Image description
প্রযুক্তি অপব্যবহার

বিশ্বায়নের এই যুগে তরুণদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভ্যস্ততা দিন দিন বাড়ছে। নাগরিক ব্যস্ততার কারণে সরাসরি সাক্ষাতের সময় ও সুযোগ কমে আসাটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতি তরুণদের পাশাপাশি মধ্যবয়স্কদের আগ্রহও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। বিশেষ করে যারা প্রবাসে থাকেন তারা দেশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ও খবর দেওয়া-নেওয়ার জন্য নির্ভর করে থাকেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর। এর মাধ্যমে প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগ করে নেন নিজেদের সুখ-দুঃখের মুহূর্তগুলো; কিন্তু এ মুহূর্ত ভাগাভাগির মধ্যে কেউ কেউ নিজের অজান্তেই ডিজিটাল হ্যাকারদের হাতে তুলে দিচ্ছেন একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য।

সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভ্রমণ বা দৈনন্দিন জীবনের মুহূর্তগুলো ভাগ করে নিতে হাই রেজ্যুলেশনের ছবি বা ভিডিও পোস্ট করার প্রবণতা বাড়ছে। তবে সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের অভ্যাস খুলে দিতে পারে ডিজিটাল হুমকির দরজা।

সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের উন্নত অর্থনীতির দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে এ-সংক্রান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, ব্যবহারকারীদের পোস্ট করা বিভিন্ন হাই রেজ্যুলেশনের ছবি ব্যবহার করে হ্যাকাররা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলছে, ই-সিম জালিয়াতি করছে, এমনকি সন্ত্রাসে অর্থ জোগানের মতো গুরুতর অপরাধেও ব্যবহার করছে এসব তথ্য।

সাইবার ইন্টেলিজেন্স কোম্পানি গ্রুপ-আইবির মধ্যপ্রাচ্য, তুরস্ক ও আফ্রিকার আঞ্চলিক পরিচালক আশরাফ কোহেইল এক সাক্ষাৎকারে জানান, ডিজিটাল পরিচয় চুরির জন্য মাত্র দুটি হাই রেজ্যুলেশনের ছবিই যথেষ্ট। এগুলোর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর মুখাবয়ব শনাক্ত করা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট তৈরি করতে পারে হ্যাকাররা। এরপর সে তথ্য ব্যবহার করে নকল ডিজিটাল আইডি তৈরি করাসহ ই-সিম চালু এবং ব্যাংক ও ক্রিপ্টো অ্যাকাউন্ট খুলছে।

সাইবার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতে একজন ব্যবহারকারীর গড়ে চারটিরও বেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যা হ্যাকারদের আক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

শুক্রবারে বাড়ে হামলার প্রবণতা : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যাকাররা সচেতনভাবে শুক্রবার রাতে হামলা চালায়। কারণ এ সময় করপোরেট সিকিউরিটি টিম সম্পূর্ণভাবে সক্রিয় থাকে না। তারা জিওফেন্সিং, লোকেশনভিত্তিক কনটেন্ট এবং ফিশিং লিঙ্ক ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের প্রতারিত করছে।

কী ধরনের হামলা হচ্ছে?

সিম সোয়াপ অ্যাটাক: হ্যাকাররা ভুয়া তথ্যের মাধ্যমে মোবাইল অপারেটরদের বিভ্রান্ত করে কোনো ব্যক্তির মোবাইল নম্বর অন্য সিমে স্থানান্তর করে। এরপর ওই সিমে ওটিপি নিয়ে ভুক্তভোগীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে।

এমআইটিএম (ম্যান ইন দ্য মিডল) অ্যাটাক: হ্যাকাররা ব্যবহারকারী ও সংশ্লিষ্ট তথ্যভান্ডারের মধ্যে অবস্থান নিয়ে তথ্য চুরি করে থাকে।

ডিপফেইক ও ভয়েস ক্লোনিং: উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তির কণ্ঠ ও মুখাবয়ব নকল করে প্রতারণামূলক ভিডিও তৈরি করে অপরাধে জড়ায় অনেক গোষ্ঠী।

পরামর্শ

এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে রয়েছে হাই রেজ্যুলেশন ছবি, জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর, ইমেইলসহ ব্যক্তিগত ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকা। শুক্রবার ও ছুটির দিনগুলোয় অনলাইনে লেনদেন ও লগইন কার্যক্রমে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখা। শুধু পাসওয়ার্ড নয়, অতিরিক্ত নিরাপত্তা স্তর যেমন ফেস আইডি, ওটিপি, ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যবহার করা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সফটওয়্যার ব্যবহার করে সন্দেহজনক অ্যাক্টিভিটি চিহ্নিত ও নিয়ন্ত্রণ করা। ডিজিটাল পরিচয় সুরক্ষায় ব্লকচেইন প্রযুক্তি গ্রহণের সুযোগ থাকলে তা ব্যবহার করা।