Image description

মাঠের খেলায় ১১ দিনে অ্যাশেজ হেরেছে ইংল্যান্ড। হাতে আছে আরও দুটি টেস্ট। সিরিজে পিছিয়ে থাকার ব্যবধান ০-৩। এমন পরিস্থিতিতে চারপাশ থেকে সমালোচনা ধেয়ে আসাই স্বাভাবিক। হচ্ছেও ঠিক তাই। ইংল্যান্ডের খেলার ধরন (বাজবল) নিয়ে প্রচুর কাটাছেঁড়া হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো চাবুকের মতো প্রতিবেদনে দাবি তুলেছে, এবারের অ্যাশেজের পর আবারও সবকিছু ঢেলে সাজাতে হবে। শুধু তাই নয়, ইংল্যান্ডের কিংবদন্তিরাও পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন।

কিছুদিন আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টেলিগ্রাফ’-এ লেখা কলামে জিওফ বয়কট যেমন ইংল্যান্ডকে কোচ বদলানোর পরামর্শ দেন। তার পর থেকে নানা সমালোচনার মাঝে কোচ পাল্টানোর দাবিই একটু বেশি কানে আসছে। ব্যাটে-বলে পর্যুদস্ত হলেও ইংল্যান্ড দলের প্রধান কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম থেকে যাওয়ায় আগ্রহী। বিনয়ের সঙ্গে তিনি এটাও বলেছেন, ইংল্যান্ডের কোচ পদে থাকা না থাকার বিষয়টি তাঁর ওপর নির্ভর করে না। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি সাক্ষ্য দিচ্ছে, ইংল্যান্ডের কোচ পদে ম্যাককালামের জায়গাটি একটু হলেও নড়বড়ে হয়েছে। এতে নতুন কোচ কে হতে পারেন, সেই আলোচনায় নানা মুনি নানা মত দিচ্ছেন।

যেমন ইংল্যান্ডের সাবেক স্পিনার মন্টি পানেসার। তাঁর মতে, ইংল্যান্ডের প্রধান কোচ পদে ম্যাককালামের উত্তরসূরি হিসেবে তাঁর পছন্দ রবি শাস্ত্রী।

সাংবাদিক রবি বিশ্‌তের সঙ্গে আলাপচারিতায় পানেসার নিজের এমন মত দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, অস্ট্রেলিয়াকে তাদের মাটিতে হারানোর প্রমাণিত সাফল্য আছে এমন কোচ নিয়োগ করা উচিত ইংল্যান্ডের। পানেসার বলেন, ‘ভেবে বের করতে হবে, অস্ট্রেলিয়াকে কীভাবে হারাতে হয় তা কে জানেন? মানসিক, শারীরিক এবং কৌশলগতভাবে কীভাবে অস্ট্রেলিয়ার দুর্বলতার সদ্ব্যবহার করবেন। আমার মতে, ইংল্যান্ডের পরবর্তী প্রধান কোচ হওয়া উচিত রবি শাস্ত্রীর।’

ইংল্যান্ডের হয়ে ৫০ টেস্টে ১৬৭ উইকেট নেওয়া পানেসার ভারতের সাবেক কোচ ও ধারাভাষ্যকার শাস্ত্রীর নামটি এমনি এমনি সামনে তুলে আনেননি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোচ হিসেবে শাস্ত্রীর সাফল্য প্রমাণিত।

কোচ শাস্ত্রীর অধীনে ২০১৮-১৯ এবং ২০২০-২১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পরপর দুবার টেস্ট সিরিজ জিতেছে ভারত। এ দুটি সাফল্যের পর প্রতিপক্ষের মাটিতে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রতি প্রত্যাশার মাত্রাটা বেড়ে যায় বহুগুণ। বলা যায়, শাস্ত্রীর সেই সাফল্য ছিল প্রতিপক্ষের মাটিতে ভারতীয় দলের প্রতি তাদের সমর্থকদের প্রত্যাশার বেঞ্চমার্ক।

ক্রিকেট ধারাভাষ্যের পাঁচ শিক্ষক: রবি শাস্ত্রী যা শিখেছেন তাঁদের কাছ থেকে 
সে তুলনায় ম্যাককালামের ইংল্যান্ড এবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম তিন টেস্টে ব্যাটে-বলে কোথাও ভালো করতে পারেনি। পার্থ টেস্ট হেরেছে দুই দিনে, ব্রিসবেনে হেরেছে চার দিনে এবং অ্যাডিলেডে পঞ্চম ও শেষ দিনে হারলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না তেমন।

অ্যাডিলেডে হারের পর বয়কট তাঁর কলামে লেখেন, ‘আমাদের ক্রিকেটের জন্য বেন স্টোকস ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম যা করেছেন, সে জন্য তাঁদের অনেক কৃতিত্ব পাওয়া উচিত। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে বাজবলের মেয়াদ শেষ। অতিরিক্ত অহংকার সাধারণ বিচারবুদ্ধির জায়গাটা নিয়ে নিয়েছে এবং এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। স্টোকস এবং ম্যাককালাম এমন মানুষ, যাঁরা কোথায় গর্ত খুঁড়ছেন জানেন না। তাঁরা যেটা করছেন, সেটা কাজ না করলে অবশ্যই থামতে হবে। পরবর্তী ধাপে উঠতে পরিবর্তন অত্যাবশ্যক। কী করা যায়? কোচ পাল্টানো যায়।’

ম্যাককালামের সঙ্গে ইংল্যান্ডের বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে ২০২৭ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর। এর মধ্যে ঘরের মাঠে অ্যাশেজও খেলবে ইংল্যান্ড। সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের টেস্ট অধিনায়ক বেন স্টোকস ও প্রধান কোচ ম্যাককালামের অধীনে ৪৪ টেস্টে ২৫ জয় ও ১৭ ম্যাচ হেরেছে ইংল্যান্ড।

ম্যাককালামের সময়ে ইংল্যান্ড চারবার পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে অংশ নিয়ে একবারও জিততে পারেনি। শুধু তাই নয়, ২০২৪ সাল থেকে হিসাব করলে ইংল্যান্ড এ পর্যন্ত জয়ের (১২) চেয়ে টেস্ট হেরেছে (১৩) বেশি।
তবে ২০২২ সালে স্টোকস টেস্ট অধিনায়ক ও ম্যাককালাম প্রধান কোচ হওয়ার পর শুরুতে তাঁদের হাত ধরে ইংল্যান্ড কিন্তু সাফল্যও পেয়েছে। এ কোচ ও অধিনায়ক জুটি মিলে প্রথম ১১ টেস্টের ১০টিতেই জিতেছেন। কিন্তু তারপর?

এই প্রশ্নবোধক চিহ্নের জবাব এখনো দিতে পারেননি ম্যাককালাম।