মুসলমানের সম্পদ ঈমান। চারটি স্বভাব মুসলমানের ঈমান নষ্ট করে ও মুনাফেক হিসেবে দাঁড় করায়। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘চারটি স্বভাব এমন, যার সবই কারও মধ্যে থাকলে সে পুরোদস্তুর মুনাফেক আর যার মধ্যে তার কোনো একটি থাকবে, সে যতক্ষণ তা পরিত্যাগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফেকির একটি স্বভাবই থাকবে। স্বভাব চারটি হচ্ছে-১. যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় সে তাতে খেয়ানত করে, ২. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, ৩. যখন কোনো ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে এবং ৪. যখন কারও সঙ্গে ঝগড়া করে গালাগাল করে।’ (বুখারি : ২৬৮২)
আমানতের খেয়ানত নয়: কারও কাছে কোনো অর্থ-সম্পদ গচ্ছিত রাখার নাম আমানত। যিনি গচ্ছিত সম্পদ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করেন এবং এর প্রকৃত মালিক চাওয়া মাত্র তা অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেন, তিনি আমানতদার। আর গচ্ছিত সম্পদ যথাযথভাবে মালিকের কাছে ফেরত না দিয়ে আত্মসাৎ করা আমানতের খেয়ানত। অনেকে শুধু নগদ টাকা-পয়সা গচ্ছিত রাখাকেই আমানত ভাবেন। কিন্তু আমানতের গণ্ডি এত সীমিত নয়, বরং এর পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সঙ্গে আমানত অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। রাষ্ট্র পরিচালনা, ভোট প্রদান, সাংবাদিকতা, অফিসিয়াল কাজকর্ম, শিক্ষকতা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শ্রম-মজুরি সবই আমানত।
ওয়াদা ভঙ্গকারীর ধর্ম নেই: কারও সঙ্গে কেউ কোনো অঙ্গীকার করলে, কাউকে কোনো কথা দিলে বা লিখিত চুক্তি করলে তা পালন করার নাম ওয়াদা। যাপিত জীবনে মানুষ মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন রকম ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। এই ওয়াদা পালন করা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ও ঈমানের অঙ্গ। সংসার ও সমাজজীবনে ওয়াদা রক্ষাকারীরা মানুষের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত ও গ্রহণযোগ্য। সবাই ওয়াদা পালনকারীকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন। ওয়াদা রক্ষা করা আল্লাহর একটা গুণও বটে। বিশ^নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) পৃথিবীতে ওয়াদা পালনের এক আদর্শ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। ওয়াদা ভঙ্গকারীকে মুনাফেকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যাদের জন্য পরকালে রয়েছে কঠোর শাস্তি।
মিথ্যা বলা মারাত্মক অপরাধ: মিথ্যা বলার চেয়ে মারাত্মক অপরাধ আর নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এবং বিশ^নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) মিথ্যাবাদীকে প্রচণ্ড ঘৃণা করেন। কুরআন ও হাদিসে মিথ্যাবাদীর ভয়ানক পরিণতির কথা বলা হয়েছে। একটি মিথ্যাকে সত্য বলে প্রমাণ করার জন্য হাজারো ছলচাতুরী এবং আরও অনেক মিথ্যা বলার প্রয়োজন হয়। এরপরও মিথ্যা কখনো সত্য হয় না। মিথ্যা মিথ্যাই থেকে যায়। যারা মিথ্যাচার করে বেড়ায় তারা সংসারে, সমাজে এবং দেশে মহাদুর্যোগ সৃষ্টি করতে পারে। মিথ্যাবাদীর পাল্লায় পড়ে অনেক নিরীহ মানুষ প্রতারিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মিথ্যাবাদীর ওপর আল্লাহ তায়ালার অভিশাপ বর্ষিত হয়।
গালাগাল নিকৃষ্ট স্বভাব: মূলত মুনাফেক ব্যক্তিই অন্যের সঙ্গে কলহ-বিবাদে লিপ্ত হলে মুখ খারাপ করে এবং অবলীলায় অশ্রাব্য গালমন্দ শুরু করে দেয়। যাপিত জীবনে কত রকম মানুষের সঙ্গেই মেলামেশা ও লেনদেন করতে হয়। এতে কখনো কখনো মতের অমিল দেখা দেয় এবং মাঝেমধ্যে তা কলহ-বিবাদ পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু একজন প্রকৃত মুমিন কোনো অবস্থাতেই মুখ খারাপ করতে পারে না। সবসময় সে নিজ ভদ্রতা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ব্যাপারে সচেতন থাকবে। দৃষ্টিভঙ্গিগত মতভেদ হোক, চিন্তা-চেতনার অমিল হোক, রাজনৈতিক কিংবা ব্যবসায়িক বিরোধ হোক, কোনো অবস্থাতেই একজন মুমিন তার মুখ দিয়ে মন্দ বাক্য উচ্চারণ করবে না।