
কণ্ঠশিল্পী হিসেবেই তাঁর জনপ্রিয়তা। কুমিল্লার মানুষের মুখে পরিচয় ‘গায়ক আসিফ’ নামে। হ্যাঁ, সংগীতশিল্পী আসিফ আকবরের কথাই বলা হচ্ছে, বিসিবির নির্বাচনে যিনি এবার কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর। নির্বাচন করবেন বিসিবির পরিচালক পদের জন্যও।
গানের জগতে ক্যারিয়ার গড়লেও আসিফ আকবর একসময় ছিলেন পুরোদস্তুর ক্রিকেটার। নব্বই দশকের শুরুর দিকে ঢাকা প্রথম বিভাগ লিগে খেলেছেন ইয়ং পেগাসাসের হয়ে। আর কুমিল্লা লিগে তো খেলেছেন স্কুলজীবন থেকেই। নির্মাণ স্কুল ক্রিকেটে কুমিল্লা জিলা স্কুল ও আন্তকলেজ ক্রিকেটে ছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অধিনায়ক। একটা সময় খেলা ছেড়ে গানে মন দিলেও মাঠের সঙ্গে যোগাযোগটা হারিয়ে যেতে দেননি আসিফ।
গানের শো করতে আসিফ আকবর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। নিউইয়র্ক থেকে গতকাল রাতে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে তিনি জানিয়েছেন তাঁর বিসিবির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহের কারণ, ‘কুমিল্লার খেলাধুলার দারুণ ঐতিহ্য ছিল একসময়। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি—সব খেলায় আমাদের দাপট ছিল। অথচ ঢাকার এত কাছের জেলা হয়েও আমরা সব হারিয়েছি। কুমিল্লায় ৬ বছর ধরে ক্রিকেট লিগ হয় না, এটা ভাবা যায়! বিসিবিতে যদি আসতে পারি, সবার আগে আমার লক্ষ্য থাকবে কুমিল্লার ক্রিকেটকে আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া, যেন জাতীয় পর্যায়ে আমাদের প্রতিনিধিত্ব থাকে।’
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় জেলা ও বিভাগ থেকে আসা বিসিবির পরিচালকেরা নিজ এলাকার ক্রিকেটের উন্নয়নেই কোনো ভূমিকা রাখেন না। এদিক দিয়ে ব্যতিক্রম হতে চান আসিফ এবং সেটার আরও কারণও আছে। আসিফই বলেছেন, ‘কুমিল্লার ছেলেমেয়েরা এখন আর মাঠমুখী নয়। মাদক একটা ভয়ংকর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিশোর গ্যাং সৃষ্টি হয়েছে। এসব হয়েছে শুধু বাচ্চাদের মাঠমুখী করা যায়নি বলে। আমাদের সন্তানেরা খেলার জায়গা পায় না, অথচ আমরা স্টেডিয়াম ভাড়া দিই ঢাকার ফুটবল ক্লাবকে! কেন? আমি চেষ্টা করব মাঠে খেলা ফিরিয়ে কুমিল্লার ক্রিকেট এবং তরুণসমাজের জন্য কিছু করতে।’
শুধু কুমিল্লা নয়, বিসিবির পরিচালক হওয়ার সুযোগ পেলে চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলার ক্রিকেটেই অবদান রাখতে চান আসিফ, ‘কুমিল্লার পাশাপাশি নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদুপর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ পুরো চট্টগ্রাম বিভাগেই ক্রিকেট প্রতিভার অভাব নেই। আমি মনে করি প্রতিটি জেলার ক্রিকেট নিয়েই ভিন্ন কিছু করার সুযোগ আছে।’
আসিফ জানিয়েছেন, বিসিবির কাউন্সিলর হওয়ার আগ্রহ তাঁর নিজের তেমন ছিল না। কুমিল্লার সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটার ও সংগঠকদের অনুরোধেই শেষ পর্যন্ত কাউন্সিলর হতে সম্মত হয়েছেন তিনি, ‘ক্রিকেট আর ক্রিকেটারদের প্রতি সব সময়ই একটা আবেগ কাজ করে আমার। নিজে খেলেছি, খেলাটাকে ভালোবাসি...হয়তো সে জন্যই। তবে কাউন্সিলর হওয়ার বা বিসিবির নির্বাচন করার আগ্রহ আমার কখনোই ছিল না। এবার কুমিল্লার সংগঠক, সাবেক–বর্তমান খেলোয়াড়েরা মিলে আমাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন আমি যেন দায়িত্বটা নিই। সে কারণেই কাউন্সিলর হয়েছি, নির্বাচনও করব।’
৬ অক্টোবর বিসিবির নির্বাচন। তবে আসিফ আকবর জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন যুক্তরাষ্ট্রে বসেই, ‘এখানে আমার টানা ১৪টি শো আছে। দুটি হয়েছে, আরও ১২টি আছে। গান আমার পেশা, এটা তো ছাড়া যাবে না! এখান থেকেই আমি ই–ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেব। কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছি। তাঁরাও আমাকে আশ্বস্ত করছেন।’
বিসিবির নির্বাচনে আজ পরিচালক পদের মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। জমা দিতে হবে আগামীকাল।