দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ভারতের বামপন্থী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। বর্তমানে তিনি সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি তিনি ঢাকায় এসেছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আমন্ত্রণে, ছিলেন ১২ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত। এ সময় তিনি বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের ঢাকা সফরকালে তার সঙ্গে ভারতের চলমান রাজনীতি, বামপন্থী আন্দোলনের অবস্থা, এ অঞ্চলের রাজনীতি, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং ভারতের মাওবাদী উত্থান সম্পর্কে আলোচনা করেন সাপ্তাহিক ২০০০-এর সহযোগী সম্পাদক।
এই আলোচনাটিই সাক্ষাৎকার আকারে গ্রন্থনা করেছেন শানজিদ অর্ণব
সাপ্তাহিক ২০০০ : আমরা একটু তাকাই ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট পার্টির বিভক্তির দিকে। খুব বেশি পেছনে না গিয়ে দেখি সিপিআইয়ের (এমএল) দিকে। গঠনের পর এক সময় এমএল বিভিন্ন অংশে ভাগ হয়ে যায়। এ বিভক্তি এবং তখনকার পার্টি লাইন সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন।
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : সিপিআই (এমএল) গঠনের পর পর পার্টির ভিত মজবুত হওয়ার আগেই তীব্র সংগ্রামের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এবং অন্যদিকে নামে ভারত রাষ্ট্রের দমন-পীড়ন। তাৎক্ষণিকভাবে এটা ছিল একটা বড় বিপর্যয়। ১৯৬৯ সালে পার্টি তৈরি হওয়ার পর ’৭২-এ এসে এ বিরাট ধাক্কার মুখোমুখি হলো। এরপর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নেতাকর্মীদের এক করে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। এমনই পরিস্থিতিতে ১৯৭৪ সালের ২৮ জুলাই সিপিআই (এমএল) গঠিত হয়। তখন আমরা মাথায় রেখেছিলাম চারু মজুমদারের শেষ কথাটি। যে কোনো সঙ্কট আসুক না কেন পার্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ভবিষ্যতে আবারো বিপ্লবী পরিস্থিতি আসবে। কিন্তু সে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে না যদি পরিস্থিতিকে কাজে লাগানোর মতো জীবন্ত, প্রাণবন্ত ও শক্তিশালী কমিউনিস্ট পার্টি না থাকে। তাই পার্টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। একটা সময় ছিল আশির দশকের শুরুতে আমাদের এবং পিপলস ওয়ারের আন্দোলনগুলো ছিল এক ধরনের। গ্রামের গরিব মানুষের মধ্যে, ছাত্র-যুবাদের মধ্যে, রেডিক্যাল সংস্কৃতি কর্মীদের মধ্যে কাজ চলছিল। এ আন্দোলনের ওপর আগের মতোই রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন নেমে আসে। বিহারে, অন্ধ্রপ্রদেশে চলে গণহত্যা। এ রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন এবং গণহত্যার প্রেক্ষিতে পিপলস ওয়ার এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে সশস্ত্র সংগ্রামই হবে একমাত্র কাজ এবং আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকতে হবে। এভাবে সরকার দমনের মাধ্যমে পিপলস ওয়ার তাদের কৃষক আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন, বুদ্ধিজীবীদের মধ্যকার কাজ সবকিছুকে ঠেলে পাঠিয়ে দিল জঙ্গলে। আর এটাকে সূত্রবদ্ধ করে পিপলস ওয়ার সিদ্ধান্ত নিল জঙ্গলে আদিবাসীদের মধ্যে কাজ করাই একমাত্র কাজ। তারা তখন বেজ এরিয়া তৈরিতে চলে গেল। এভাবে ধীরে ধীরে তারা সিপিআইয়ের (এমএল) যে বড় আন্দোলন, কৃষক, রাজনৈতিক আন্দোলন, সশস্ত্র আন্দোলন গড়ে তোলার অর্থাৎ মেলানোর যে ব্যাপারটা ছিল তা থেকে সরে গিয়ে পিপলস ওয়ার শুধু বনাঞ্চল আর আদিবাসীদের মধ্যে কাজ করা যায় এমন জায়গায় চলে গেল। এখন ভারতবর্ষে এমএল ধারার আন্দোলন দুটি ধারায় প্রবাহিত। আমরা এমএল-এর মূল ধারা হিসেবে হিন্দি ভাষাভাষীদের মধ্যে, দক্ষিণ ভারতে, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহারে কাজ করছি। আর পিপলস ওয়ার গিয়ে মিলিত হলো মাওবাদী কমিউনিস্ট কেন্দ্র এমসিসির সঙ্গে। এমসিসি কখনই সিপিআইয়ের (এমএল) অংশ ছিল না। বিহারের পার্টি ইউনিটি মার্জ করল পিপলস ওয়ারের সঙ্গে আর পিপলস ওয়ার মার্জ করল এমসিসির সঙ্গে। আর এভাবে গঠিত হলো কমিউনিস্ট পার্টি মাওবাদী। তারা সিপিআই-এর নামটাই ত্যাগ করল। অন্যদিকে এমএল ভাঙার পর আরেকটি অংশ এমএল আইনকে ভুল বলে, চারু মজুমদারকে বিরোধিতা করে। সেটি হলো সন্তোষ রানার নেতৃত্বাধীন অংশ। যা-ই হোক বর্তমানে ভারতবর্ষের কমিউনিস্ট আন্দোলনে তিনটি ধারা বিরাজমান। একটি হলোÑ সিপিএম, সিপিআই। এরা দুটি ভিন্ন পার্টি হলেও তাদের অবস্থান একই। বাস্তব অবস্থা হলো তিনটি রাজ্যে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় ছিল। সেখানে সিপিএম বড় দল তারপর সিপিআই। কিছু প্রশ্নে সিপিআই সমালোচনা করলেও শেষ বিচারে সব সময় তারা সিপিএমের পাশে থেকেছে। জনগণ এ দুটি পার্টিকে পশ্চিমবঙ্গ, কেরালার শাসক পার্টি হিসেবে দেখে। এরপর তারা কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগী সংগঠনে পরিণত হলো। কেন্দ্রে সরাসরি শাসন না করলেও ১৯৯৬ সাল থেকে বিজেপি বাদে যারাই ক্ষমতায় ছিলেন তাদের সঙ্গে এদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এ দুটি পার্টি মানুষের আন্দোলনের পার্টির পরিবর্তে ক্ষমতার পার্টিতে পরিণত হয়েছে। আর সেটাও যে খুব জনগণের ক্ষমতা সেটা হয়তো বলা যাবে না। কারণ যেভাবে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম-এর বিদায় হলো বিশেষত সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম ও লালগড়ের ঘটনা। কেন্দ্রের নীতি বাস্তবায়নের মাসুল এবার দিতে হলো সিপিএমকে।
২০০০ : বিগত লোকসভার নির্বাচনের কিছু আগে আমি ব্যক্তিগতভাবে পশ্চিমবঙ্গে ছিলাম। সে সময় রিকশাচালক থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে সিপিএম হচ্ছে জনসমর্থন ছাড়া বিপুল সংগঠকসহ একটি বিরাট পার্টি আর তৃণমূল কংগ্রেস হলো সংগঠকবিহীন একটি পার্টি যার রয়েছে বিপুল জনসমর্থন। যাকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন তৃণমূলকে ভোট দেবেন সবাই বললেন, এবার ভোল পাল্টে দিতে হবে। এর পেছনে তারা খুব যুক্তিও দিতে পারছিলেন না। তো মানুষের মনোজগতের এ রকম পরিবর্তন হলো কেন?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : আমি এটাকে ঠিক যুক্তিহীন বলব না। কারণ বহুদিনের ক্ষোভ বাসা বেঁধে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। এখানে অনেক কারণ রয়েছে। বিশেষত সিপিএমের শেষ পাঁচ বছরের কার্যকলাপ। ২০০৫ সালে ৮০ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তারা ক্ষমতায় এলো। তখন তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করল। ২০০৬ সালের মে মাসে ১৬ বা ১৭ তারিখ (আমার ঠিক মনে নেই) আর ২৫ মে তারা সিঙ্গুরে জমি দখল করতে পরিদর্শনে গেল। তখন ২/৪ জন মহিলা ঝাঁটা হাতে ওই টাটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাল। এ দিকে ৮০ শতাংশ সমর্থনের সরকার, টাটার মতো বৃহৎ কোম্পানি আর অন্যদিকে সাধারণ মানুষ। সে দিন ব্যাপারটা খুব ছোট আর প্রতীকী হলেও তা পরবর্তীকালে বিরাট বড় পরিবর্তনের রূপ নেয়। সেখানকার মানুষের খুব বেশি জানা বোঝা নেই কিন্তু তারা জমিটা দেবে না। শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে সিপিএমের বিশ্বাসঘাতকতা। গণতন্ত্রবিরোধী আচরণ, দলবাজি সব মিলিয়ে এমন এক পরিস্থিতি হলো যে মানুষ আর এক মুহূর্তও সিপিএমকে সহ্য করার অবস্থায় ছিল না। এ রকম পরিস্থিতিতে এমনিতেই তৃণমূলের উত্থান হতো। এবার সেখানে সিপিএমের বিরোধিতায় বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের একটা অংশ তৃণমূলের এই উত্থানে সহযোগিতা করল। অবশ্য পরিস্থিতি যে জায়গায় পৌঁছেছিল যে তারা সহযোগিতা না করলেও তৃণমূলের এ উত্থান হতো। আমরাই পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের বাইরে থাকা একমাত্র দল যারা কখনো তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাইনি।
২০০০ : পশ্চিমবঙ্গে এই সন্ধিক্ষণে আপনাদের পার্টির ভূমিকা কী ছিল?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : আমাদের ভূমিকা স্বাধীন। আমরা বলেছি শুরু থেকেই। বিভিন্ন প্রশ্নে বামফ্রন্টকে বিরোধিতা করেছি। বিশেষ করে শেষ ৫ বছর সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, একের পর এক গণহত্যা, গণতন্ত্রবিরোধী আচরণ এগুলো তো কোনোমতেই সমর্থন করা যায় না। সেই সঙ্গে আমরা এটাও বলেছি যে, তৃণমূল ক্ষমতায় গেলে তারা কী করবে অর্থাৎ আজকে যা হচ্ছে গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ, লুম্পেন বাহিনী সংগঠিত হচ্ছে। ট্রেড, ছাত্র ইউনিয়নগুলো দখলের জন্য হামলা হচ্ছে। আমরা কিন্তু অবাক হইনি। তৃণমূলের পুরনো ইতিহাস বা ৭০-এর দশকে কংগ্রেসের ভ‚মিকা যদি দেখা যায় তাহলে আজকে পশ্চিমবঙ্গে যা হচ্ছে তা অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়। এটা মাথায় রেখেই আমরা বলেছি, আমরা তাদের সঙ্গে হাত মেলাব না। অর্থাৎ এ সন্ধিক্ষণে একমাত্র আমরাই স্বাধীন বামপন্থী অবস্থান নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি। আজকে আবার মনে হচ্ছে মানুষ বিশেষত গ্রামাঞ্চলে একটু কম কিন্তু শহরাঞ্চলে, শ্রমিক এলাকায় তৃণমূল নিয়ে মানুষের মোহমুক্তি শুরু হয়েছে। মানুষ প্রশ্ন করছে আমরা কী এমনটাই চেয়েছিলাম? এইটা কি আমাদের কাক্সিক্ষত পরিবর্তন? আজ পশ্চিম বাংলার কৃষক আত্মহত্যা ভীষণভাবে বেড়ে গেছে। মহিলাদের ওপর নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। অথচ সরকার এসব স্বীকারই করে না। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এসব সাজানো ঘটনা। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বিষাক্ত মদ খেয়ে মারা যাচ্ছে। মদের চক্র চালাচ্ছে তৃণমূলের মদদপুষ্ট লোকেরা আর মমতা যার পরিচিতি ছিল মানুষের যে কোনো সঙ্কটেই তিনি তৎক্ষণাৎ ছুটে যান সেখানে তিনি কলকাতায় থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ঘটনাস্থলে যেতে পারলেন না। যাওয়ার প্রয়োজনবোধ করলেন না। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতার এই যে চেহারা দেখা যাচ্ছে তাতে ব্যাপক মানুষের মধ্যে প্রশ্ন জাগাচ্ছে। এ পরিবর্তনই কি আমরা চেয়েছিলাম?
২০০০ : এ বিষয়ে আরো একটা ব্যাপার আমরা জানতে চাই। যতদূর জানি নির্বাচনের সময় মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সহযোগিতা করেছেন, ব্যক্তিগত বা সংগঠনগতভাবে যেভাবেই হোক না কেন। তারপর এখন যতদূর জানি তাদেরও এক ধরনের মোহমুক্তি ঘটেছে। মমতাকে সে সময় সহযোগিতা করাকে ভুল বলে মনে করছেন। এ বিষয়ে আপনার মত কী?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : এটা মাওবাদীদের পুরনো সমস্যা। অস্ত্র হাতে যতই তাদের বিরাট প্রতাপ মনে হয়, রাজনীতির ক্ষেত্রে তাদের চেহারাটা অসহায় মনে হয়। যেহেতু মাওবাদীরা নির্বাচন করেন না, রাজনৈতিক আন্দোলনে, প্রক্রিয়ায় অংশ নেন না সেহেতু তাদের একটা নিয়তি হয়ে গেছে শাসকশ্রেণির দলগুলো দ্বারা ব্যবহৃত হওয়ার। এখানে পশ্চিমবাংলায় যেটা হলো একইভাবে অন্ধ্রে তারা তেলেগু দেশমের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, তারপর তেলেগু দেশমের দমন-পীড়নের পর তারা কংগ্রেসকে সমর্থন দেয়। রাজশেখরের সরকারের সময় মাওবাদীরা খোলাখুলিই বলেছিল কংগ্রেসকে ভোট দাও। যে মাওবাদীরা ভোট বর্জনের কথা বলেন, তারা খোলাখুলিভাবে ভোট দিতে বলেছিলেন। ঠিক একইভাবে বিহারে লালুপ্রসাদ যাদবের ঝাড়খণ্ডে জেএনএফ দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে। উড়িষ্যায় একই অবস্থা। মমতার উত্থানের আগে শোনা যায়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এটাও শোনা যায়, সিপিএম তৃণমূলকে রোখার জন্য মাওবাদীদের ব্যবহার করেছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বড় আকারে তারা মমতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এই যে তারা ব্যবহৃত হচ্ছে, এ থেকে কিন্তু তারা শিক্ষা নিচ্ছে না। এই সহযোগিতার পরবর্তী ফল কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক। অন্ধ্রে মাওবাদীরা কংগ্রেসকে সহযোগিতা করে ক্ষমতায় আনলেন তারপর এই কংগ্রেসই তাদের ওপর নিপীড়ন চালাল। মাওবাদী নেতাকর্মীদের বাছাই করে হত্যা করা হলো। কিছুদিন আগে আজাদকে কথা বলার প্রক্রিয়া করে অন্ধ্রপ্রদেশে হত্যা করা হলো।
২০০০ : আপনি কি এটাকে ক্যাটাগরিক্যাল ক্লিনজিং বলবেন?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : অবশ্যই। সরকার আলোচনা, বোঝাপড়ার কথা বলে ডেকে এনে নেতৃত্বকে হত্যা করল। ঠিক একই ঘটনা ঘটল পশ্চিমবঙ্গে। মাওবাদীরাও শিক্ষা নিলেন না। মমতা বিধানসভা নির্বাচনের আগে লালগড়ে সভায় বললেন, তিনি আজাদ হত্যার তদন্ত চান। আর মমতা ক্ষমতায় আসার পর ঠিক একই কায়দায় কিষেনজী, যিনি এ অঞ্চলে মাওবাদীদের বড় নেতা ছিলেন তাকে হত্যা করা হলো। মমতা ক্ষমতায় আসার আগে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি ক্ষমতায় আসার পর বন্দি মুক্তির জন্য একটা কমিটি করা হলো। কমিটিতে ৫০০ জন রাজনৈতিক বন্দি মাওবাদী বা অন্য রাজনৈতিক বন্দির মধ্যে মাত্র ৭৮ বা ৮০ জনকে মুক্তি দেয়ার প্রস্তাব দিল কিন্তু সরকার একজন বন্দিকেও মুক্তি দেয়নি। অর্থাৎ মমতাও মাওবাদীদের সঙ্গে অন্য শাসক পার্টিগুলোর মতোই আচরণ করল। দুঃখের বিষয় অন্ধ্রপ্রদেশ বা অন্য রাজ্যের অভিজ্ঞতা থেকে তারা
শিখলেন না।
২০০০ : কিন্তু আমাদের একটা বিষয় জানার আছে। জঙ্গলের অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষের কাছে মাওবাদী আন্দোলন এত জনপ্রিয় কেন?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : আমার মনে হয়, এর মধ্যে একটু অন্য রকম ব্যাপার আছে। লালগড়ে যে আন্দোলন ছিল সেটা ছিল পুলিশি নির্যাতনের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের উত্থান, যেখানে মাওবাদীদের একটা ভ‚মিকা অবশ্যই ছিল কিন্তু মাওবাদীরা এত বড় একটা আদিবাসী বিদ্রোহকে সঙ্কীর্ণ জায়গায় নিয়ে গেল। মাওবাদীরা লালগড় আন্দোলনকে এক রকম হাতে ধরে অনেকটা নষ্ট করে দিল। আজকে ভারতবর্ষের চেহারাটা হচ্ছে এমনÑ ভারতের যেখানেই প্রতিরোধ হচ্ছে করপোরেট লুটের বিরুদ্ধে, জমি জোর করে কেড়ে নেয়ার বিরুদ্ধে কোথাও আদিবাসী বা কোথাও সাধারণ কৃষক। কিন্তু প্রচার হয়ে যায় এরা সবাই মাওবাদী। আসলে এটাকে মাওবাদী ব্যাখ্যা দিয়ে দমন করা হচ্ছে। কিন্তু মাওবাদীদের সত্যিকার ভ‚মিকাটা অত্যন্ত সীমিত। সিঙ্গুর আন্দোলনে মাওবাদীদের কোনো ভ‚মিকা ছিল না। সেখানে আমরা ছিলাম, সেখানে তৃণমূলও ছিল না। নন্দীগ্রামের আন্দোলন কৃষকদের স্বতঃস্ফর্ত আন্দোলন। সেখানে সিপিএম-এর মানুষই বিদ্রোহ করেছেন। তারপর মাওবাদীরা সেখানে ঢুকে একটা জায়গা করে নেয়। লালগড়ে তুলনামূলকভাবে মাওবাদীদের উপস্থিতি, নিয়ন্ত্রণ বেশি ছিল। মাওবাদীদের হাতে আন্দোলনটা কুক্ষিগত হওয়া এবং এরপর তাদের রাষ্ট্রের দমন, ফলে আন্দোলনটা মার খেয়ে যায়।
২০০০ : গত শতকে ভারতবর্ষের সশস্ত্র আন্দোলন বিশেষত চারু মজুমদারের নেতৃত্বাধীন সংগ্রামে গ্রামের কৃষক থেকে শহরের ছাত্র, বুদ্ধিজীবীদের বিরাট অংশগ্রহণ ছিল। শহরের অনেক ভালো কলেজের ছাত্ররা ক্লাসরুম ছেড়ে বেজ এলাকায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু এখন যদি আমরা মাওবাদীদের ম্যাপিং দেখি, রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া ম্যাপিংয়ে দেখা যায় দক্ষিণের বিন্ধ্যা অঞ্চল থেকে তরাই অঞ্চল পর্যন্ত বিরাট বনভ‚মি পুরোটাই মাওবাদীদের দখলে। গ্রাম বা শহরের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা যারা করে তাদের সঙ্গে মাওবাদীদের তেমন কোনো যোগাযোগ নেই। এ পার্থক্যটা কেন হলো বলে মনে করেন?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : চারু মজুমদার বা সিপিআইয়ের (এমএল) ওই সময়ের যোদ্ধাদের সঙ্গে আজকের মাওবাদীদের তুলনা করা ঠিক নয়। চারু মজুমদারের আন্দোলন ছিল একটা সামগ্রিক বিপ্লবী আন্দোলন। সে সময় সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের ওপর জোর থাকলেও শুধু তা নিয়েই কিছু একটা করার পরিকল্পনা তার মাথায় ছিল না। চারু মজুমদারের কথা ছিল ভ‚মিহীন দরিদ্র কৃষককে একটা রাজনৈতিক বিপ্লবী শক্তি হিসেবে দাঁড় করানো। সে জন্য ছাত্র-যুবকরা গ্রামে থাক। ছাত্র-যুবক-ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে একটা সেতুবন্ধ তৈরি হোক। এর মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে একটা বিপ্লবী অভ্যুত্থান/জোয়ার বয়ে যাক। আর আজকের মাওবাদীদের কাছে এই বিপ্লবী ব্যাপারটা চলে গেছে অনেক পেছনে। ভৌগোলিক সুবিধা আছে এমন এলাকায়, মিলিটারি আন্ডারস্ট্যান্ডিং থেকে তারা কাজ করছে। আজকে করপোরেট লুটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বিরাট জায়গা তৈরি হয়েছে। এখান থেকে মাওবাদীসহ সবাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু মাওবাদীদের নিয়ে যে প্রচারণা তা অনেকটাই প্রচার। তা সরকার কাজে লাগাচ্ছে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আক্রমণে অপারেশন গ্রিনহান্ট, বিভিন্ন কালা আইন যুক্তিসঙ্গত করে তোলার চেষ্টা করছে। যেখানে সবাইকে বা আদিবাসীদের মাওবাদী বলতে পারলে বিভিন্ন জায়গায় জমি দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নির্বিচারে গুলি চালানো যাবে। আরেকটা ব্যাপার হলো যখন ভারতের ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের মিটিং হয় তখন বিভিন্ন জেলার প্রশাসকরা তাদের এলাকাকে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকার তালিকায় ঢুকিয়ে দিতে চান। হয়তো কোনো জায়গায় ১০ বছরের মধ্যে মাওবাদীদের কাজ নেই কিন্তু একবার মাওবাদীদের তালিকায় ঢুকিয়ে দিতে পারলে সেখানে বিপুল ফান্ড আসে এবং সে ফান্ডের কোনো হিসাব দিতে হয় না। সেই সঙ্গে সেখানকার আমলাতন্ত্র এবং পুলিশ যা খুশি করার লাইসেন্স পেয়ে যায়।
২০০০ : এমএল মুভমেন্টের সঙ্গে সশস্ত্র সংগ্রামের একটা সম্পর্ক ছিল। আপনি বলছেন, ভারতে এখন আপনারাই এমএল মুভমেন্টের মূল ধারা। সে ক্ষেত্রে আপনারা কি ক্ষমতা দখলের পথ হিসেবে সশস্ত্র লড়াইকে পরিত্যাগ করেছেন অথবা রেখেছেন?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : রাষ্ট্রক্ষমতা কীভাবে দখল হবে সেটা শেষ বিচারে সশস্ত্র পথেই হবে না আন্দোলনের মুখে কোন শ্রেণি আত্মসমর্পণ করবে তা পরিস্থিতিই বলতে পারে। আমাদের সামনে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা রয়েছে। যেমন নেপালে সশস্ত্র প্রস্তুতি ছিল কিন্তু রাজতন্ত্রকে বিরাট গণআন্দোলনের মুখে সরে যেতে হয়। সশস্ত্র সংগ্রাম আমাদের কাছে আলাদা কোনো এজেন্ডা নয়। মানুষের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে জমি দখলের প্রচেষ্টা রোধের আন্দোলন হোক, কর্মসংস্থানের আন্দোলন, মর্যাদার আন্দোলন হোক, আমাদের বিভিন্ন মাত্রায় সহিংসতার মুখে পড়তে হয়। কোথাও মাফিয়াতন্ত্র, প্রাইভেট আর্মি, আরএসএস-এর বাহিনী, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর আক্রমণে আত্মরক্ষার জন্য মানুষ অস্ত্র ধরতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্র দখলের জন্য আক্রমণাত্মক কারণে অস্ত্র ধরার কথা আমরা এ মুহ‚র্তে বলছি না। কিছু আন্দোলনকে বাঁচাতে, নিজেকে বাঁচাতে অস্ত্র ধরার দরকার হলে তা ধরা যেতে পারে।
২০০০ : সশস্ত্র আন্দোলনকে কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতা দখলের একটি পথ বলে মনে করেন কি?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : সেটা তো অবশ্যই। কোনো শাসক শ্রেণিই স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে যায় না। এমনকি নির্বাচনে ৮০ বা ৯০-এর দশকে আমরা দেখেছি যে, ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলে একজন আদিবাসী বা দলিত যে স্বাধীনভাবে তার ভোট দিতে পারবে বা তার ভোটকেন্দ্র যে দখল হয়ে যাবে না তার নিশ্চয়তা নেই। সংবিধানে লেখা থাকলেও ভোট প্রদানের এ স্বাধীনতা নেই। ভোট রক্ষার জন্য সশস্ত্র প্রতিরোধ দরকার হতে পারে। বাস্তবে নির্বাচন, সশস্ত্র সংগ্রাম, অভ্যুত্থান এগুলো মিলেমিশে থাকে। শেষ বিচারে কী মাত্রায় কোন ভারসাম্য তৈরি হবে তা এখনই বলা যাবে না। এ ছাড়া অনেক রাজনৈতিক দলও হিংসা প্রয়োগ করে। বিহারে কংগ্রেস, বিজেপি অন্য সবার তুলনায় আমাদের পার্টিই সব থেকে কম হিংসা প্রয়োগ করে।
২০০০ : এক সময় এদেশের সশস্ত্র বামপন্থীরা দেশের যে কোনো অঞ্চলে সশস্ত্র শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা রাখত। বর্তমানে দু-একটা ভাগ চোরাগোপ্তা হামলার সামর্থ্য রাখে কিন্তু সামগ্রিকভাবে জনগণের আন্দোলনে পুলিশের হামলার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অবস্থা বাংলাদেশের কমিউনিস্টদের নেই…
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : আসলে সশস্ত্র শক্তি তো পার্টির অগ্রাধিকারের ওপর নির্ভর করে না। কোনো পরিস্থিতিতে সশস্ত্র সংগ্রামের দরকার হলে সেখানে জনগণের মধ্য থেকেই সে শক্তি উঠে আসে। কিন্তু এখন ভারতবর্ষের পরিস্থিতি তা নয়। মাওবাদীরা যদি মনে করে তারা একটি আর্মি পরিচালনা করে এবং ক্ষমতা দখলের দিকে এগোচ্ছে কিন্তু আমার মনে হয় ভারতের পরিস্থিতি তা নয়। মাওবাদীদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিছু ক্ষমতা থাকলেও সামগ্রিক একটা রাজনৈতিক আন্দোলন প্রতিরোধ, যা আজকের ভারতে দরকার সেটা করছে না। গত দুদশক ধরে ভারতে বাজারকেন্দ্রিক মৌলবাদী যে নীতি তার বিরুদ্ধে একটা বড় জনমত তৈরি হয়েছে। আজ কৃষক আত্মহত্যা করছে, কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, শ্রমিক বেকার হচ্ছে, মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি, করপোরেট লুট, খুচরা ব্যবসায় ওয়ালমার্ট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ইত্যাদি সবই বড় বহুজাতিক কোম্পানি নিয়ে নেবে এসবের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষ একটা বিরাট গণআন্দোলনের অপেক্ষায় আছে। আমেরিকায় অকুপাই আন্দোলন, মধ্যপ্রাচ্যে আরব বসন্ত, ইউরোপে বামপন্থীদের উত্থান হচ্ছে। আমার মনে হয় এসব গণআন্দোলনের মধ্যে প্রগতিশীলদের অংশ নিতে হবে।
২০০০ : আমরা নেপালের পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখব? একটা সময় প্রচন্ড অংশ সমগ্র আন্দোলন করছিল। এই অংশটি মাওবাদী হিসেবেই পরিচিত। ভারত বা বাংলাদেশের মাওবাদী আন্দোলনকারীদের সঙ্গেও তাদের এক রকম তাত্তি¡ক বা সাংগঠনিক যোগাযোগ ছিল। নেপালে বিরাট এক গণআন্দোলনের মাধ্যমে রাজতন্ত্রের পতন হলো তারপর তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় গেল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে প্রচন্ড নেতৃত্বাধীন পার্টি ভাঙনের মুখে। নেপালের পার্টির এ পরিণতিকে কীভাবে দেখছেন?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : নব্বইয়ের দশকে ইউএমএল গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে মাওবাদী, ইউএমএল এবং নেপালি কংগ্রেসের মিলিত গণআন্দোলনে রাজাকে পিছু হটতে হলো। কিন্তু এরপর সংবিধান লেখার প্রক্রিয়া পেছনে চলে গেল এবং সরকার চালানোর প্রক্রিয়া সামনে চলে এলো। প্রধানমন্ত্রী হলেন অনেকে। মানুষ আশাহত। প্রচন্ডের পার্টির বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ কিছু অভিযোগ উঠছে অর্থাৎ কমিউনিস্টসুলভ যে আচরণ তা প্রতিফলিত হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম ভারতের সংবিধানের চেয়েও গণতান্ত্রিক সংবিধান সেখানে লেখা হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনো সংবিধান লেখা হলো না। নেপালের অভিজ্ঞতা বলছে বিপ্লব একটা দীর্ঘস্থায়ী ব্যাপার। শুধু পুরনো শাসক শ্রেণিকে সরিয়ে দেয়া নয়, বরং জনগণের বিকল্প সব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করা। আমরা আশা করি ইউএমএল এবং মাওবাদীরা একত্রিত হলে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে।
২০০০ : একটা সরাসরি প্রশ্ন। প্রচন্ডের পার্টির একটা অংশ তাকে বিশ্বাসঘাতক বলছে। আপনি কী বলবেন?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : এটা তাদের ভেতরকার ব্যাপার। আমার মনে হয় নেপালের মানুষের যে আশা ছিল, তা পূরণ হয়নি। প্রচন্ডর পার্টির ওপর মানুষের আশা বাস্তবায়িত হয়নি। এগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
২০০০ : ভারতের সংবিধান অনুযায়ী তো সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধিত হতে হয়। আপনাদের দল কি ভারতের নিবন্ধিত দল?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : হ্যাঁ। আর নিবন্ধের কারণেই লিবারেশন অংশটুকু বন্ধনীর মধ্যে নিতে হয়েছে। ভোট পাওয়ার হার অনুযায়ী কিছু পার্টিকে রাজ্য পার্টি এবং কাউকে জাতীয় পার্টি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন কমিশন এ ঘোষণা দেয়। আমরা স্বীকৃতি পেয়েছি দুবার। একবার আসামে ভালো ফলের পর রাজ্য স্তরের স্বীকৃতি পেয়েছি। আমরা বিহারে রাজ্য স্তরের স্বীকৃতি পেয়েছি। পরবর্তী নির্বাচনে ভোটে ফল খারাপ হওয়ায় সে স্বীকৃতি এই মুহূর্তে নেই। স্থগিত আছে। তবে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত রেজিস্টার্ড পার্টি।
২০০০ : ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনে এখন কতগুলো দল সক্রিয় আছে?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : এক্ষেত্রে আমি বলব তিনটি ধারার কথা। সিপিআই, সিপিএম একই অবস্থান নিয়ে রাজনীতি করে। আমরা ছাড়া সিপিআই (এমএল) নাম নিয়ে আরো কিছু গ্রুপ কাজ করছে। অর্থাৎ এমএল ধারা আর একটা হলো মাওবাদী ধারা। অর্থাৎ সরকারভিত্তিক সিপিএম মডেল, বড় গণআন্দোলনের ভিত্তিতে আমাদের একটা বিপ্লবী ধারা আছে আর সশস্ত্র কার্যকলাপের ভিত্তিতে মাওবাদী ধারা আছে।
২০০০ : এসইউসিআই এবং ফরোয়ার্ড ব্লককে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : সাম্প্রতিককালে এসইউসিআই তৃণমূলের সঙ্গে মিলে নির্বাচনে গেছে। এটা পশ্চিমবাংলার ব্যাপক বামপন্থী মানুষের ভালো লাগেনি। এভাবে বামফ্রন্টের ছোট শরিকরা যেমন সিপিআই কিছু প্রতিবাদ করলেও সব সময় সিপিএম-এর নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। এবার বামফ্রন্টের পতনের দায় যদি সিপিএম-এর হয় তাহলে ছোট দলগুলোরও দায় আছে।
২০০০ : শ্রীলঙ্কায় কি আপনাদের কোনো সমমনা পার্টি আছে?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : খুব সমমনা এমনটা বলব না। তবে কিছু পার্টির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে। বিশেষ করে দ্য ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। শ্রীলঙ্কায় যেভাবে সামরিক কায়দায় মানবাধিকার লক্সঘন করে এলটিটিইকে দমন করা হলো আমরা মনে করি এটা যুদ্ধাপরাধ। এখন পরিহাসের বিষয় হলো দুনিয়ার সব থেকে বড় যুদ্ধাপরাধী আমেরিকা। তারাই এখন শ্রীলঙ্কায় যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে প্রস্তাব আনছে। এরপর এখন শ্রীলঙ্কায় জাতিসত্তার আন্দোলন, অন্যান্য আন্দোলন কীভাবে নতুন করে দাঁড়াবে তা সময়ই বলে দেবে।
২০০০ : এবার আমরা একটু স্বপ্নভঙ্গের দিকে তাকাই। ৯০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন। চসেস্কুর পতন দিয়ে শুরু আর গর্বাচেভ দিয়ে শেষ। সেই ঘটনাবলীকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : আমি ঠিক এটাকে স্বপ্নভঙ্গ বলতে চাই না। এটা হঠাৎ করে ঘটেনি। এখানে পার্টির মধ্যেই আমলাতান্ত্রিক বিচ্যুতি গড়ে উঠেছিল। গণতন্ত্র সঙ্কুচিত হয়েছিল। সেখানকার ব্যাপক মানুষের সোভিয়েত ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছিল। সেখানকার অর্থ ব্যবস্থায় অর্থাৎ সুপার পাওয়ার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়ল। এতে সেখানকার মানুষের কল্যাণের যে অর্থনীতি তা উপেক্ষিত হতে শুরু করে। অনেক কিছু মিলিয়েই সে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। আমার মনে হয় এটা একটা অভিজ্ঞতা। অর্থাৎ কেবল ক্ষমতা দখলেই বিপ্লব হয় না। সে ক্ষমতা জনগণের জন্য প্রয়োগ করা। নিত্যনতুন প্রশ্নের সমাধান করা অর্থাৎ এটা একটা গতিশীল প্রক্রিয়া। আজকের যুগে কৃষি, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, শিল্প উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে নতুন মডেল নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। অর্থাৎ এটা একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আজ চীন পুঁজিবাদে অগ্রসর হচ্ছে, গণতন্ত্র খর্ব হচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা। সম্প্রতি নেপালে যা হলোÑ লাতিন আমেরিকায় যা হচ্ছে সবই নতুন অভিজ্ঞতা। পুঁজিবাদ তৈরি হয়েছে কয়েকশ বছর ধরে। এখনো পুঁজিবাদ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কখনো তারা অ্যাডাম স্মিথকে, কখনো কেইনসকে অনুসরণ করছে। আবার নিও লিবারেল পলিসিতে যাচ্ছে। এভাবে চারশ বছরের পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্রের একশ বছরও হয়নি। এখনো তার শৈশব। এভাবে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে সোভিয়েত বা চীনের চেয়েও উন্নত সমাজতন্ত্র তৈরি হবে এবং পুঁজিবাদ অপসারিত হবে।
২০০০ : ইন্দো-চীন মানে লাওস, ভিয়েতনাম এ অঞ্চলের সমাজতান্ত্রিক রূপান্তরকে আমরা কীভাবে দেখব?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : অবশ্যই এটা তাদের নিজেদের রূপান্তর। অন্য দেশ থেকে আমরা উৎসাহ, প্রেরণা নিতে পারি। কিন্তু নিজের দেশের ভেতরে শেকড় মজবুত হতে হবে। এখানে ভিয়েতনাম, কিউবা সবারই নিজস্ব ইতিহাস আছে। বিভিন্ন দেশের বিপ্লবের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা।
২০০০ : কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল ভেঙে যাওয়াতে কি আপনি মনে করেন বড় ক্ষতি হয়েছে?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : না, আমি তা মনে করি না। এক সময় প্রয়োজন থেকেই আন্তর্জাতিকের সৃষ্টি হয়েছিল। আজকে একটি দেশের বিপ্লবের মডেলকে আদর্শ মনে করার অবস্থা নেই। পারস্পরিক বোঝাপড়া, সমান্তরালভাবে কমিউনিস্ট আন্দোলন ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। তবে আজকের ঐক্যের জন্য আগের আন্তর্জাতিকের অভিজ্ঞতা লাগবে আমাদের।
২০০০ : ৫০-৬০ বছর আগে ভারত এবং বাংলাদেশ একই ভূখণ্ড এবং শাসনব্যবস্থার অধীন ছিল। সাম্প্রতিক এ দুদেশের সম্পর্কে দুটি আলোচিত বিষয় আছে। একটি ট্রানজিট এবং অন্যটি তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানিবণ্টন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের একটা মনোজাগতিক অবস্থান আছে যে, ভারত বাংলাদেশকে ঠকাচ্ছে। বিশেষ করে নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে।
গত কিছুদিন আগে যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী এ দেশে এলেন তখন তিস্তার পানি নিয়ে একটা সমাধান হওয়ার কথা হয়েছিল। কিন্তু তিস্তার মালিক যেহেতু পশ্চিমবঙ্গ এবং সেখানকার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর অনীহা বা বিরোধিতা এসব কারণে কেন্দ্রীয় সরকার তা সমাধান করতে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গের জনগণের পক্ষে এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : এখানে কয়েকটি বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে। ষাট বছর আগে আমরা সবাই একই দেশের ছিলাম, আজ যেখানে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ নামক তিনটি দেশ। ইতিহাসের প্রক্রিয়ায় আজ তিনটি আলাদা দেশ। তিনটি দেশেরই রয়েছে পৃথক অস্তিত্ব। আজ আমাদের পেছনের ইতিহাস দিয়ে না দেখে বিষয়টি খোলা মনে দেখতে হবে। আধুনিক দৃষ্টি দিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ভাবতে হবে। এটা মেনে পরবর্তী সময়ে আমাদের যেটা মানতে হবে সেটা হলো ভারত বড় দেশ। ছোট দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার দায়ভার ভারতের ওপরই বর্তায়। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। যে প্রশ্নগুলো আলোচনায় উঠে আসে তার দুটো দিক আছে। একটা থাকে বাস্তব দিক। অন্যটি বাংলাদেশের মানুষ বিষয়গুলোকে কীভাবে দেখছে। আমি মনে করি আমাদের দুটোকেই গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থাৎ ট্রানজিট নিয়ে, জলবণ্টন নিয়ে, বর্ডারে বিএসএফ কী করছে। ছিটমহল নিয়ে বাস্তব সমাধান এবং বাংলাদেশের মানুষের আস্থা অর্জন করা অর্থাৎ তারা যেন ভাবে যে ভারত সমাধান চাচ্ছে। ভারত কিছু চাপিয়ে দিচ্ছে নাÑ এই বোধে বাংলাদেশের মানুষ যাতে পৌঁছতে পারে সে পরিস্থিতি তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। তিস্তার প্রশ্নে ভারত সরকার যে হোমওয়ার্কের দরকার ছিল তা করেনি। তারা ভেবেছিলে ক্ষমতা আছে আমরা তা করে নেব। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ন্যায়সঙ্গত দাবির পাশাপাশি দেখা যায় ঘটনাচক্রে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর বাংলার মানুষ মনে করে তারাও উপেক্ষিত। কলকাতা থেকে তারা কোনো সুরাহা পায়নি। সেখানকার মানুষের জল সেচের প্রশ্নটিও একটা বড় সমস্যা। নেপালের সঙ্গেও ভারতের জলবণ্টনের প্রশ্নে সমস্যা আছে। এক্ষেত্রে বাস্তব প্রয়োজনে সবার কথাই ভাবতে হবে। উত্তর বাংলার মানুষ যদি ভাগ চায় বা ক্ষতিপূরণ চায় আমি বলছি না, ক্ষতিপূরণ বাংলাদেশকেই দিতে হবে। এখানে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তার কাঠামোয় রাজ্য নিয়ে পরিকল্পনা করতে হলে আরো চিন্তাভাবনা করতে হবে। ট্রানজিট বা করিডোরের প্রশ্নে বলব এটা হলে পশ্চিম বাংলার মানুষ উপকৃত হবে। আমি যদি দেশটাও ভুলে যাই তাহলে এই যে আমরা ট্রেনে করে এলাম বর্ডারের দুপাশে যে জিনিসপত্র নিয়ে নামতে হচ্ছে এটা বিরাট ভোগান্তি। আমার তো মনে হয় দুবাংলার মানুষের যাতায়াতের পথ আরো সুগম করে দেয়া উচিত। আজ যদি বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আগরতলা পৌঁছানো যায় তাহলে সময় কত কমে যাবে। আমার মনে হয় এ জন্য বাংলাদেশের যেসব দাবি, আশঙ্কা সেগুলো ভারতকে সমাধান করতে হবে। পুরনো ইতিহাসের যে বোঝা আমাদের মাথায় চেপে আছে তা ঝেড়ে ফেলে আধুনিক দৃষ্টিতে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে দুটি দেশ অনেক কিছু করতে পারে। আজ ইউরোপ একটা মডেল করেছে। তাহলে দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষের মধ্যে কেন যোগাযোগ বাড়ানো যাবে না? যোগাযোগ বলতে কমন মার্কেট, বাণিজ্য গড়তে হবে! কেন এত কাঁটাতার? আমরা অনেক কিছু খোলাখুলি করতে পারি। আর একটা কথা বলব আমরা ভারতে বাংলাদেশ ইস্যুকে সাম্প্রদায়িক চোখে দেখতে চাই না। আজ ভারতে বিজেপি বাংলাদেশের কথা উঠলে আলাদা করে দেখে। এখান থেকে কোনো হিন্দু গেলে তারা তাকে শরণার্থী বলে, মুসলিম পাসপোর্ট ছাড়া গেলে তাকে অনুপ্রবেশকারী বলা হয়। আমরা এ কথাগুলোর বিরুদ্ধে। বিজেপির সঙ্গে অনেক দল, সরকার এমনকি পশ্চিমবঙ্গের সরকারও তেমন শব্দ ব্যবহার করে। আমরা চাই এ কথাগুলো উঠে যাক।
২০০০ : পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধের স্মৃতি কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে আছে সহমর্মিতার স্মৃতি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম, কখনো একমাত্র সমর্থক। কেন্দ্র থেকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এ দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। কীভাবে সেবা দিতে হয় তা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দেখিয়েছে। এখানে তো যুদ্ধের স্মৃতি নেই, পশ্চিম বাংলার মানুষের সঙ্গে সাংস্কৃতিক…
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : হ্যাঁ, অবশ্যই। এমনকি যেখানে যুদ্ধের স্মৃতি আছেও সেখানে আমার মনে হয় নতুন প্রজন্ম অতীতের স্মৃতি বহন করে থাকতে চায় না। দেশভাগ, গঙ্গার স্মৃতি মানুষের আছে। ভারতের ভেতরে আজো এসব হচ্ছে কিন্তু আজ যদি আমাদের এগোতে হয় তাহলে তিক্ত স্মৃতির ঊর্ধ্বে উঠতে হবে। পুরনো পরিস্থিতি যাতে ফিরে না আসে সে চেষ্টাও করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় মৈত্রী হোক এটা মানুষ চায়। কিন্তু সরকারগুলো সে আকাক্সক্ষায় সাড়া দিতে পারছে না। মানুষকে এ আকাক্সক্ষায় সাড়া দিতে হবে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের হস্তক্ষেপ, ভারতকে তো তারা তাঁবেদার বানিয়েই ফেলেছে! এখানে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সরকারগুলো কে কত বেশি মার্কিনিদের তোষামোদ করবে তার চিন্তায় থাকে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। মার্কিনিদের সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে গণতন্ত্রবিরোধী যে তৎপরতা, তার বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে!
২০০০ : সেভেন সিস্টার। ভারত বাংলাদেশের মধ্যে বিরাজিত একটি প্রশ্ন। কখনো কখনো ভারতের প্রশাসন থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেখানকার বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করার অভিযোগ উত্থাপিত হয়। ফলে এটা বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পর্কের একটা ইস্যু। এটা ভারতের নিজস্ব সমস্যাও। বিদ্রোহ, মুভমেন্ট যা-ই বলি না কেন এটাকে আপনাদের পার্টি কীভাবে দেখে?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : এখানে মানুষের কয়েকটি দাবি আছে। কয়েকটি জায়গায় স্বায়ত্তশাসনের দাবি আছে। বিভিন্ন জাতিসত্তার স্বীকৃতির দাবি আছে। আরো আছে গণতন্ত্রের দাবি। আজকে উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষের ব্যক্তিগত যে বৈশিষ্ট্য তাকে যেভাবে অস্বীকার করে যেভাবে উন্নয়নের নামে টাকা, আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল অ্যাক্ট দিয়ে যেভাবে ভারত সরকার কর্মকাণ্ড চালিয়েছে তা এখানকার সমস্যাকে বাড়িয়েছে। ফলে এক সময় নাগাল্যান্ড, মিজোরামে সেনা ছিল আজকে ভারত সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে এ অঞ্চলের সর্বত্রই সেনা আছে। ফলে এখানকার জাতিসত্তাগুলো মনে করে তাদের যদি নিজেদের বাহিনী না থাকে তাহলে তো কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের কথা শুনবেই না। সবাইকে বাধ্য করা হয়েছে সশস্ত্র হতে। এটা সরকারের নীতির ফল। মণিপুরে ইরোম শর্মিলা আমার বোন ১১ বছর ধরে অনশনে আছে শুধু আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল অ্যাক্ট বাতিলের দাবিতে। অথচ আজো ভারত সরকার তা শোনেনি। এ সমস্যা ভারত সরকারের তৈরি। এখন সমস্যা বাড়লে তা বাংলাদেশেও চলে আসতে পারে। ফলে আমার মনে হয় এটা ভারত-বাংলাদেশের মাধ্যমে সমাধান হবে না, এটা ভারতের সমস্যা। গণতান্ত্রিকভাবে রাজনৈতিকভাবে না এগোলে এ সমস্যার সমাধান হবে না।
২০০০ : দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে রাষ্ট্রের বাইরে মানুষে মানুষে যোগাযোগ বাড়ানো কতটা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন এবং সেটা কীভাবে করা যায়?
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : প্রয়োজন তো খুবই প্রয়োজন। এটা সময়ের দাবি। আমার মনে হয় এক নম্বরে রাষ্ট্রগুলোর ওপর চাপ তৈরি করা। যাতে মানুষের ঐক্যের প্রয়োজন ও আকাক্সক্ষা সম্মান পায়। দ্বিতীয় হলো বিভিন্ন আন্দোলন, পার্টির মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ। তৃতীয়ত প্রযুক্তির যুগে নতুন সংবাদ মাধ্যমের যুগে বিশেষত সংবাদমাধ্যমে এটাকে একটা এজেন্ডা করা দরকার। আমাদের কাগজে খুব কম আসে বাংলাদেশের খবর। এদেশেও বেশি বেশি ভারতের খবর আসতে পারে। এর মধ্য দিয়ে মানুষের যোগাযোগ বাড়বে। ইন্টারনেটের মাধ্যমেও যোগাযোগ বাড়ানো দরকার।
২০০০ : আপনাকে ধন্যবাদ এত লম্বা সময় দেয়ার জন্য।
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য : আপনাদেরও ধন্যবাদ।
(সুত্র, সাপ্তাহিক ২০০০, ১৯/০৬/২০১২)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন