থাইল্যান্ডের থনবুরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে প্রীতি ম্যাচে ৩-০ গোলের হারে হতাশ বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। প্রতিপক্ষ র্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে—সেই বাস্তবতা মেনে হার মানা অস্বাভাবিক নয়। তবে ম্যাচের পর ফল নয়, বরং খেলোয়াড়দের মানসিকতা নিয়েই সবচেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ হলেন প্রধান কোচ পিটার বাটলার।
বৃষ্টিভেজা থনবুরির এক অনুজ্জ্বল মাঠে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বাটলারের ভাষায়, ‘আমি জানি না এটা আদৌ টায়ার ওয়ান প্রীতি ম্যাচ বলা যায় কি না। আমরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে খেলেছি, যেখানে পর্যাপ্ত আলোও ছিল না।’
কিন্তু আলো–অভাবের চেয়েও বেশি বিরক্ত তিনি ছিলেন কিছু খেলোয়াড়ের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। সোজাসাপ্টা ভাষায় কোচ বললেন, ‘আমার মনে হয় কয়েকজন মেয়ে ভুল মানসিকতা নিয়ে মাঠে নেমেছিল। আমি কখনোই এই ঢিলেঢালা মনোভাব সহ্য করব না। যারা আমার দলের হয়ে খেলবে, দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে, তারা এমন আচরণ করতে পারে না যা জাতীয় দলের মর্যাদার সঙ্গে যায় না।’
বাটলার মনে করেন, খেলার ফলের চেয়ে বড় শিক্ষা হলো মনোভাবের সঠিকতা। তিনি আরও বলেন, ‘এটা কোনো জাতীয় দলের ম্যাচের মতো লাগেনি। বরং মনে হয়েছে আমরা উন্নতির পথে একটা ধাপ নিচ্ছি। এমন ম্যাচ আয়োজনের সময় আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন সব কিছু পেশাদারভাবে হয়।’
হারের মধ্যেও কোচ তুলে ধরেছেন ইতিবাচক দিক—তরুণদের অংশগ্রহণ। নতুন মুখ শিখা, নবিরন, জয়নব, সাগরিকা ও মুনকি ছাড়াও রিপা ও হালিমাদের সুযোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। তবে সঙ্গে যুক্ত করেছেন স্পষ্ট বার্তা—সুযোগ মানেই দায়বদ্ধতা।
বাটলারের কণ্ঠে দৃঢ় সতর্কতা, ‘আমি তাদেরই খেলাতে চাই, যারা পরিচিত না হলেও সঠিক মনোভাব নিয়ে আসে। যারা কঠোর পরিশ্রম করবে এবং নিজেকে উন্নত করতে চায়, তারাই থাকবে। কিন্তু কেউ যদি আমার ধৈর্য পরীক্ষা করতে চায়, তারা জানুক—আমি আপসহীন।’
কোচের এই বক্তব্যে অনেকে পুরনো ঘটনার প্রতিধ্বনি খুঁজে পাচ্ছেন। এ বছরের জানুয়ারিতে ১৮ জন নারী ফুটবলার বাটলারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। সেই বিদ্রোহীদের মধ্যে ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমা, রুপনা চাকমা, তহুরা খাতুন, শামসুন্নহার (জুনিয়র–সিনিয়র) ও মারিয়া মান্দা—এ ম্যাচে সবাই একাদশে ছিলেন।
তাই কোচের ‘ভুল মানসিকতার’ মন্তব্যটি কার দিকে ইঙ্গিত করছে, তা বুঝে নিতে খুব বেশি কষ্ট হয় না।
বাটলারের মতে, থাইল্যান্ডের বিপক্ষে হারটা কেবল পরাজয় নয়, বরং শেখার এক সুযোগ। তবে তাঁর কথার তীব্রতা ইঙ্গিত দেয়, সামনে দলের ভেতরে শৃঙ্খলা আর মনোভাব—দুই দিকেই কঠিন সময় আসছে।