Image description
 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক আলোচনার পর প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিতে যাচ্ছেন ইউক্রেনকে। অবশ্য সরাসরি নয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিটি ১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ওই ব্যবস্থা কিনবে ইউরোপ। এরপর সেগুলো ইউক্রেনকে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে একদিকে আর্থিকভাবে লাভবান হবে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে ইউক্রেনকে সরাসরি অস্ত্র সহায়তার সমালোচনাও আড়াল করতে পারবেন ট্রাম্প। এজন্যই তার সোমবারের ইউক্রেন-সংক্রান্ত ঘোষণাকে কৌশলগত দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলা হচ্ছে।

ট্রাম্প রাশিয়াকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করার জন্য দুটি উদ্যোগ ঘোষণা করেন। এর মধ্যে রয়েছে কিয়েভে নতুন অস্ত্র পাঠানো এবং আগামী ৫০ দিনের মধ্যে শান্তি না এলে মস্কোর ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি বিরক্তিও প্রকাশ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, কৌশলগত জায়গা থেকেই এ উদ্যোগ দুটি একত্রে নেওয়া হয়েছে। কারণ ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ যুদ্ধ থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে এসেছেন। তবে ওভাল অফিস থেকে এ ঘোষণা দেওয়ার সময়ও ট্রাম্প বলেন, এ দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের জন্য তিনি দায়ী নন।

ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, কিয়েভ পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসন ঠেকাতে চাইলে আমেরিকার অস্ত্র সরবরাহ অপরিহার্য। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়েছিল, আমরা চার বার চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছিলাম; কিন্তু এটা বারবার দীর্ঘায়িত হচ্ছে।’ ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইউরোপীয় দেশগুলো আমেরিকার কাছ থেকে অস্ত্র কিনে তা ইউক্রেনে পাঠাবে। বিষয়টি নিয়ে গত জানুয়ারি থেকেই আলোচনা চলছিল।

 

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আট মাস পর ট্রাম্প ওভাল অফিসে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে এক বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিকল্পনাটি ঘোষণা করেন। তিনি রাশিয়ার জন্য ৫০ দিনের নতুন সময়সীমাও নির্ধারণ করেন। ট্রাম্প বলেন, ‘৫০ দিনের মধ্যে আমরা কোনো চুক্তিতে না পৌঁছালে খুব কঠিন শুল্ক আরোপ করব। শুল্ক হবে প্রায় ১০০ শতাংশ। আপনি একে সেকেন্ডারি ট্যারিফ বলতে পারেন। আপনি জানেন, এর মানে কি? আমি বাণিজ্যকে অনেক কিছুর জন্য ব্যবহার করি। কিন্তু যুদ্ধ থামানোর জন্য এটা দারুণ কার্যকর।’

 
 

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা সিএনএনকে জানান, ট্রাম্প ‘সেকেন্ডারি ট্যারিফ’ বলতে বোঝাতে চেয়েছিলেন রাশিয়ার ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক এবং সেসব দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা যারা রাশিয়ার তেল কিনছে। হোয়াইট হাউসে সিএনএনের ক্যাটলিন কলিন্সকে ন্যাটোতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ম্যাট হুইটেকার বলেন, ‘এগুলো হলো সেকেন্ডারি নিষেধাজ্ঞা। এটা তাদের ওপর আরোপ করা হবে যারা রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। তাই এটা আসলে রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয় নয়। এ নিষেধাজ্ঞা ভারতের মতো দেশ ও চীনের ওপর পড়বে, যারা রাশিয়ার তেল কিনছে। এটি রুশ অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।’

 

সোমবারের এ দুই ঘোষণার পেছনে ছিল ট্রাম্পের রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রতি নতুন করে জমে ওঠা বিরক্তি। অবশ্য তাদের সম্পর্ক অনেকটা জটিল ও অনেক সময় বিভ্রান্তিকর। একসময় পুতিনের ইউক্রেন আগ্রাসনের প্রশংসা করেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তিনি ক্ষুব্ধ। কারণ তার শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবগুলো মস্কো উপেক্ষা করেছে। ট্রাম্পের পাশে বসে রুটে অস্ত্র সরবরাহ বিষয়ক চুক্তিকে একটি ‘গেম-চেঞ্জার’ উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইডেন ও নরওয়ে নতুন সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারে।

ট্রাম্প নিজেও ইউরোপের এই নতুন অবদানে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইউরোপ এখন এ যুদ্ধ নিয়ে অনেক বেশি সচেতন ও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি জানান, এ নতুন ব্যবস্থায় ইউক্রেনের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ অস্ত্র প্যাকেজ পাঠানো হবে। এর মধ্যে থাকবে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছে স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, হাউইটজার গোলা এবং মাঝারি পাল্লার আকাশ-থেকে-আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করতে পারে। এগুলো পরে ইউক্রেনে পাঠানো হবে বলে পরিকল্পনা রয়েছে।

ট্রাম্প চাইছেন ইউক্রেনকে সরাসরি অস্ত্র না পাঠিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর মাধ্যমে পাঠাতে। এতে তিনি নিজেকে সমালোচনা থেকে রক্ষা করতে পারবেন। পাশাপাশি ট্রাম্প এ উদ্যোগ থেকে বড় অঙ্কের আর্থিক লাভের আশাও করছেন। কারণ একটি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেমের দাম প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। তিনি এরই মধ্যে এ পরিকল্পনাকে যুক্তরাষ্ট্রের লাভজনক একটি স্কিম হিসেবে প্রচার করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তার মতে, ইউক্রেনকে নতুন অস্ত্র সরবরাহের এ উদ্যোগ মস্কোর প্রতি একটি স্পষ্ট বার্তা দেবে। এটি বোঝাবে, পুতিনের প্রতি ট্রাম্পের বিরক্তি সত্যিই গভীর। কারণ গত সপ্তাহেই তিনি রুশ নেতার কর্মকাণ্ডকে ‘বাজে কথা’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। এ পরিকল্পনা নিয়ে গভীর আলোচনা হয় গত মাসে নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে। সেখানে ট্রাম্প ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে এ পরিকল্পনার সূত্রপাত আসলে আরও কয়েক মাস আগে। ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ের পর থেকেই ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে থাকে। ট্রাম্প তার প্রচারে ওয়াশিংটনের ভূমিকা কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তখন থেকেই ইউরোপীয় কর্মকর্তারা এমন একটি পথ খুঁজতে থাকেন, যাতে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কমালেও ইউক্রেনে অস্ত্র সহায়তা চালু রাখা যায়।