গাছসহ ফসল নষ্ট করার অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের চৌকা সীমান্ত এলাকায় গতকাল শনিবার ফের উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী দুই প্রান্তের গ্রামবাসীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। ভারতীয় গ্রামবাসীদের ছোড়া ককটেল ও ইটপাটকেলে চার বাংলাদেশি তরুণ আহত হন। তাদের মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা সীমান্তে সতর্ক অবস্থান নেন।
সীমান্ত জুড়ে চরম উত্তেজনার মধ্যে গতকাল বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে চৌকা সীমান্তের শূন্যরেখায় বিজিবির সঙ্গে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়। এতে বিজিবির ৫৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া এবং ভারতের ১১৯ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট সুরাজ সিং নেতৃত্ব দেন। পরে লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় বিএসএফ দুঃখ প্রকাশ করেছে। যে গাছগুলো কাটা হয়েছে, তা অন্যায় হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে। এ ব্যাপারে বিএসএফের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেবে।এর আগে চৌকা সীমান্তের ওপারে ভারতের সুখদেবপুর সীমান্তে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ নিয়ে কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। তখন চৌকা সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়েছিল।
স্থানীয়রা জানান, সকালে শিবগঞ্জের চৌকা ও কিরণগঞ্জ সীমান্তের মাঝামাঝি এলাকায় দুই যুবক ঘাস কাটতে গেলে গমের ফসল নষ্ট করার অভিযোগ তুলে তাদের মারধর করেন ভারতীয়রা। এ নিয়ে সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে ভারতীয়রা বাংলাদেশে ঢুকে ১০ থেকে ১৫টি আমসহ বরইগাছের ডাল কেটে ফেলে এবং ভুট্টা, গমের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষিপ্ত হয়ে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ সীমান্তের কাছাকাছি জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় ভারতীয়রা দেশীয় অস্ত্র, তীর ও ইটপাটকেল, পাথর নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় তারা কয়েকটি বোমাসহ ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। ভারতীয়দের ছোড়া ইটপাথরের আঘাতে চার বাংলাদেশি আহত হন। তাদের মধ্যে বিনোদপুরের কালীগঞ্জের ফারুক নামে একজনকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। হয়। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, ফারুক চোখে আঘাত পেয়েছেন।
সীমান্ত এলাকার কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, ওরা (ভারতীয়রা) আমাদের ক্ষতি করার জন্যই বিএসএফকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে ঢোকেন। অস্ত্র নিয়ে একযোগে আমগাছ, বরইয়ের ডাল কাটতে শুরু করেন। সরিষা, গম ও ভুট্টার ফসল নষ্ট করেন। আমাদের এলাকার মানুষ সীমান্তের কাছাকাছি আসার আগেই তাদের সীমানায় চলে যান।সীমান্তবর্তী এলাকার তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গম কাটাকে কেন্দ্র করে ভারতীয়রা পরিকল্পিতভাবে দুপুর ১২টার দিকে বিএসএফকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে ককটেলসহ বোমা নিক্ষেপ করেন। তারা ৪০-৫০ বিঘা সরিষার ফসলও নষ্ট করেন। ভারতীয়রা তীর নিয়ে হামলা করেছেন। এলোপাতাড়ি পাথরসহ ইট নিক্ষেপ করেছেন।’ সীমান্তবর্তী কালীগঞ্জ গ্রামের মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সীমান্তে আমরা গ-গোল চাই না। শান্তিতে বসবাস করতে চাই। কিন্তু তারা উসকানি দিচ্ছে, গায়ের জোরে এগিয়ে আসছে। আমরা ওদের (ভারতীয়দের) সঙ্গে লড়তে তো চাইছি না। তারা আমাদের বাধ্য করছে।’
মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে সীমান্তে আবারও উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে চৌকাসহ আশপাশের সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থান নেয়। তারা প্রথমেই সীমান্তে স্থানীয়দের সামাল দিতে চেষ্টা করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া সীমান্তে অবস্থান নেন।বিকেলে চৌকা সীমান্তের শূন্যরেখায় বিজিবি-বিএসএফের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠক শেষে বিজিবির ৫৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘চৌকা ও কিরণগঞ্জ বিওপির মাঝামাঝি ১৭৭ সীমান্ত পিলারের কাছে আমাদের বাংলাদেশিদের কিছু আমগাছ ছিল। ভারতীয় নাগরিকরা সেই আমগাছ কেটে ফেলেন। এতে ভারতীয় ও বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় ভারতীয় ও বাংলাদেশি জনগণ শূন্যরেখা বরাবর দাঁড়িয়ে যায়। খবর পেয়েই আমরা বিজিবির জনবল বৃদ্ধি করি। পরে বিকেলে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক হয়েছে। সেখানে বিএসএফের কমান্ড্যান্ট এসেছিলেন। এ ঘটনায় বিএসএফ দুঃখ প্রকাশ করেছে।’
এ ঘটনায় কতজন আহত আছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কতজন আহত আছেন এই মুহূর্তে আমার কাছে পরিসংখ্যান নেই। তারা সীমান্তে তীর নিক্ষেপ করেছে। এটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। বিষয়টি বিজিবির উচ্চপর্যায়কে অবহিত করা হয়েছে। বিজিবি হেডকোয়ার্টার্স ও বিএসএফ হেডকোয়ার্টার্স এ বিষয়ে আলোচনা করবে।’
বিজিবির ৫৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেন, ‘শূন্যরেখায় এখন কোনো বিএসএফও নেই, ভারতীয় নাগরিকও নেই। আমাদের লোকজনও (সীমান্তবাসী) সরে এসেছেন। সীমান্ত পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।’