠে। এর আগে ৫৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের প্রথমে রফিক-জব্বার চত্বরে ডাকা হয়। পরে তাদের ২১নং হলের ৪০৩ নম্বর কক্ষে যেতে বলা হয়। সেখানে ৫৪তম ব্যাচের ২০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হন।
আরও জানা গেছে, ঘটনার সময় কক্ষে প্রবেশের পর নবীনদের দুই সারিতে দাঁড় করানো হয়। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখতে বলা হয় এবং কক্ষের দরজা ও জানালাসহ সব আলো নিভিয়ে রাখা হয়। প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট অন্ধকার রুমে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় তাদের। এ সময় তাদের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন ও শৃঙ্খলা সম্পর্কিত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়।
এ ঘটনার পরদিন সোমবার উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানের নির্দেশক্রমে ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রণীত শৃঙ্খলাসংক্রান্ত অধ্যাদেশ ২০১৮’-এর ধারা ৪-এর (১) (খ) অনুযায়ী অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামানকে। সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মো. আল-আমিন খান সদস্য এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার (উচ্চ শিক্ষা ও বৃত্তি) লুৎফর রহমান আরিফ সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটিকে ২১ কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ ঘটনায় শাখা ছাত্রশিবিরের কর্মী-সমর্থক জড়িত কিনা, জানতে চাইলে জাকসুর সাধারণ সম্পাদক ও শাখা ছাত্রশিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যাদেরকে নিয়ে কথা হচ্ছে তাদের সাথে আমাদের সংগঠনের কোন যোগাযোগ নেই। এমনকি তাদের কেউ চিনেও না।
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান বলেন, ছেলেদেরকে আমরা কেউ চিনি না। তাদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের তিন হাজার শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানের ছবি। প্রোগ্রামটিতে কতজনই আমাদের সাথে ছবি তুলেছে, এখন কেউ আমাদের সাথে ছবি তুলে শেয়ার করে পরবর্তীতে অপরাধ করলে তার দায়তো আমাদের উপর বর্তাবে না। তারা যদি (র্যাগিংয়ের ঘটনায় জড়িতরা) ছাত্রশিবিরেরও হতো তাহলেও আমরা বিচার চাইতাম।