ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক পিয়াস করিমের লাশ রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়ার বিষয়ে কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের বিরোধিতার বিষয় উল্লেখ করে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি সাংবাদিক শওকত মাহমুদ বলেছেন, শহীদ মিনার একটি জাতীয় প্রতীক। এর পাদদেশে সবারই যাওয়ার অধিকার থাকা উচিত। শহীদ মিনার কোনো সুনির্দিষ্ট দলের বা সংগঠনের জন্য তৈরি করা হয়নি যে অন্য কেউ সেখানে যেতে পারবে না। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত। সোমবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের সংবাদ পর্যালোচনাভিত্তিক টক শো নিউজ অ্যান্ড ভিউজ অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও সিইও সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক বলেন, পিয়াস করিম এখন আর আমাদের মাঝে নেই। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। যা-ই হোক, তাঁর লাশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিতে দেওয়া হবে না বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ছাত্রসংগঠন বিবৃতি দিয়েছে। কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
জবাবে সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, 'এটা আমাদেরও বোধগম্য নয়, কেন ছাত্রসংগঠনগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। একজন মানুষের লাশ যদি কোথাও রাখতে দেওয়া না হয়, সেটা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। দেশদ্রোহী বা অন্য কোনো দেশবিরোধী কাজে জড়িতদের ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে। আমরা মনে করি না একজন শিক্ষকের লাশ শহীদ মিনারে রাখতে দেওয়া হবে না।'
মনজুরুল আহসান বুলবুল আরো বলেন, 'আমাদের সবাইকে আরো সংবেদনশীল হতে হবে। একজন মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে আমরা সমালোচনা করতে পারি না। মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে আলোচনা হতে পারে, তবে তাঁর দোষ নিয়ে নয়। আর আমরা সামাজিকভাবে সবাই একে অপরকে চিনি, জানি। যদি সত্যিকার অর্থেই কেউ আমাদের সমাজের বা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে থাকে, তবে জীবিত অবস্থায় তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। মৃত্যুর পর করাটা মনে হয় কোনো স্বাভাবিক কাজ হতে পারে না।'
শওকত মাহমুদ বলেন, 'একজন মৃত ব্যক্তির লাশ তাঁর ভক্তদের জন্য উন্মুক্ত স্থানে রাখা হবে, সেটা নিয়েও আমাদের রাজনীতি করতে হয়। এটা কোনো সভ্য সমাজের কাজ হতে পারে না।'
আলোচনার এ পর্যায়ে সঞ্চালক জানকে চান, সদ্য বাদ পড়া মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, তিনি বাংলাদেশে ফিরতে চান। তবে সে ক্ষেত্রে তিনি তাঁর দল আওয়ামী লীগের নেতাদের মতামত পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
জবাবে সাংবাদিক শওকত মাহমুদ বলেন, 'এটা তাঁর দল ভালো বলতে পারবে। তবে আমাদের মনে হয় তাঁকে শুধু দল বা মন্ত্রিসভা থেকে নয়, দেশ থেকে বহিষ্কার করা উচিত। তাঁকে প্রয়োজনে আদালতের মাধ্যমে দেশে এনে আইনের হাতে সোপর্দ করা যেতে পারে। তিনি পরেও যেভাবে ইসলাম সম্পর্কে কথা বলেছেন, তাতে স্পষ্ট যে তিনি ইসলামবিরোধী কথাবার্তা নিয়ে মোটেও অনুতপ্ত নন।'
শওকত মাহমুদ বলেন, 'বিএনপি যুক্তিভিত্তিক আন্দোলন করে আসছে। লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে ইস্যু করার কিছু নেই। সরকার আসলে নিজের পিঠ বাঁচাতে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।' তিনি আরো বলেন, 'লতিফ সিদ্দিকী এখন ভারতে আছেন। আমাদের ধারণা সরকারের ইঙ্গিতেই তিনি কানাডা ছেড়ে কলকাতায় এসেছেন। দেশে যেহেতু ফিরতে পারবেন না, তাই কানাডা, আমেরিকা আর ভারত থাকলেই কী!' তিনি বলেন, 'বিএনপি আন্দোলন করতে পারছে না বলে অনেকেই বলে থাকেন। বিএনপি দেশের ভালোর জন্য এখন রাস্তায় নামছে না। সময় হলে, প্রয়োজন মনে করলে মানুষ ঠিকই রাস্তায় নেমে আসবে। কারণ সরকারের পায়ে পায়ে ব্যর্থতা। একটির পর একটি ইস্যু সৃষ্টি করে তারা জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের ধারণা, আওয়ামী লীগ লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তা যতটা না ধর্মীয় অবস্থান থেকে, তার চেয়ে বেশি প্রধানমন্ত্রীর ছেলের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে।'
মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, 'বিএনপি বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করে। সরকার আসলে সঠিক সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা না হলে বিএনপি ও অন্য দলগুলো ইস্যু তৈরি করতে পারত। প্রধানমন্ত্রী দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে দেশকে রক্ষা করেছেন। আর আমি এও মনে করি, এ মুহূর্তে লতিফ সিদ্দিকীর দেশে আসা ঠিক হবে না।'
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন