Image description

শিশুরা জন্মের পর শেখে তার পরিবার থেকে বাবা-মা ও ঘরের বড়দের দেখেই গড়ে ওঠে তাদের আচরণ, মনোভাব ও জীবনের ভিত্তি। কিন্তু বড়রা অনেক সময় না বুঝেই এমন কিছু অভ্যাস অনুসরণ করেন, যা শিশুর ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব অভ্যাস তারা সঠিক ভেবে চর্চা করলেও বাস্তবে তা শিশুর মানসিক, সামাজিক ও শারীরিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুরা নরম কাঁদার মতো। তাদের যেভাবে গড়া হবে, তারা সেভাবেই বেড়ে উঠবে। ফলে বাবা-মা ও অভিভাবকদের সচেতন না হলে অজান্তেই সন্তানকে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। নিচে এমনই ৮টি সাধারণ অভ্যাস তুলে ধরা হলো, যেগুলো বড়রা না বুঝেই শিশুর জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেন।

১. শিশুদের বাধ্য করতে বাবা-মা কিংবা বড়রা অনেকসময় খাবার দিয়ে থাকেন। এই অভ্যাসের ফলে সময়ের সঙ্গে ছোটদের খাবারের ধরন বদলে যেতে পারে অথবা পরবর্তীতে কোনো কাজের পুরষ্কারস্বরুপ সে খাবার আশা করতে পারে। এটি ছোটদের জন্য মোটেও ভালো নয়। এছাড়া অতিরিক্ত খাবারে সন্তান অসুস্থও হয়ে পড়তে পারে।

২. ছোটদের জন্য প্রতিদিন ব্যস্ত রুটিন তৈরি করা উচিত নয়। তারা খেলাধুলা করতে পছন্দ করে। কোনো বাবা-মা যদি সারাদিন শিশুকে পড়াশোনার জন্য চাপ দিতে থাকে তা হলে তার খেলাধুলা কিংবা  নিজের সময় আর থাকে না। এতে তাঁর মস্তিষ্ক চিন্তা করতে পারে না। ফলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

৩. শিশুরা অনেকসময় আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়, কিন্তু বড়রা এটি মেনে নিতে পারেন না। কিন্তু পুরুষ মাত্রই কাঁদবে না বা মেয়েদের ঘরকন্নার কাজ শিখতেই হবে- এই ধরনের ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। বাবা-মায়ের উচিত নয় সন্তানদের আবেগ চেপে রাখতে শেখানো, বরং তাদের নিজেদের মতো করে বড় হতে দেওয়া উচিত। 

৪. হঠাৎ যে কোনো কারণেই ছোটদের মন ভেঙে যেতে পারে। তাই তাদের সঙ্গে বুদ্ধি করে মিশতে হয়। এছাড়া অন্যদের সাথে তুলনা দেওয়া উচিৎ নয়। যে ওই বাচ্চাটা এতো ভালো তুমি এমন কেনো? এগুলোর ফলে তাদের মনের উপর চাপ তৈরি হয়। অথচ বাবা- মা থেকে শুরু করে অনেকে সেটাই করে থাকেন।

৫. বর্তমান সময়ে বড়দের পাশাপাশি ছোটরা অনেক বেশি ডিজিটাল ডিভাইসে আসক্ত। বেশিক্ষণ মোবাইল বা ট্যাব ব্যবহারে তাদের যে চোখের ক্ষতি হয়, তা প্রমাণিত। অনেকসময় বাবা-মায়ের মোবাইল আসক্তির ফলে শিশুরা এতে আসক্ত হয়। ফলে বাবা-মা শিশুদের এর থেকে দূরে রাখতে ডিজিটাল ডিভাইস দিতে চায় না। এতে করে সন্তান প্রয়োজনীয় স্কিল শিখতে পারবে না। শিশুদের যেমন ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে রাখা যাবেনা তেমনই এটি যেন তাঁর ক্ষতির কারণ না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। 

৬. বড়রা যখন শিশুদের সবকিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন, তখন শিশুদের স্বাধীনতা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বিকাশ পায় না। এটি শিশুদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিতে পারে এবং তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে। তাই শিশুদের নিজেদের মতো করে অনেককিছু করতে দিতে হয়।

৭. যদি বড়রা শিশুদের কোনো কাজে সবার সামনে অযথা সমালোচনা করেন বা তাদের ভালো কাজের জন্য প্রশংসা না করেন, তাহলে শিশুদের আত্মবিশ্বাস কমে যায়। শিশুরা কোনো কাজের প্রচেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও প্রশংসা করতে হবে। এতে করে তাঁর কাজের এবং সফল হওয়ার আগ্রহ তৈরি হবে। 

৮. কোনো কাজ শিশুদের ভয় দেখিয়ে বা শাস্তি দিয়ে শেখানো উচিত নয়। এ ধরনের আচরণ তাদের মনে ভয়, আস্থাহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। তাদের কোনো কাজে সাহস দেওয়া এবং গঠনমূলক নির্দেশনা দেওয়া উচিত। ভয় দেখিয়ে কোনো কাজ করানোর ফলে ছোটদের ক্ষতি হয়। কিন্তু বড়রা হরহামেশাই এ কাজটি ছোটদের সাথে করে থাকেন।