
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংগীতশিল্পী মৌসুমী চৌধুরীর গাওয়া গান— ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’ সেই সময় প্রেরণা জুগিয়েছিল। ৩৬ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে একটি গণমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে সেই গান গাওয়া নিয়ে দুঃসময়ের কথা তুলে ধরেন এ সংগীতশিল্পী।
মৌসুমী চৌধুরী বলেন, আওয়ামী সরকারের আমলে আমরা কথা বলতে পারিনি। আমাদের কোনো বাক্স্বাধীনতা ছিল না। ফলে অনেক কিছু আমাদের সহ্য করতে হয়েছে। তিনি বলেন, এখন মনে হচ্ছে— বাক্স্বাধীনতা পেয়েও পাইনি। এখন হয়তো স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি, মুখটা আটকে ধরছে না কেউ, তবু আমরা স্বাধীন নই। আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেই যাচ্ছি।
‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’—এ গানটির গল্প জানতে চাওয়া হলে মৌসুমী চৌধুরী বলেন, ১৬-১৭ বছর থেকেই আন্দোলন হচ্ছে। আমি ২০২২ সালে বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে আন্দোলনে শামিল হয়েছি। গানটা রেকর্ড করা হয়েছিল ২০২৩ সালে। গানটি লিখেছেন আমার গুরু ইথুন বাবু।
এ সংগীতশিল্পী বলেন, রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশে গানটি গেয়েছি। এরপর গানটি নিয়ে পুরো দেশে ঘুরেছি। স্বভাবতই ফ্যাসিস্ট সরকারকে নিয়ে গানটি করা। সে ক্ষেত্রে জীবনের বড় ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছিলাম। যার কারণে আমাকে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে থাকতে হয়েছে।
মৌসুমী চৌধুরী বলেন, ২০২২ সালের পর থেকে কয়েকবার পালিয়ে থাকতে হয়েছে। তবে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের পর সবচেয়ে বেশি সময় ধরে পালিয়ে ছিলাম। তখন অনেক হুমকি পেয়েছিলাম, বাসা পরিবর্তন করতে হয়েছিল। গ্রামের বাড়ি থেকেও অনেক হুমকি পেয়েছিলাম। আমি বলব— সেই সময় থেকে এখন অনেক ভালো আছি। আমরা আরও ভালো থাকতে চাই।
২০২২ সালের গান ২০২৪ সালে ৩৬ জুলাই আন্দোলনে সাড়া জাগালো। এ প্রসঙ্গে মৌসুমী চৌধুরী বলেন, জুলাইয়ের আন্দোলনে গানটা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৬ জুলাই আবু সাঈদের যখন মৃত্যু হয়, তখন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। শিক্ষার্থীরা তো আমাদের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যৎ ঝরে পড়ে গেলে, এই খারাপ লাগাটা অন্য রকম। তখন পল্টনে আমরা আন্দোলন করছিলাম।
তিনি বলেন, একটা কাজে আমি যমুনা ফিউচার পার্কে গিয়েছিলাম। ওখানে আন্দোলনে আমার গানটা গাইছিল। শুনে খুব ভালো লেগেছিল। ৩ আগস্ট রাতেও রামপুরায় ছিলাম আমরা। ওই দিন ‘ক্ষমতা এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটা গানও ছেড়েছিলাম। ৫ আগস্ট ঘুম থেকে উঠেই আনন্দের খবরটা পেয়েছিলাম। আনন্দ মিছিলে বেরিয়ে পড়েছিলাম।
বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত—এ প্রসঙ্গে এ সংগীতশিল্পী বলেন, হ্যাঁ। আন্দোলনের প্রোগ্রামগুলো শুরুর পর মনে হয়েছিল, শুধু অস্ত্র ধরেই তো দেশের জন্য যুদ্ধ করা যায় না; গান, নাটিকা, আবৃত্তির মাধ্যমেও অনেক কিছু ফুটিয়ে তোলা সম্ভব।
তিনি বলেন, যদি আমার কণ্ঠই অস্ত্র হয়, তাহলে কেন আমি পিছিয়ে থাকব। কেন আমি যুদ্ধ করব না? এর পর থেকে বিএনপির সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত হয়ে গেছি। আমি কোনো পদপদবির আশায় কাজ করছি না। ভালোবেসে কাজ করছি। দেশের প্রতি ও দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকে কাজ করছি।
চলতি সপ্তাহে ‘এ যুদ্ধ কবে হবে শেষ’ এমন শিরোনামে একটি গান করেছেন। এ সময়ে সেই গানটি কেন করলেন? এর উত্তরে মৌসুমী চৌধুরী বলেন, কয়েক মাস ধরেই দেশ নানান ঝামেলা ও মারামারির মধ্যে যাচ্ছে। সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে গানটি করেছি।