এক গবেষণা বলছে, ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত চীনের ৯০ কোটি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। জনগোষ্ঠীর ৬৪ শতাংশ মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ওই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বেইজিংভিত্তিক পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়। দেশটির শীর্ষ একজন মহামারি বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেছেন, আসন্ন চান্দ্র্র নববর্ষকে ঘিরে গ্রামাঞ্চলেও ভাইরাসটি আরও ছড়িয়ে পড়বে।
পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, গানজু প্রদেশে সম্ভাব্য আক্রান্ত সর্বোচ্চ ৯১ শতাংশ মানুষ। এর পরেই রয়েছে ইউনান প্রদেশ। সেখানে আক্রান্তের হার ৮৪ শতাংশ। কিংহাইয়ে আক্রান্ত ৮০ শতাংশ মানুষ। চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ দফতরের সাবেক মহাপরিচালক জেং গুয়াং আশঙ্কা করছেন, দুই থেকে ৩ মাস সংক্রমণ চূড়ায় অবস্থান করতে পারে।
২৩ জানুয়ারি চীনের নববর্ষ। সে দেশের কোটি কোটি মানুষ দিনটিকে সামনে রেখে গ্রামের বাড়িতে ফিরছে। কেউ কেউ করোনা মহামারি শুরুর পর প্রথমবারের মতো বাড়ি ফিরছে। শূন্য কোভিড নীতি থেকে সরে আসার পর চীন করোনার দৈনিক পরিসংখ্যান দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। তবে ভালো চিকিৎসা পাওয়া যায়, এমন হাসপাতালগুলোতে রোগীর তীব্র ভিড়, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে।
এই মাসের শুরুর দিকে এক বক্তৃতায় জেং বলেছিলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে নজর দেওয়ার সময় এসেছে। সেখানে অনেক বয়স্ক, অসুস্থ এবং অক্ষম মানুষ ইতিমধ্যেই কোভিড চিকিৎসার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছেন।’
চীনের কেন্দ্রীয় হেনান প্রদেশই একমাত্র প্রদেশ যেখানে সংক্রমণের হারের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে সেখানকার একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেছিলেন, প্রায় ৯০ শতাংশ জনসংখ্যার কোভিড ছিল, একই হার শহর ও গ্রামীণ এলাকায় দেখা যায়। তবে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক প্রদেশ ও শহর সংক্রমণের চূড়ায় চলে গেছে।
চীনে চন্দ্র নববর্ষের ছুটির দিনগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে ২১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়। সে সময়টায় প্রচুর লোকের সমাগম দেখা যায় বিভিন্ন স্থানে। নববর্ষ উপলক্ষে মোট প্রায় ২০০ কোটি ট্রিপ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কয়েক কোটি মানুষ ইতিমধ্যেই ভ্রমণ করেছে। বিক্ষোভের মুখে গত বছর ডিসেম্বরে চীন সরকার তাদের ‘জিরো কোভিড’ নীতি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। বিধি শিথিল করার পর থেকেই চীনে সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়তে শুরু করে। যদিও সরকার থেকে দেওয়া পরিসংখ্যানে তার উল্টো চিত্র পাওয়া যাচ্ছিল। গত ২৪ ডিসেম্বরের পর চীন সরকার সে দেশে কোভিডে দৈনিক শনাক্ত নিয়ে তথ্য দেওয়া বন্ধ করে। সে সময় সরকারি তথ্যে গত মাসে দিনে ৫ থেকে ৬ জনের বেশি মৃত্যুর কথা বলা হয়নি। তবে হাসপাতালে কোভিড রোগীর ভিড় আর সেখানকার শ্মশানগুলোতে মরদেহের জায়গা না মেলার খবর প্রকাশ হয় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।
ডিসেম্বরে চীনা কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তারা দেশের কোভিড পরিস্থিতির ওপর দৈনিক আপডেটের পরিবর্তে মাসিক ইস্যু করার পরিকল্পনা করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনকে পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তথ্য সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই বছর চীনে কমপক্ষে ১০ লাখ কোভিড-সম্পর্কিত মৃত্যুর পূর্বাভাস দিয়েছেন। মহামারি শুরু হওয়ার পর বেইজিং আনুষ্ঠানিকভাবে মাত্র ৫ হাজার জনের বেশি মৃত্যুর খবর দিয়েছে, যা বিশ্বের সর্বনিম্ন মৃত্যুর হারগুলোর মধ্যে একটি।
বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পর নববর্ষ উপলক্ষে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সময় এখনও চলছে। সবাই একাগ্র হয়ে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। অচিরেই ভোরের আলো ফুটবে। চলুন, আরও বেশি করে পরিশ্রম করি। অধ্যবসায়ের মানে হলো বিজয়; আর ঐক্যের মানেও বিজয়।’ শি আরও বলেন, করোনাবিরোধী লড়াইয়ে চীন নজিরবিহীন সংকট ও চ্যালেঞ্জগুলো জয় করতে পেরেছে। তিনি মনে করেন, তাদের নেওয়া নীতিমালাগুলো সময় ও পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে।