প্রতিদিন পাঠকের কাছে দেশের আলোচিত ঘটনা, রাজনৈতিক উত্তাপ, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সমাজের পরিবর্তন এবং বিশ্বমঞ্চের নতুন বার্তা তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো। তথ্যপিপাসুদের তথ্যের চাহিদা মেটাতে সময় সংবাদও দেশের প্রধান প্রধান সংবাদপত্রের গুরুত্বপূর্ণ শিরোনাম পাঠকের সামনে নিয়মিত তুলে ধরছে। এখান থেকে এক নজরে জেনে নেয়া যাবে দেশের প্রধান সংবাদপত্রগুলোর প্রতিবেদন।
দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় পত্রিকায় রোববার (১৬ নভেম্বর) প্রকাশিত কিছু খবর নিচে তুলে ধরা হলো।
অপরাধের নিউক্লিয়াস শেখ হাসিনা—যুগান্তরের প্রথম পাতার শিরোনাম এটা।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপরাধের নিউক্লিয়াস শেখ হাসিনা
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের নিউক্লিয়াস ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জুলাই আন্দোলনের সেই উত্তাল সময়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যার হুকুমদাতা হিসাবে সব অপরাধের দায় ভার-প্রসিকিউশন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে লাক্ষ্যপ্রমাণের মাধ্যমে তা উপস্থাপন করেছে। ৫টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জুলাই হত্যাসংক্রান্ত অপরাধের নিউক্লিয়াস হিসাবে শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করেছে প্রসিকিউশন।
১৪০০ আন্দোলনকারীকে হত্যা: হত্যায় উসকানি; প্ররোচনা ও নির্দেশদাতা: 'সুপিরিয়র ক্রমান্ড রেসপনসিবিলিটি' এবং 'জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ'-এসব অভিযোগ প্রমাণে প্রসিকিউশন ৮১ জন সাক্ষীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য, ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ, আলামত হিসাবে ৬৯টি অডিও ক্লিপ, ৩টি মোবাইল নম্বরের সিডিআর এবং ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়। মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হয় ১০৫ দিনে। যুক্তিতর্কের সমাপনী দিনে ভাইব্যুনালের কাছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে প্রসিকিউশন।

আগামীকাল সোমবার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক প্যানেল শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করবেন। এ রায় জানার জন্য সমগ্র জাতি উদ্গ্রীব হয়ে আছে। বিশেষ করে জুলাইয়ে নিহত শহীদপরিবার, আহতদের পরিবার ও জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত সব পক্ষই প্রয়েছে প্রতীক্ষায়। তাদের প্রত্যাশা, জুলাই আন্দোলনে নিরীহ ছাত্র-জনতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার দায়ে শেখ হাসিনার উপযুক্ত শাস্তি হতে হবে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিগত সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুন, মানুষের ভোটাধিকার হরণ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন, ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগে পৃথক তদন্ত ও বিচার শুনানি চলছে।
ব্যাংকে ‘পরিবারতন্ত্রে’র লাগাম টানছে সরকার—প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম এটি।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংক খাতে পরিবারতন্ত্রের লাগাম টানতে উদ্যোগী হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংশোধন করা হচ্ছে ব্যাংক কোম্পানি আইন, যেখানে পরিবারের সংজ্ঞা আরও বিস্তৃত করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি কমানো হবে একই পরিবার থেকে পরিচালকদের সংখ্যা এবং পরিচালকদের একটানা পদে থাকার সময়সীমা।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর একটি খসড়া তৈরি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিবারের সংজ্ঞা বিস্তৃত করা হলে এবং পরিচালকদের পদে থাকার সময়সীমা কমানো হলে কোনো ব্যাংক একটি পরিবারের কবজায় রাখা কঠিন হবে। এতে অনিয়ম-দুর্নীতি কমবে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, প্রিমিয়ার গ্রুপ, সিকদার গ্রুপসহ বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজেদের নিয়ন্ত্রণে।
গণভোট ও সনদ নিয়ে তর্ক থাকলেও মনোযোগ নির্বাচনে—দৈনিক ইত্তেফাকের প্রধান প্রতিবেদন এটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবেদনে বলা হয়, গণভোটের ‘সময়’ ও ‘প্রশ্নের ধরন’ এবং জারিকৃত ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ-২০২৫’-এর বিভিন্ন বিষয়ে তক্কাতক্কি থাকলেও সংশ্লিষ্ট সব রাজনৈতিক দলেরই এখন পূর্ণ মনোযোগ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে। বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), চরমোনাই পিরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, গণঅধিকার পরিষদ ও গণতন্ত্র মঞ্চসহ সব দল শুধু নির্বাচনমুখীই নয়, ভোটের মাঠে দৃশ্যমান সরব।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে ঘোষিত সিদ্ধান্তসমূহ এবং রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের জারিকৃত আদেশ অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গেই একত্রে পৃথক ব্যালটে গণভোট হবে; আগামী জাতীয় সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট-'নিম্নকক্ষ' ও 'উচ্চকক্ষ'; নিম্নকক্ষের নির্বাচন বিদ্যমান ব্যবস্থাতেই হবে; তবে, ১০০ সদস্যের 'উচ্চকক্ষ' গঠন হবে 'নিম্নকক্ষে' দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে।
হ্যাঁ-না নিয়ে দ্বিধায় বিএনপি প্রশ্নের পরিবর্তন চায়—দৈনিক সমকালের প্রধান সংবাদ এটি।
গণভোটের প্রশ্ন নিয়ে দ্বিধান্বিত বিএনপি। গণভোটের প্রশ্নের চার বিষয়বস্তুর মধ্যে কোনো এক বা একাধিক প্রশ্নে দ্বিমত থাকলে ভোটার কীভাবে মতামত জানাবে, তা পরিষ্কার নয় বিএনপির কাছে। এ অবস্থায় যেসব বিষয়ে জুলাই সনদে ঐকমত্য হয়েছে, সেসব বিষয়ে গণভোট আয়োজনের জন্য শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে আলোচনায় এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিন গণভোট আয়োজনে বিএনপি সাধুবাদ জানালেও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে দলে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। একদিকে সরাসরি বিরোধিতা করতে পারছে না, অন্যদিকে এর সমর্থনও করতে পারছে না। বিরোধিতা করলে জামায়াতসহ অন্য বেশ কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচন পেছানোর কৌশল নিতে পারে। আবার জনগণের সামনে ইমেজ সংকটে ফেলার প্রচেষ্টাও হতে পারে।

অন্যদিকে গণভোটে সমর্থন দিলে আগামীতে ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্র পরিচালনায় নানা জটিলতায় পড়তে পারে দলটি। এটিকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারকে অনেকটা ক্ষমতাশূন্য করার প্রক্রিয়াও মনে করছেন দলের কেউ কেউ। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি 'হ্যাঁ' নাকি 'না' ভোটের পক্ষে প্রচারে নামবে, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
কেন ৩ উপদেষ্টার পদত্যাগ চায় জামায়াতসহ ৮ দল—দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সংবাদ এটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ দফা দাবিতে আন্দোলনরত ৮ দলের তরফে নতুন দাবি যুক্ত করা হয়েছে। নিরপেক্ষতা হারানোর অভিযোগ তুলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইছে এই আট দল। পদত্যাগ দাবি করলেও তারা এই তিন উপদেষ্টার নাম প্রকাশ করেনি।
দলগুলো জানিয়েছে প্রথম পৃষ্ঠার পর সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তিন উপদেষ্টার বিষয় অবহিত করা হয়েছে। দলগুলোর সূত্র নেতারা জানিয়েছেন, তারা মনে করেন এই তিন উপদেষ্টা একটি দলের পক্ষে কাজ করছেন। এর মাধ্যমে তারা নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। এই অবস্থায় তাদের উপদেষ্টা পরিষদের রাখা উচিত নয়। এই তিন উপদেষ্টার বিষয়ে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ আট দল নিজেদের মধ্যে একাধিক বৈঠকে আলোচনা করেছে। আজ (রোববার) পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে বলে নেতারা জানিয়েছেন।

সূত্র জানায়, বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিকভাবে তিন উপদেষ্টার নাম প্রকাশ করা হতে পারে বা এই তিনজনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অফিসিয়ালি জানাতে পারেন। দলগুলোর সূত্র জানায়, জুলাই আন্দোলনে কাজ করা দুই তরুণ উপদেষ্টার বিষয়ে আট দল প্রবল আপত্তি তুলেছে। এ ছাড়া একজন সিনিয়র উপদেষ্টা আছেন এই তালিকায়। শিগগিরই এসব উপদেষ্টাকে অপসারণ করা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনরত আট দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।