
দুরবস্থায় পতিত হওয়া শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক একীভূত (মার্জ) হওয়ার আলোচনা হচ্ছে দীর্ঘ ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে। ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ ব্যাংক শুরু থেকেই আমানতকারীদের বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। তবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওই ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগকারীদের কী হবে, তা নিয়ে দীর্ঘ সময়েও নেই কোনো স্পষ্ট বার্তা। এতে সময়ে সময়ে কোনো এক গুঞ্জনকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশান্বিত হন, আবার কয়েকদিনের ব্যবধানে ভিন্ন গুঞ্জনে আশাহত হন।
এমন গুঞ্জন নির্ভর হয়েই ব্যাংকগুলোর শেয়ারে দফায় দফায় অস্থিরতা দেখা যায়, যা পুরো পুঁজিবাজারে দীর্ঘ সময় ধরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, একীভূতকরণের আলোচনা যখন শুরু হয়, তখন শেয়ারবাজারে গুঞ্জন ওঠে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ওই ব্যাংকগুলোর অভিহিত মূল্যে নতুন ব্যাংকের শেয়ার পাবেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে সেই গুঞ্জন ফিকে হয়ে নতুন করে প্রচার হয়, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ওই পাঁচ ব্যাংকের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে নতুন ব্যাংকের শেয়ার পাবেন। তবে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে গুঞ্জন ওঠে, যেহেতু ব্যাংকগুলোর সম্পদমূল্য ঋণাত্মক, সেহেতু একীভূত প্রক্রিয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কিছুই পাবেন না।
দীর্ঘ ছয় মাসের বেশি সময় ধরে দফায় দফায় এমন গুঞ্জন পাল্টালেও সরকার কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। তবে গত সোমবার (১৩ অক্টোবর) অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজার খুবই স্পর্শকাতর একটি জায়গা। এখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়কে কেন্দ্র করে পুরো বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বিবেচনায় ওই পাঁচ ব্যাংকের গুরুত্বও অনেক। তা সত্ত্বেও দীর্ঘ সময়ে বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট বার্তা নেই। এর ফলে কয়েকদিন পর পর ভিন্ন ভিন্ন গুজবে ওই শেয়ারগুলো পুরো বাজারে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। একীভূত ইস্যুতে বিনিয়োগকারীদের বিষয়টি দ্রুত স্পষ্ট করা উচিত। অন্যথায় চলমান অস্থিরতায় ব্যাংকগুলোর শেয়ারদর শূন্য কিংবা এক টাকার নিচে নেমে আসতে পারে। তখন সরকার সেই বাজারদরের ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার দিলেও তাতে তাদের বড় অঙ্কের লোকসানের বোঝা টানতে হবে।
এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পাঁচ ব্যাংক একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত যেটুকু অগ্রগতি তাতে মনে হচ্ছে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো প্যাকেজ নেই। তবে সিদ্ধান্ত যেটিই হোক, সেটি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া উচিত। আর যদি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো প্যাকেজ না রাখা হয়, সেটিও ন্যায়সংগত হবে না। কেননা, সাধারণ বিনিয়োগকারী তো আর ব্যাংক লুটপাটের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আমানতকারীদের স্বার্থ প্রথমে দেখে তারপরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়টি দেখা উচিত। এমনটি না হলে পুরো শেয়ারবাজারে দীর্ঘ সময় ধরে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বেশি তলানিতে নেমে যাবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছে, ব্যাংক একীভূতকরণ একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। যেহেতু একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলো সবদিক বিবেচনায় ঋণাত্মক রয়েছে, সেহেতু এত অল্প সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিষয়টি স্পষ্ট করা কঠিন। তবে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আগে অবশ্যই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়টি নিয়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
অন্যদিকে, বিএসইসি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের বিষয়টি স্পষ্ট করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠিতে ব্যাংকগুলোর দুরবস্থার জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোনোভাবেই দায়ী নন জানিয়ে তাদের স্বার্থ রক্ষায় কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়।
পাঁচ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা কেমন?
একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়াধীন পাঁচ ব্যাংকের প্রত্যেকটির সম্পদমূল্য বর্তমানে ঋণাত্মক রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ নিরীক্ষায় ব্যাংকগুলোর প্রকৃত চিত্র উঠে এসেছে।
এতে দেখা যায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি প্রকৃত সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ঋণাত্মক ৪৩৮ টাকা ৮১ পয়সা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এনএভিপিএস ঋণাত্মক ১১৭ টাকা ৭২ পয়সা, ইউনিয়ন ব্যাংকের এনএভিপিএস ঋণাত্মক ২২৪ টাকা ৯৭ পয়সা এবং এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এনএভিপিএস ঋণাত্মক যথাক্রমে ৭৫ টাকা ৭৪ পয়সা ও ২১৩ টাকা ৫১ পয়সা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকগুলোর উচ্চ পরিমাণে শ্রেণীকৃত ঋণ রয়েছে। পাশাপাশি বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতি রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাংকগুলোর সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক তারল্য সহায়তা দিলেও এগুলোর কোনো উন্নতি হয়নি। গ্রাহকদের আমানতের অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়ে তারল্য সহায়তার জন্য বারবার তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই ব্যাংকগুলোকে একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকগুলোর শেয়ারদর কত থেকে কত টাকায় নামলো?
অস্পষ্ট বার্তা ও একীভূতকরণ আতঙ্কে গত কয়েক মাসে ওই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারদরে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা গেছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ৮ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৮০ পয়সায়, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৩০ পয়সায়, ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার ৮ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৪০ পয়সায়, এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার ১১ টাকা থেকে ২ টাকা ৮০ পয়সায় এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার ১৩ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত নেমে যায়। বিভিন্ন গুঞ্জনে এখনো প্রতিদিন শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর শেয়ারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, একীভূত হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার পাবেন কি না, সেটি নিয়ে যেমন অনেক গুঞ্জন বিগত কয়েক মাসে বাজারে ছড়িয়েছে। তেমনি ব্যাংকগুলো একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় যাবে কি না, তা নিয়েও হয়েছে নানা ধরনের নাটকীয়তা। প্রথমে তিনটি ব্যাংক একীভূতকরণে রাজি হলেও দুটি ব্যাংক নিজ সক্ষমতায় পরিচালনায় আগ্রহ দেখায়। পরে অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক ওই দুই ব্যাংককেও একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার আসতে বাধ্য করে। এ বিষয়গুলো পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারদর তলানিতে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ ব্যাংকগুলোর শেয়ারদর আরও কমার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক হয়ত অপেক্ষা করছে। কমতে কমতে যখন ১ টাকা কিংবা তারও নিচে নেমে যাবে, তখন বাজারদরের ভিত্তিতে হয়ত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সামান্য কিছু শেয়ার দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানাবে। কিন্তু ওই পরিমাণ শেয়ার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কিছুই হবে না। এমনটা করা হলে ব্যাংক লুটেরাদের দায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘একীভূত হতে যাওয়া ওই পাঁচ ব্যাংকের দুরবস্থায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোনোভাবেই দায়ী নয়। তারা তো ব্যাংক পর্ষদে নেই। তারা ব্যাংকগুলোর বিগত বছরের ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো ভালো পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পক্ষে তো ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থা বিচার করে বিনিয়োগ করা সম্ভব ছিল না। তখন তো ব্যাংকগুলোর রেপুটেশন ভালো দেখেই তারা বিনিয়োগ করেছিল। এই দুরবস্থা তো সরকার পতনের পরে চিহ্নিত করা হয়েছে। ততদিনে শেয়ারবাজারের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের হাতে বড় পরিমাণ শেয়ার ধরিয়ে দিয়ে বের হয়ে গেছে। এখন তারা চাইলেও তো শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। কারণ ইতোমধ্যে বড় লোকসানে পড়ে গেছেন।’
কোন ব্যাংকে সাধারণ বিনিয়োগকারীর মালিকানা কতটুকু?
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ২০৮ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা রয়েছে ১২০ কোটি ৮১ লাখ। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৬৫ শতাংশের বেশি। এর বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে আরও ২৯ শতাংশ শেয়ার। মাত্র ৬ শতাংশ শেয়ার কোম্পানি উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৮৭ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার রয়েছে ৯৮ কোটি ৭৪ লাখ। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার সংখ্যা প্রায় ৩২ শতাংশ। এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫৩ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে। উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের মালিকানা মাত্র ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
ইউনিয়ন ব্যাংকের ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা ১০৩ কোটি ৬৩ লাখ। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মালিকানা প্রায় ৩২ শতাংশ। এর বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারী রয়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের মালিকানা ৫৪ শতাংশ।
এক্সিম ব্যাংকের ১ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা রয়েছে ১৪৪ কোটি ৭৬ লাখ। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৩৯ শতাংশ। আর প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ২৯ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা। কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে রয়েছে মাত্র ৩২ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ১৪০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা ১১৪ কোটি ২ লাখ। এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ১৮ শতাংশ। প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৭০ শতাংশ। উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের মালিকানা অংশ মাত্র ১২ শতাংশ।
বিশ্লেষক ও বাজার সংশ্লিষ্টরা কী বলছেন?
এ বিষয়ে নিরীক্ষক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘যেহেতু ব্যাংকগুলোর সম্পদ ঋণাত্মক হয়ে গেছে, সেহেতু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কিছুই পাওয়ার কথা নয়। তবে এক্ষেত্রে বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন। কেননা, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসিসহ এতগুলো রেগুলেটরি বডি থাকা সত্ত্বেও ওই ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা এতদিন প্রকাশ পায়নি। এখানে ওই সংস্থাগুলোরও ব্যর্থতা রয়েছে। তাই মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যদি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ নিশ্চিত না করেই একীভূতকরণ সম্পন্ন হয়, তাহলে দীর্ঘ সময়ের জন্য পুঁজিবাজারে তার একটি নেতিবাচক প্রভাব থাকবে।’
মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আশেকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সরকার ওই পাঁচ ব্যাংক একীভূত করতে ২০ হাজার কোটি টাকা মূলধনের জোগান দেবে। এতে আগামীতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে, যার নেতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারেও আসবে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে যদি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার দিকটি বিবেচনায় না নেওয়া হয়, সেটি দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজারে আস্থাহীনতার কারণ হতে পারে।’
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা কী?
এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। চিঠিতে ব্যাংকগুলোর বিক্রয় মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা, ঋণের বিপরীতে সংরক্ষিত আমানত ও ব্যাংকগুলোর বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের স্থায়ী-অস্থায়ী সম্পত্তি ক্রোক করে আদায়যোগ্য অর্থ বিবেচনায় নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার পরামর্শও দেওয়া হয়। এ ছাড়া শেয়ারের বাজারমূল্য বা ফেসভ্যালুর মধ্যে যেটি বেশি, সেটিকে বিবেচনায় নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের সুরক্ষা ও তার ভিত্তিতে একীভূতকরণের অনুপাত নির্ধারণের কথা বলা হয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত না করে এসব ব্যাংককে শেয়ারবাজার থেকে তালিকাচ্যুত না করার পরামর্শ দিয়েছে বিএসইসি।
এ বিষয়ে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেই আহ্বান জানিয়ে আমরা গভর্নরকে চিঠি দিয়েছি। এক্ষেত্রে বিএসইসির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাষ্য?
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন বলেন, ‘সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নতুন ব্যাংকের শেয়ার পাবেন নাকি পাবেন না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখন পর্যন্ত মার্জার হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হতে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগবে। মার্জ করতে গেলে এরকম অসংখ্য বিষয় সামনে আসবে। ‘ব্যাংক রেজ্যুলেশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫’ অনুযায়ী সবগুলো ধাপ মেনেই মার্জার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’
একীভূত প্রক্রিয়ার অগ্রগতি কতটা?
আর্থিক সংকটাপন্ন ওই পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে একটি ব্যাংক করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত ব্যাংকটির দুটি নাম সুপারিশ করা হয়েছে। একটি ‘ইউনাইটেড ইসলামিক ব্যাংক’, অপরটি ‘সম্মিলিত ইসলামিক ব্যাংক’। গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে এ প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর আওতায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে ‘রেজল্যুশন’ প্রক্রিয়ার সূচনা হতে যাচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবিত ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা, আর পরিশোধিত মূলধন থাকবে আনুমানিক ৩৫ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত নতুন ব্যাংকের মূলধন বিষয়ে প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী বেইল ইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার আমানত মূলধনে রূপান্তর করা যেতে পারে। বাকি ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার মূলধন হিসেবে দেবে।
উপদেষ্টা পরিষদে এ প্রস্তাব অনুমোদনের পর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ব্যাংকগুলো একীভূত করার ফলে কেউ চাকরি হারাবেন না এবং কোনো আমানতকারীও তার আমানত হারাবেন না। তবে ব্যাংকের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি।