
দেশের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ফিউচার কিছু কোম্পানির কাছে বন্ধক রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফাইজ তাইয়েব আহমেদ। তিনি বলেছেন, এ গড্ডালিকা প্রবাহ এবং দূরদর্শিতার যে ভয়ংকরতম রোগ, তা থেকে সরতে হবে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে। ডিজিটাইজেশনের নামে বিগত সরকার বিভিন্ন কৌশলগত অবকাঠামোকে কিছু নির্দিষ্ট দেশি-বিদেশি কোম্পানির কাছে জিম্মি করে রেখে গেছে বলেও জানান তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শুক্রবার (৮ আগস্ট) এক স্ট্যাটাসে ফাইজ তাইয়েব আহমেদ লিখেছেন, ‘আমি মনে করি জনগণের কর ও ভ্যাটের টাকায় কিংবা বিদেশি ঋণের টাকায় মন্ত্রণালয়, দপ্তর সংস্থা, সরকারি কোম্পানি কিংবা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের- ভেন্ডর লকড, সফটওয়্যার লকড এবং হার্ডওয়্যার লকড, সো কলড অটোমেটেড সিস্টেম কেনা উচিত না।’
তিনি বলেন, এমন ক্লোজ সিস্টেমের পেছনে বিনিয়োগ করে দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সিস্টেম এবং সফটওয়্যার অটোমেশনের নামে ২০২৮-৩০-৩৪ সাল পর্যন্ত ভেন্ডর ডিপেন্ডেন্ট হয়ে আছে। এসব সিস্টেমের লাইসেন্স রিনিউয়াল ফি আকাশচুম্বী। ছোট্ট কোনো কোড চেঞ্জ কিংবা প্রোফাইল পরিবর্তনের জন্য, কনফিগারেশন মডিফিকেশনের জন্য হাজার হাজার ডলার খরচ হচ্ছে। ডিজিটাইজেশনের নামে বিগত সরকার বিভিন্ন কৌশলগত অবকাঠামোকে কিছু নির্দিষ্ট দেশি-বিদেশি কোম্পানির কাছে জিম্মি করে রেখে গিয়েছে।
এসব থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ সহজ নয়, আছে আইনি বাধা-বিপত্তি, এমন তথ্য জানিয়ে ফাইজ তাইয়েব আহমেদ বলেন, এমন সফটওয়্যার কেনা উচিত না, যার সোর্স কোড সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ওউন করে না। যে প্রতিষ্ঠান গিট হাব ক্রিয়েট কিংবা মেইনটেইন করতে পারবে না, সে নিজে অটোমেশনের নামে কোন সফটওয়্যার কিনবে না, সিস্টার এন্টারপ্রাইজ বা মন্ত্রণালয়ের যাদের এ যোগ্যতা আছে, তাদের দিয়ে সিস্টেমস এবং সফটওয়্যার সার্ভিস কিনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ১৮ কোটি মানুষের দেশ, প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন সমস্যা তৈরি হয়। সিস্টেমের আর্কিটেকচার ডিজাইনের সময় বহু ইনপুট ভুল হয় যা শুধরানো লাগে। শুরু থেকেই ডিজাইনে এপিআই ইন্টিগ্রেশন এবং ইন্টার-অপারেবিলিটির কথা মনে থাকে না। থাকে না সিকিউরিটির কথা, রিডান্ডেন্সির কথা। এজন্য সফটওয়্যারগুলোতে ক্রমাগত অ্যাডাপটেশন, আপগ্রেডেশন বা মডিফিকেশন দরকার পড়ে।
লকড সিস্টেমে এসব পরিবর্তন সহজসাধ্য নয় জানিয়ে ফাইজ তাইয়েব আহমেদ বলেন, একদিকে খরুচে, অন্যদিকে ব্যাপক সময় চলে যায়। বিদেশি সফটওয়্যার হলে মাসের পর মাস চলে যায় শুধু বুঝাইতে যে কী দরকার, কেন দরকার! একদিকে লাইসেন্স ফি যায় অন্য দিকে উচ্চ চেঞ্জ ফি বা আপগ্রেডেশন ফি। দিনশেষে অটোমেশন নামধারী হলেও সফটওয়্যারগুলো দিয়ে নাগরিকদের সেবা দেওয়া যায় না। এসব নিয়ে ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, সম্মিলিতভাবে আমাদের ডিজিটাল ট্রান্সফর্মেশন ফিউচার কিছু কোম্পানির কাছে বন্ধক রাখার যে গড্ডালিকা প্রবাহ এবং দূরদর্শিতার যে ভয়ংকরতম রোগ, তা থেকে সরতে হবে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে। বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সময় হয়েছে আমাদের সম্মিলিতভাবে সতর্ক হওয়ার।