Image description
উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদান থেকে দেশে ফেরার জন্য ৬৭৫ জন বাংলাদেশি গত ২ মে থেকে দেশটির বন্দর পোর্ট সুদানে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে জাহাজে করে সৌদি আরবের জেদ্দা হয়ে দেশে ফেরার জন্য গতকাল পর্যন্ত দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়নি।
 
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম গত বৃহস্পতিবার ফেসবুক পোস্টে জানান, সেখানে বাংলাদেশিদের দেশে ফেরার বিষয়ে একটি গ্রুপ সহযোগিতা না করে নানা রকমের প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করছে। সবাইকে অসহযোগিতা থেকে বিরত থেকে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, কর্মকর্তাদের নির্দেশনা যারা মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ফেরার পরে আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে। 
 
অন্যদিকে বাংলাদেশিরা এই প্রতিবেদককে জানান, কী ধরনের অসহযোগিতা করা হচ্ছে তা দূতাবাস বলছে না, অথচ সবাই এমন অবস্থায় দূতাবাসকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
 
সুদানে বাংলাদেশ ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনিসুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, কয়েক দফায় বাংলাদেশিরা সুদানের খার্তুম থেকে গত ২ মে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় পোর্ট সুদানে আসেন। এই মুহূর্তে পোর্ট সুদানে বাংলাদেশ ক্যাম্পে ৬৭৫ জন বাংলাদেশি দেশে ফেরার জন্য অপেক্ষা করছেন। কথা ছিল যে পোর্ট সুদান থেকে বাংলাদেশিদের জাহাজে করে জেদ্দা এবং জেদ্দা থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত জেদ্দা যাওয়ার সময়সূচি ঠিক করতে পারেননি। দূতাবাসের কর্মকর্তারা প্রথমে বলেছিলেন, গত ৩ মে জেদ্দা যাওয়া হবে কিন্তু ৩ মে রাত ১০টায় জেদ্দা যাওয়ার সূচি বাতিল করা হয়। পরদিনও একবার জেদ্দা যাওয়ার কথা বলে তা দূতাবাস বাতিল করে। এই অবস্থায় বাংলাদেশিদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে আর দূতাবাসের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করেও কোনো জবাব পাওয়া যাচ্ছে না।
 
সুদানের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন মোহাম্মদ বিপ্লব। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা প্রায় ৯০০ বাংলাদেশি গত ২ মে থেকে এখন পোর্ট সুদানে আছি। সেখান থেকে জাহাজে করে জেদ্দা যাওয়ার কথা। কিন্তু দূতাবাস এখনও জাহাজ ঠিক করতে পারেনি।
এই বিষয়ে জানার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে শুক্রবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েও কোনো মন্তব্য জানা যায়নি।
 
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম গত বৃহস্পতিবার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘৬৭৫ জন পোর্ট সুদানে পৌঁছেছেন। যাদের পাসপোর্ট নেই তাদের ট্রাভেল পারমিট সরবরাহ করা হয়েছে। আমরা প্রথম পর্যায়ে নারী, শিশু এবং অসুস্থদের জাহাজে আসন সংখ্যা অনুসারে জেদ্দার উদ্দেশে পাঠাব। বাকিরা পরবর্তী জাহাজে রওনা হবেন। প্রতিনিয়ত জাহাজ ছাড়ছে। কোনো সমস্যা হবে না। উপস্থিত সবাইকে আমাদের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করছি। আমরা লক্ষ্য করেছি খার্তুম থেকে রওনা হওয়ার সময় থেকে একটি গ্রুপ আমাদের সহযোগিতা না করে নানা রকমের প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করছেন। আমাদের কর্মকর্তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের প্রত্যাবর্তনে কাজ করছেন। দয়া করে অসহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকবেন। আমাদের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা যারা মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ফেরার পরে আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে। কয়েকজনের জন্য সবার জীবন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আমরা ফেলব না।’
 
অসহযোগিতার বিষয়ে সুদানে বাংলাদেশ ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনিসুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা কোনো অসহযোগিতা দেখিনি। কী অসহযোগিতা এবং কারা অহসযোগিতা করছে তা দূতাবাস আমাদের জানালে আমরা সহযোগিতা করব। কেননা জেদ্দা যাওয়ার বিষয়ে কারোই ঝামেলা করার কথা না, দূতাবাস যদি নোটিস দিয়ে বিষয়টি জানায় তবে সবাই সহযোগিতা করবে। এখানে সবাই বাঁচা-মরার পরিস্থিতিতে আছে, এমন পরিস্থিতিতে তো কারও ঝামেলা করার প্রশ্নই উঠে না।’
 
সুদানের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের এক বাংলাদেশি কর্মী মোহাম্মদ বিপ্লব এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এখানে কোনো ঝামেলা হচ্ছে না। দূতাবাস জাহাজ এখনও ঠিক করতে পারেনি। বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই ঝামেলা বা অসহযোগিতার কথা বলছে।’