Image description

আজ ২৫ বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী। কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

বাঙালির যাবতীয় মানবিক আবেগ, অনুভূতি, আকাঙ্ক্ষা, অভিব্যক্তির অতুলনীয় প্রকাশ ঘটেছে রবীন্দ্রনাথের রচনায়। আজ দিনভর তার লেখা কবিতা, গানে, গল্পে ও নাচে কবি স্মরণের অনুষ্ঠান হবে। শুধু বাংলাদেশে নয়, দেশ-বিদেশেও পালন করা হবে কবিগুরুর জন্মদিন।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীত রচয়িতা-সুরকার, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, সংগীতশিল্পী ও দার্শনিক। নতুন পথের দিগন্ত রচিত হয়েছে তার লেখনীতে। পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ও মা সারদাদেবী। শৈশবে বিভিন্ন স্কুলে তাকে ভর্তি করা হয় বিদ্যার্জন করার জন্য। কিন্তু শিশু রবীন্দ্রনাথের কাছে চার দেয়ালে আবদ্ধ বিদ্যালয় বা প্রথাগত শিক্ষা কোনোটাই গ্রহণযোগ্য হয়নি। বাড়ির অনুকূল পরিবেশে এবং পিতার সান্নিধ্যে থেকেই তিনি প্রকৃত শিক্ষালাভ করেন। 

তিনি প্রাচীন ভারতবর্ষের তপোবনে যেভাবে শিক্ষাদান কার্য সম্পাদিত হতো সেই আদর্শকেই জীবনে গ্রহণ করেছিলেন। পরিণত বয়সে শান্তিনিকেতনে তিনি আশ্রমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলেন। প্রকৃতির মুক্তাঙ্গনে বসে তিনি ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দিতেন। তিনি এখানে শিক্ষক নন, তিনি হলেন গুরুদেব।

রবীন্দ্রনাথ কবি। বিশ্বকবি। আমাদের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা। তার মধ্যে মানবপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেম, ঈশ্বরপ্রেম সবকিছুই এত সুন্দরভাবে ও এমন পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ পেয়েছে, যা সত্যি বিস্ময়কর। মানবপ্রেমী কবি আমাদের শিখিয়েছেন মানুষকে ভালোবাসতে, ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখতে। ‘যেথায় থাকে সবার অধম দীনের হতে দীন/সেইখানে যে চরণ তোমার রাজে।/ সবার পিছে, সবার নীচে সবহারাদের মাঝে।’ 

নারীকে সম্মান করেছেন তিনি। নারীর আপন সত্তায় সে মহীয়ান হতে পারে সে কথা তিনি বহু কবিতা ও গানে বলেছেন। প্রকৃতি-প্রেম তার কাব্য-কবিতায় এমন সুন্দরভাবে সন্নিবেশিত হয়েছে, যার কোনো তুলনা নেই। প্রতিটি ঋতু- গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত যেন একেকটি জীবন্ত চরিত্র। 

এত বছর পরও রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন ও সৃষ্টি দারুণভাবে আজকের সমাজে প্রাসঙ্গিক। কারণ রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন ও সৃষ্টি আমাদের এই অস্থিরময় জীবনে সঠিক পথের দিশা দেখাতে পারে, পারে আত্মগ্লানির হাত থেকে মুক্তি দিতে। দমবন্ধকর আবহাওয়া থেকে একটু খোলা হাওয়া এনে দিতে পারে রবীন্দ্রসংগীত। ‘আলোকের এই ঝর্ণা ধারায়’ কিছুক্ষণের জন্য হলেও মানুষ একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারে। ২৫ বৈশাখের এই সকালে কবিগুরুকে আমাদের অন্তরের শ্রদ্ধা জানাই।